রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
তবে রমনা থানার আরেকটি গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আবেদন নাকচ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর হাকিম এম এ সালাম গতকাল এ আদেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তারা খোকাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিন রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন। সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা আদালত এলাকায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে আসতে শুরু করেন।শুনানির সময় খোকা কথা বলতে চাইলে বিচারক বলেন, 'আপনার পক্ষে অনেক আইনজীবী কথা বলেছেন। আপনি আর কী কথা বলবেন।
' খোকা বলেন, 'একাত্তরের আগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি তাঁবেদার সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। তখন আমি সাদেক হোসেন খোকা সেই প্রহসনের নির্বাচনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিস উড়িয়ে দিয়েছিলাম। হাসিনা এখন যে প্রহসনের নির্বাচন করছেন, এটিও যে কোনো মূল্যে বন্ধ করে দেব। দেব দেব দেবই ইনশাআল্লাহ। হাসিনা যখন জেনেছে তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়, তখনই আমাকে গ্রেফতার করেছে।
' রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা খোকার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, 'তিনি অসুস্থ নন, তিনি ভণ্ড। ' শুনানি শেষে বিচারক দুই মামলাতেই খোকার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
খোকার পক্ষে আদালতে ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকার, বোরহান উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা খানসহ পাঁচ শতাধিক আইনজীবী। শুনানিতে তারা বলেন, 'এ মামলায় বর্ণিত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশে হয়রানি করার জন্য। এই কথিত দুটি ঘটনার সঙ্গে খোকা কোনোভাবেই জড়িত নন।
এজাহারে তার নাম নেই। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবেও তাকে জড়িত করা যাবে না। কেননা তিনি কোনো অজ্ঞাত আসামি নন। সবাই তাকে চেনেন। তিনি এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে এজাহারে নাম থাকত।
তাছাড়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয়ের মাসে তাকে সম্মান দেখিয়ে রিমান্ডে না পাঠিয়ে জামিন দেওয়া হোক। তিনি বিশিষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তি, জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে পলাতক হবেন না। ' আইনজীবীরা আরও বলেন, 'মামলার ঘটনা সাজানো ও বানোয়াট। আসামি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। ' রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান লিখনসহ অন্তত ১৫ জন আইনজীবী।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড চেয়ে বলা হয়, খোকাসহ অন্যদের পরিকল্পনায় ১৮ দলের জোট নেতারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করছেন। সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে চলেছেন। তারা পুরো দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চান। সরকারি ও বেসরকারি গাড়িতে অগি্নসংযোগ ও পেট্রল বোমা ছুড়ে মানুষ মারা হচ্ছে। তাই নাশকতার আর কী কী ধরনের পরিকল্পনা আছে, তা বের করতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
গত ২৮ নভেম্বর অবরোধ চলাকালে শাহবাগে বাসে পেট্রল বোমা হামলায় দগ্ধ হন ১৯ যাত্রী, যাদের তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় খোকাসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৭ শীর্ষস্থানীয় নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। এর একদিন পর ৩০ নভেম্বর রাতে মালিবাগে পেট্রল বোমায় আক্রান্ত একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে গেলে এক ব্যক্তি নিহত হন। ওই ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায়ও খোকাকে আসামি করা হয়েছে।
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, এ নাশকতার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকাসহ ১৮ দলের কিছু নেতা-কর্মীর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উসকানি, পরিকল্পনা, যড়যন্ত্র, সহায়তা, মদদসহ অর্থায়ন রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর খোকা মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, উত্তরার একটি বাসা থেকে বুধবার রাতে সাদেক হোসেন খোকাকে আটক করে র্যাব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।