আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোশাক শিল্পে ক্ষতি চার হাজার কোটি টাকা

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় চলতি বছরে প্রথম ৯ মাসে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। হরতালসহ নানা সহিংস কর্মসূচির কারণে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পোশাক শিল্প মালিকারা এক লাখ ৩২ হাজার টন পণ্য এয়ারফ্রেইট করতে বাধ্য হয়েছেন। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্ট কারখানায় নাশকতামূলক আগুনেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বস্ত্র খাতের মালিকদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ এমন তথ্য উল্লেখ করে জানিয়েছে, এ শিল্পের অস্তিত্ব সংকটের মুখে। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নিরাপদে পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না। একদিকে বন্দরে কনটেইনার ভর্তি পণ্য পড়ে আছে, অন্যদিকে জাহাজীকরণের অপেক্ষায় তৈরি পণ্য পড়ে আছে কারখানায়। পুরো সরবরাহ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে বিভিন্ন ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ (সহযোগী) শিল্প খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এর মধ্যে সুতা, বোতাম, জিপার, ডাইং, ফিনিশিং, পলিব্যাগসহ বিভিন্ন এঙ্সেরিজ শিল্প অন্যতম। আরও সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক-বীমা, শিপিং, সিএনএফ, সেবা খাত, পর্যটন, হোটেল, পরিবহন, আবাসন, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাত রয়েছে। এসব শিল্প খাতে পাঁচ থেকে ছয় কোটি মানুষের জীবন নির্বাহের ব্যবস্থা হয়েছে। সংঘাত-সহিংসতা ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্প মালিকরা প্রশ্ন তুলেছেন- এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকদের বেতন, ওভারটাইম দেব কীভাবে? ব্যাংকের ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব? ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির (ঋণপত্র) অর্থ পরিশোধ করব কীভাবে? ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কোথা থেকে আসবে? ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতি ট্রাক ভাড়া ১০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে কয়েকগুণ। কীভাবে এ অতিরিক্ত ভাড়া দেব? হরতাল-অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি কনজেশনের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় কীভাবে মেটাব? বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শুধু এয়ারফ্রেইট বাবদই কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টে আগুনে ৪০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ১৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, পোশাক শিল্পকে প্রকৃতপক্ষে আমরা বাঁচতে দিতে চাই কিনা?' তার মতে, তিলে তিলে গড়া ওঠা 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ক্রেতাদের আস্থা হারাতে বসেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ-সমঝোতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, 'অর্থবহ রাজনীতির স্বার্থেই অর্থনীতির ক্ষতি করে, রাজনীতিবিদদের এমন কর্মসূচি পরিত্যাগ করা উচিত। অর্থনীতি ধ্বংসকারী অসুস্থ রাজনীতি ব্যবসায়ীরা দেখতে চান না।' বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'আমরা অর্থনীতি ধ্বংসের অপতৎপরতা আর সহ্য করতে পারছি না। আমাদের ধৈর্য হারিয়ে গেছে। দুই নেত্রীর কাছে জোর অনুরোধ, অর্থনীতি ধ্বংসের কর্মসূচি থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্তি দিন।' সব দলের কাছে দাবি জানিয়ে পোশাক ও বস্ত্রশিল্প মালিকরা আরও বলেছেন, জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে এ শিল্পকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হোক। আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে হরতাল ও অবরোধসহ বিভিন্ন সহিংসতা কর্মসূচির বাইরে রাখা জরুরি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.