তিনি বলেন, “বালি প্যাকেজের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোই বেশি লাভবান হবে। এদের রপ্তানি বাজার বড় হবে।
শনিবার দুপুরে ডাব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের সফল সমাপ্তি ঘোষণার পর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন আজভেদা।
তিনি বলেন, “বালি সম্মেলন এলডিসিগুলোর জন্য নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, উন্নত দেশগুলো বালি প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত এলডিসিগুলোর জন্য দেয়া তাদের ওয়াদা পূরণ করবে।
”
ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক বলেন, “আর এর মধ্য দিয়ে উন্নত, উন্নয়নশীল এবং এলডিসি সবাই লাভবান হবে। তবে আবারও বলছি, বালি প্যাকেজের মাধ্যমে এলডিসিগুলোই বেশি লাভবান হবে। ”
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বালি সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য খুবই সফল। আমরা এই সম্মেলন থেকে যা চেয়েছিলাম তার সবই পেয়েছি।
সে কারণেই বালি সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য একটি সফল সম্মেলন বলে আমি মনে করি।
”
‘বালি প্যাকেজ’ যুক্তরাষ্ট্র্রের বাজরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তান্তিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেতে কোন সহায়তা করবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আহমেদ বলেন, “অবশ্যই করবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা (বাংলাদেশ) আমেরিকার বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দাবি করে আসছি। তারাও ‘দেওয়া হবে’ বলে ঝুলিয়ে রেখেছে। ”
তিনি জানান, বালি প্যাকেজে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বেশ কিছু সুখবর রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, উন্নত দেশগুলো এলডিসির জন্য কোটা ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
বালি সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, যেসব উন্নত দেশ এখনও এলডিসিগুলোকে ৯৭ ভাগ পর্যন্ত পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়নি তারা সংস্থার পরবর্তী মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আগেই তা ন্যূনতম ৯৭ ভাগে উন্নীত করবে; যাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বাজার সম্প্রসারিত হয়।
মাহবুব আহমেদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা অনেক পণ্যে শুল্ক ও কোটা সুবিধা পেলেও আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরী পোশাক শিল্পে পাই না। এবার আমরা বালি প্যাকেজের ঘোষণাকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতুন করে এই দাবি উত্থাপন করতে পারবো। ”
যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে জিএসপি (বিশেষ শুল্ক সুবিধা) স্থগিত রেখেছে তা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও বালি প্যাকেজ সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য সচিব।
সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোও স্বল্পোন্নত দেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা জানায়।
বালি প্যাকেজের ঘোষণাপত্র অনুসারে, যেসব উন্নয়নশীল দেশ এলডিসিকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে তারা ধীরে ধীরে এ সুবিধার আওতা বাড়াবে। আরও বেশি সংখ্যক পণ্যে তারা এ সুবিধা দেবে। আর যেসব উন্নয়নশীল দেশ এখনো এলডিসিগুলোকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া শুরু করেনি, তারা তা শুরু করবে।
১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর একের পর এক সম্মেলন ভেস্তে যাওয়া বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কার্যকারিতার ওপর যখন বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল, তখন সমঝোতা এল বালিতে।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন নগরীটিতে সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের নবম সম্মেলনে ১৫৯ দেশ শনিবার একমত হয় বিশ্বব্যাপি বাণিজ্য বাড়াতে।
যাতে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা আভাস দিয়েছেন।
এই সমঝোতার ফলে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুবিধা যেমন বাড়বে, তেমনি স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও সুবিধা পাবে।
চারদিনের এই সম্মেলন শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও খসড়া ঘোষণা নিয়ে কিউবার আপত্তিতে তা ঝুলে ছিল। কমিউনিস্ট দেশটি বলছিল, খসড়া ঘোষণায় তাদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
দীর্ঘ আলোচনার পর কিউবা শেষে রাজি হলে শনিবার সকালে স্বাগতিক দেশ ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী গিতা বির্যবান ঘোষণা দেন, “অবশেষে মতৈক্য হয়েছে।
”
আর এই সময় সবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক রবার্তো আসভেদো বলেন, “এই প্রথম বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় সত্যিকার অর্থে কাজের কাজ হল। ”
“এই প্রথম সব সদস্য একসঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছে। আমরা বিশ্বকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় এক করতে পেরেছি,” আনন্দঅশ্রু নিয়ে বলেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা কার্যত টিকে গেল বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বালিতে গৃহীত চুক্তির ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্য রপ্তানিতে বাধা কমেছে।
খাদ্যে ভর্তুকি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সুবিধাও বেড়েছে।
সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো কোটা ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলো। এতে উন্নত দেশগুলো রাজি হওয়ায় শুক্রবার রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রেড কমিশনার ক্যারল ডি গুট সাংবাদিকদের বলেছিলেন বলেন, “একটা ভালো সমঝোতা হচ্ছে (ইটস গ্রেট ডিল)। ”
এর পরপরই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যা যা চেয়েছিলাম, তার সবই পেয়েছি। এগুলো বালি প্যাকেজের ঘোষণায় গৃহীত হবে।
”
২০০৫ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার হংকং সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ছিল- উন্নত দেশগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেবে। শতভাগ পণ্যে না হলেও অন্তত ৯৭ শতাংশ পণ্যে এই সুবিধা দিতে হবে।
আট বছর পেরিয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় বালি সম্মেলনে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়।
বাণিজ্য সহজ করতে আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্থা গড়তে সমঝোতা হয়েছে, এতে বাণিজ্যের জন্য সময় ও ব্যয় কমে।
দীর্ঘদিন আলোচনার পর ২০১১ সালে জেনেভায় মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে সেবা খাতের বাণিজ্যে এলডিসির জন্য ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
সে অনুযায়ী এলডিসিগুলোকে সেবা খাতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা দিতেও রাজি হয়েছে উন্নত দেশগুলো।
রুলস অব অরিজিনের ক্ষেত্রও সহজ করা হয়েছে। এর ফলে শুল্কমুক্ত বা যে কোনো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার আওতায় রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন শর্ত এখন নমনীয় হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।