বিশ্বাসই যেন করতে পারছিলেন না কেভিন ওয়াকার। সংগীত প্রতিভা খোঁজার জনপ্রিয় রিয়েলিটি অনুষ্ঠান আমেরিকান আইডলের সুইডিশ সংস্করণের ফাইনালে বিজয়ী হিসেবে নিজের নামটি শোনার পর বললেন, ‘এটা অলীক, এটা অবাস্তব! এটা অবিশ্বাস্য!’
বিশ্বাস করাটা কঠিনও বটে। ২৪ বছর বয়সী এই উদীয়মান সংগীত তারকা যে আসলে একজন পেশাদার ফুটবলার। খেলছেন সুইডেনের দ্বিতীয় বিভাগে। সুইডেনের জার্সি গায়েও খেলেছেন অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে।
ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাগে ত্রাস ছড়ানো ওয়াকারের গলাতেও যে এত জাদু লুকানো ছিল সেটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? আইরিশ বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারের গল্পটা সত্যিই কল্পনাকেও হার মানায়।
বিস্ময়কর এই প্রতিভা এখন দুই অঙ্গনেই জনপ্রিয় তারকা। সংগীতশিল্পী ও ফুটবলার—দুই ভাবেই পরিচিত হতে পারেন ওয়াকার। তবে সুইডিশ আইডল জেতার পর ভাবছেন, হয়তো ছেড়েই দেবেন ফুটবল।
তাক লাগানো এই উত্থানের শুরুটা হয়েছিল হঠাত্ করেই।
ক্লাবের একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সতীর্থদের সঙ্গে গান গাইছিলেন ওয়াকার। সে সময়ই তিনি নজর কাড়েন ‘আইডল’ অনুষ্ঠানটির প্রযোজকদের। তাদের অনুরোধে শখের বশেই নাম লিখিয়েছিলেন টিভি অনুষ্ঠানটিতে। সেটাই যে ছিল স্বপ্নযাত্রার প্রথম ধাপ, ওয়াকার নিজেও হয়তো ভাবেননি। অথচ একের পর এক ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর মাথাতেই উঠেছে বিজয়ীর মুকুট।
আর এখন তাঁর সামনে আছে সম্ভাবনাময় এক সংগীত ক্যারিয়ার গড়ার হাতছানি।
ফুটবল জগতে ওয়াকারের পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৭ বছর বয়সে। বর্তমানে দ্বিতীয় বিভাগের দল জিআইএফ সান্ডসভ্যালের হয়ে খেলছেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। এ বছর প্রথম বিভাগে খেলার সুযোগও প্রায় পেয়েই গিয়েছিল ওয়াকারের দল। কিন্তু প্লে অফে হেরে সেই আশাটা পূর্ণ হয়নি।
মৌসুমজুড়েই ওয়াকার ছিলেন সান্ডসভ্যালের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়।
সংগীত জগতে খ্যাতি পেলেও ফুটবলকে কখনোই অবহেলা করেননি ওয়াকার। আইডল অনুষ্ঠানটির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ব্যস্ততা থাকলেও ফুটবল অনুশীলন ঠিকই চালিয়ে গেছেন। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও সতীর্থদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলে যে এটা সম্ভব হতো না সেটা স্বীকার করেছেন ওয়াকার, ‘আমার সতীর্থরা খুবই ভালো। আমি এই মৌসুমে এক দিনও অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকিনি।
কিন্তু ক্লাব আর সতীর্থদের সহযোগিতা ছাড়া আমি আমার সংগীত আর ফুটবল জগতের সমন্বয় করতে পারতাম না। ’
ওয়াকারের সংগীত আর ফুটবল জগতের একটা ‘সংঘর্ষ’ অবশ্য ঘটেছে টেলিভিশন চ্যানেলের সূচির কারণে। সুইডিশ আইডল ও দ্বিতীয় বিভাগের ফুটবল দুটোই প্রচার করে সুইডেনের টিভি ফোর। বিশেষভাবে ওয়াকারের কথা বিবেচনা করেই সান্ডসভ্যালের কিছু খেলার সময়সূচি পরিবর্তন করেছিল এই চ্যানেলটি। ফুটবল অঙ্গনের অনেকেই সেসময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু এই পদক্ষেপটার ফলেই নিষ্কণ্টক হয়েছিল ওয়াকারের স্বপ্নযাত্রা।
একই সঙ্গে সংগীত আর ফুটবল ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন হয়তো অনেকের কাছেই অলীক মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যিই দুই অঙ্গনেই সাফল্যের সম্ভাবনা আছে ওয়াকারের। সুইডেনের ক্লাব ফুটবলের মৌসুমটা চলে এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। বাকি সময় সংগীতেই মনোযোগ দিতে পারবেন ওয়াকার।
ওয়াকার এর আগে জানিয়েছিলেন, ফুটবল তাঁর ভালোবাসা, সংগীত তাঁর নেশা। দুটোর একটাকে ছাড়তে পারবেন না। তবে জনপ্রিয় এই রিয়েলিটি অনুষ্ঠান জেতার পর যে তারকা খ্যাতি পেয়েছেন, ক্যারিয়ার হয়তো একদিকেই এখন গড়তে হবে। লাখ টাকার চুক্তির হাতছানি যে তাঁর সামনে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
তবে দুটোর একটা ছাড়তে এখনো ইচ্ছা করছে না তাঁর। নিতান্তই বাধ্য হলে ছেড়ে দিতে পারেন ফুটবল।
ফুটবল আর সংগীত—এই দুয়ের মধ্যে মিলও খুঁজে পেয়েছেন ওয়াকার, ‘দুই জায়গাতেই আমাদের পারফর্ম করতে হয় অনেক দর্শকের সামনে। ফুটবল মাঠে আমি অনেক স্বচ্ছন্দে থাকি কারণ গান গাওয়ার সময় আমাকে অনেকের সামনে দাঁড়াতে হয়। ’ ফর্মটা তাঁর দুর্দান্ত ফুটবল মাঠেও।
গত অক্টোবরে তিনটি ম্যাচ খেলে করেছেন তিনটি গোল।
‘আইডলের’ ফাইনালে জেতার পর এখন একটা অ্যালবামের জন্যও চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছেন ওয়াকার। সেই সঙ্গে আসতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রতিযোগিতার সুযোগ। এদিকে ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদটাও আছে আরও এক বছর। ‘আমি একজন ফুটবলার আর আমি গান গাইতেও খুব ভালোবাসি।
যদি আমি দুইটার সমন্বয় করতে পারি, তাহলে আমার স্বপ্ন সত্যি হবে’—বলেছেন তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।