আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিকল্পনা দলিলের সঙ্গে মিল রাখা যাচ্ছে না

বাজেট প্রণয়নে পরিকল্পনা দলিলকে আমলে নিতে পারছে না সরকার। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বা মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো (এমটিএমএফ) কোনোটির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার কোনো মিল থাকছে না।
গত চার অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা প্রথম বছর থেকে পরের বছর বাড়িয়ে প্রক্ষেপণ করে সরকার। এবারই ব্যতিক্রম যে প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা আগের বারের সমান বা কম ধরা হচ্ছে। এমটিএমএফ বা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে এর কোনো সামঞ্জস্য নেই।


প্রবৃদ্ধির হারের পাশাপাশি বিনিয়োগ, মোট রাজস্ব, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কোন অর্থবছরে কত অর্জন করা হবে, তা-ও ঠিক করা হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য। চার বছরে এগুলোতে প্রত্যাশিত অর্জন নেই। আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটেও তাই সব লক্ষ্যমাত্রাই কমিয়ে ধরা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত সোমবার সচিবালয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ থেকে ৭ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে।
বর্তমান বাস্তবতায় এমটিএমএফ বা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাজেটে পুরোপুরি অনুসরণ করা যাচ্ছে না বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।


জিডিপি: ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য এমটিএমএফে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ আর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হলেও বাজেটে করা হচ্ছে ৭ বা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এমটিএমএফ বা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছিল না। ওই অর্থবছরে বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, অর্জিত হয় ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার এমটিএমএফ, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে একই অর্থাৎ ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হয়। অর্জিত হয় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২০১১-১২ অর্থবছরে এমটিএমএফে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ধরা হয় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। বাজেটে ধরা হয় ৭ শতাংশ, অর্জিত হয় ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য এমটিএমএফের প্রক্ষেপণ ছিল ৭ দশমিক ৬, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ৭ দশমিক ২ এবং বাজেটে ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলেছে, অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
জিডিপি হচ্ছে একটি এলাকার অর্থনীতির আকার পরিমাপের পদ্ধতি।

যে পরিমাণ সেবা ও পণ্য এক বছরে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়, তার বাজারমূল্য হচ্ছে বাংলাদেশের এক বছরের জিডিপি। সাধারণভাবে ভোগ, সরকারি ব্যয়সহ বিনিয়োগ এবং রপ্তানি থেকে আমদানি বাদ দিয়ে যা থাকে, তার যোগফলই জিডিপির আকার।
বিনিয়োগ: এমটিএমএফে বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপির ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়।
এ ছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য ২৮ দশমিক ৪, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ৩০ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য প্রক্ষেপণ করা হয় ৩২ শতাংশ।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপির তুলনায় মোট বিনিয়োগ প্রক্ষেপণ করা হয় ৩১ শতাংশ।

২০১০-১১ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ৫, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৮ দশমিক ৪, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ৬ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়।
অথচ বর্তমান সরকারের শুরুর বছর থেকেই বিনিয়োগ ২৩ থেকে ২৪ শতাংশের ঘরে আটকে রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি: এমটিএমএফের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি হবে ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫, ২০১১-১২ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ১০১৩-১৪ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ।
আর এদিকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রক্ষেপণ করা হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

এ ছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৬ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
কিন্তু সব প্রক্ষেপণই এলোমেলো হয়ে যায় বাজেটের সময়। আগামী বাজেটেও মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৭ শতাংশ। যদিও গত দুই বছরের মূল্যস্ফীতি থেকে তা কম। মোট রাজস্ব: এমটিএমএফে মোট রাজস্ব প্রক্ষেপণ করা হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপির ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

এ ছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য ১২ দশমিক ৫, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ১৩ দশমিক ১ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য হবে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্বের প্রক্ষেপণ করা হয় ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগের ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য ১২ দশমিক ৬, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৫ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
অর্থসচিব ফজলে কবির গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে আসছি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এমটিএমএফের প্রক্ষেপণের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করতে। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে বাস্তবে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

’ তবে ভবিষ্যতে এসব প্রক্ষেপণকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলে আশাবাদী তিনি।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, যতদূর সম্ভব পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে রেখেই বাজেট প্রণয়নকরা হচ্ছে। কিছু হার অর্জনে পিছিয়ে পড়ার কথা তিনি স্বীকার করেন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.