আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হত্যার পরিকল্পনা হয় যেভাবে

যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী খুনের সঙ্গে এস এম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ওরফে কিলার তারেক, সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ও রফিকুল ইসলাম রফিকসহ অন্যরা কে কিভাবে জড়িত, তার চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তি এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে খুনিদের কার কী ভূমিকা ছিল।

কিলার তারেক, চঞ্চল ও ফাহিমা ইসলাম লোপাসহ অন্তত ১০ জনের নামে এরইমধ্যে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) তৈরি করেছে র্যাব। সূত্র জানায়, আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে আরও থাকছেন আমিনুল ইসলাম হাবিব, আমিনুলের খালাতো ভাই আরিফ, সোহেল মাহমুদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের গাড়িচালক চুন্নু মিয়া, দেহরক্ষী ইব্রাহিম, চঞ্চলের দেহরক্ষী শহিদুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর মণ্ডল। রাজধানীর গুলশানে গত ২৯ জুলাই রাতে এ হত্যাকাণ্ডের পর আসামিদের মধ্যে কিলার তারেক ৩০ জুলাই র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।

কিন্তু পরদিনই র্যাবের ক্রসফায়ারে তিনি মারা যান। পলাতক রয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ি সরবরাহকারী এবং দুটি আগ্নেয়াস্ত্র হেফাজতকারী রফিকুল ইসলাম রফিক, চঞ্চলের দেহরক্ষী সোহেল মাহমুদ, তারেকের সহযোগী আমিনুল ইসলাম, হানিফ, পলাশ, দেবাশীষ, জাকির, দেলোয়ার ও ইব্রাহীম। কারাগারে আছেন ফাহিমা ইসলাম লোপা, তুহিন রহমান ফাহিম, মুজতবা আলী প্রকাশ, রাশেদ মাহমুদ, নুরুজ্জামান প্রকাশ, সুজন হাওলাদার, পিচ্চি শহীদুল, চুন্নু মিয়া, আরিফ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, চঞ্চলের ভগি্নপতি শরীফ উদ্দিন চৌধুরী পাপ্পু ও ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা পাপ্পু। পলাতক ও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আরও অনেকের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।

কিলার তারেক : আসামিদের ভাষ্যমতে, মিল্কী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কিলার তারেক।

মিল্কীর গাড়িচালক সাগরের স্ত্রী লোপার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের সুবাদে তারেক মিল্কীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। তারেক ঘটনার দিন রাতে চঞ্চল, টিপু, আপিল ও রফিকের সঙ্গে একান্ত গোপন বৈঠকের মাধ্যমে মিল্কী হত্যার নীলনকশা তৈরি করেন। তারেক এ জন্য তার নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করেন এবং নিজ হাতেই মিল্কীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন।

সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল : চঞ্চল তারেককে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন। চঞ্চলের অফিসেই ঘটনার দিন রাতে তারেক ও অন্যদের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বৈঠক হয়।

হত্যাকাণ্ডে সহযোগী হিসেবে তিনি তার ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে পিচ্চি শহীদুল, সোহেল মাহমুদ, হানিফ, জাহাঙ্গীর, পলাশ, দেবাশীষ, জাকির ও দেলোয়ারের নাম উল্লেখযোগ্য। মিল্কী হত্যাকাণ্ডের সময় নিজ দলের সদস্য আমিনুলের গুলিতে তারেক আহত হলে চঞ্চল তারেককে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন।

রফিকুল ইসলাম : মিল্কী হত্যাকাণ্ডে মূল পরামর্শক ও প্রশাসনিক সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি ঘটনার দিন গুলশান শপিং সেন্টারে চঞ্চলের অফিসে অন্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।

বৈঠকে রফিক তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ইব্রাহিমকে চঞ্চল ও তারেকের হয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেন। পরে রফিক তার গাড়িচালক চুন্নুকে দিয়ে নিজের কালো রঙের প্রাডো গাড়িটি চঞ্চলের কাছে গুলশান বিদ্যুৎ অফিসে পাঠান।

ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ : চঞ্চলের অফিসে হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা তৈরির গোপন বৈঠকে যোগ দেন। আরিফ তার নীল রঙের সিআরভি গাড়িটি চঞ্চলকে দেন। এ গাড়িটি হত্যাকাণ্ডের সময় মিল্কীর গাড়ির পেছনেই রাখা হয়েছিল।

জাহিদুল ইসলাম টিপু : চঞ্চলের অফিসে গোপন বৈঠকে অন্যদের সঙ্গে টিপুও যোগ দিয়ে মিল্কী হত্যায় সমর্থন দেন।

আমিনুল ইসলাম হাবিব : আমিনুল মিল্কী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন। শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে কিলার তারেক গুলি করলে মিল্কী পড়ে যান। আমিনুল এ সময় মিল্কীর নিথর দেহে আরও তিন রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তার এলোপাতাড়ি গুলিতে তারেক পিঠে গুলিবিদ্ধ হন।

এরপর ভয়ে পালিয়ে যান আমিনুল।

সোহেল মাহমুদ : চঞ্চলের ক্যাডার ও দেহরক্ষী সোহেল প্রাথমিকভাবে মিল্কীর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য তারেকের নির্দেশে গুলশানে অবস্থান নেন এবং মিল্কীর গাড়ির ব্যাপারে তথ্য দিতে থাকেন। পরে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে হত্যাকাণ্ডের স্থানে যান এবং হত্যার পর তারেককে নিয়ে দ্রুত চলে যান।

ফাহিমা ইসলাম লোপা : মিল্কীর গাড়িচালক সাগরের স্ত্রী লোপা হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তারেকের সঙ্গে টেলিফোনে ও সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেন।

চুন্নু মিয়া ও জাহাঙ্গীর : চুন্নু ও জাহাঙ্গীর যথাক্রমে রফিক ও চঞ্চলের গাড়িচালক।

তারা মিল্কী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করেছেন। শরীফ উদ্দিন চৌধুরী পাপ্পু : চঞ্চলের ভগি্নপতি পাপ্পু এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চঞ্চলের কাছে দেন। হত্যার আগে ও পরে চঞ্চল এই নম্বরে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হত্যার পর পাপ্পু চঞ্চল ও শহীদুলকে আশ্রয় দেন।

ফরিদউদ্দৌলা পাপ্পু : তিনি কিলার তারেকের ব্যবসায়িক পার্টনার এবং গুলিবিদ্ধ তারেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

হত্যাকাণ্ডের কারণ : দলীয় আধিপত্য, সাংগঠনিক পদ দখল ও টেন্ডারবাজিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মূলত কিলার তারেক যুবলীগ নেতা মিল্কীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.