ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রাণ নেওয়াই এখন অন্যতম প্রধান কাজ জল্লাদ শাহজাহান ভঁূইয়ার। নিজের সাজার মেয়াদ কমানোর আশায় কয়েদি থেকে জল্লাদ হয়েছেন। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কারাগারের চার দেয়াল থেকে মুক্তি পেতে। আর এই শাহজাহানের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালীতে। 'ভয়ঙ্কর' খুনি শাহজাহান। নারীঘটিত একটি ঘটনার পর শাহজাহানের সন্ত্রাসী জগতে প্রবেশ। একই সময় যোগ দেন সর্বহারা পার্টিতেও। আর এই রাজনীতি তার অপরাধ জগৎকে আরও বাড়িয়ে দেয়। অবশেষে ১৯৭৯ সালে ঢাকা থেকে নরসিংদী ফেরার পথে গ্রেফতার হন শাহজাহান। এরপর ৩৬ মামলায় তার ১৪৮ বছর কারাদণ্ড হয়। ইতোমধ্যে কারগারে কেটেছে ৩৩ বছর। এর মধ্যে ১০০ বছর দণ্ড মওকুফও হয়েছে।
দীর্ঘদিনের সাজা। জেলে থাকতে থাকতে জীবন পার হয়ে যাবে। তারপরও মুক্তি চান তিনি। একজন অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করার মাধ্যমে দুই মাসের সাজা কমে জল্লাদের। তাই সাজা কমানোর আশায় জল্লাদের খাতায় নাম লেখান তিনি। ১৯৮৯ সালে প্রথম এক অপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে তার জল্লাদ জীবনের শুরু। এরই মধ্যে তিনি ৩৩ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সব কারাগারের প্রধান জল্লাদ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ ঘাতককে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করেন তিনি। একের পর এক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে নিজের সাজা কমিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখছেন, কারাজীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার।
কথা হয় শাহজাহান ভঁূইয়ার ভাগ্নে ইছাখালী গ্রামের নজরুল ভঁূইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, 'আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন মামাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার মামা বাম রাজনীতি করত বলে তার নানা তাকে খারাপ চোখে দেখতেন। এর মধ্যে কারাগারে একবার মামার সঙ্গে দেখা করতে যাই। মামা জানান, সাজা মওকুফের জন্য জল্লাদ হয়েছেন। তিনি এখন মুক্তি চান। মুক্তি পেলে কোনো অন্যায় করবেন না। বাকি সময় ভালো কাজ করে জীবন পার করবেন। তবে সম্প্রতি শাহজাহান সাংবাদিকদের জানান, গ্রামে নারীঘটিত ঘটনায় নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও সাজা দেওয়া হয় তাকে। অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন।
তিনি আরও বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল আমি তাদের ফাঁসি দিয়েছি। আমি আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী আমার দিকে একটু সুনজর দেবেন। কিন্তু কে রাখে কার খবর? জীবনের ৩৩টি বছর কারাগারে কাটিয়েছি। এখন আমার অপরাধ করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনোটায় নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করলে একটি মানুষ জীবনের শেষ বয়সে এসে আশার আলো দেখতে পারেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেন তার সামান্যতম সহানুভূতি দেখায় সে ব্যাপারে তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।