আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হত্যাযজ্ঞের দুই খলনায়ককে দেশে আনতে ইন্টাø

বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী কারোই সাজা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোও দেওয়া হয়েছে ধামাচাপা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান গতকাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দুই মূল খুনি আশরাফুজ্জামান খান এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমেরিকান জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের কাছে তথ্য চেয়েছে। তিনি বলেন, তাদের কাছে খবর রয়েছে, আশরাফুজ্জামান খান রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দীন লন্ডনে।

আবদুল হান্নান খান বলেন, আশরাফুজ্জামান খান এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে ১৭৭৩ সালের 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট'- এর ৩(৩) ধারা মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষক, ছয়জন সাংবাদিক এবং তিনজন চিকিৎসকসহ মোট ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ, হত্যা এবং গণহত্যার ১৮টি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ১৯৭১ সালেই নয়, এর আগেও '৫২-এর ভাষা আন্দোলনে একটা কথা প্রচলিত ছিল 'বুদ্ধিজীবীরাই এসব সংগ্রামের ইন্ধন জোগান'। একাত্তরের ১৪-১৬ ডিসেম্বরের আগেও বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়। কিন্তু ১৪-১৬ ডিসেম্বর তারা যা করেছিলেন, সেটা একেবারে পরিকল্পিত। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যা কার্যকর করে আলবদর বাহিনী। আলবদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাদের দিয়ে। তাই আলবদর বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন ইসলামী ছাত্রসংঘ এবং পরে জামায়াতের নেতারা।'

তিনি বলেন, 'এ বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীর নামেও অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তো সরাসরি জড়িত। মুজাহিদ তখন ছিলেন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান।'সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দায়ের করা মামলা পরিকল্পিতভাবে ধামা চাপা দেওয়া হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী গিয়াসউদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রধান হন্তারক বলে আলোচিত আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও প্রধান জল্লাদ আশরাফুজ্জামানকে। কিন্তু মামলার তদন্ত শুরু হতে না হতেই তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, বিএনপি জামায়াত জোট সরকার আমলে হত্যা, অপহরণ ও ষড়যন্ত্রের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সত্ত্বেও আইনের ভুল ধারায় মামলা হয়েছে- এই কারণ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী গিয়াসউদ্দিন হত্যা মামলাটির অপমৃত্যু ঘটানো হয়। শহীদ গিয়াসউদ্দিনের বোন অধ্যাপক ফরিদা বানু ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১২০(খ)/৪৪৮/৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪/১১৪ ধারায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রধান হন্তারক বলে আলোচিত আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও প্রধান জল্লাদ আশরাফুজ্জামানকে। মামলাটি বুদ্ধিজীবী গিয়াসউদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় ২০০২ সালে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এভাবেই পার পেয়ে গেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহুর্তে সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘাতকরা। এছাড়া আদালত মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দিলেও ঘাতকদের কখনই সাজা ভোগ করতে হয়নি। এরা প্রত্যেকেই মুক্তি পেয়েছেন রাজবন্দী হিসাবে। আবার অনেক মামলাও তদন্তের আগেই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শহীদ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবেই ঘাতকদের রক্ষা এবং মামলাগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। মামলার পরিণতি সম্পর্কেও তাদের জানানো হয়নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.