আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনসহ ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ ও নয়া দিগন্ত প্রকাশক শামসুল হুদার বিরুদ্ধেও রুল জারি করা হয়েছে। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ রুল জারি করেন। অন্য যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছে তারা হলেন ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকার বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। একই সঙ্গে সাংবাদিক শাহেদ চৌধুরী, আবদুর রহমান ও ইলিয়াস খানকে (দুটি সাংবাদিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক) বুধবার হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করে হাইকোর্টে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। ওই বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটি, ঢাকার বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দেওয়া বিবৃতি গতকাল সমকাল ও নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়টি গতকাল শুনানিতে আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার রোকন। এরপর আদালত ওই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জারি করা রুলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর আগে প্রথম আলোতে যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের লেখা দুটি নিবন্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ২ মার্চ তিনিসহ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ৬ মার্চ হাইকোর্টে শুনানি হয়। আদালতের নির্দেশে গতকাল মিজানুর রহমান খান হাইকোর্টে হাজির হন। বেলা ২টা ২৫ মিনিটে আদালত বসেন। এরপর মিজানুর রহমান খান বিচারকক্ষে স্থাপিত কাঠগড়ায় দাঁড়ান। ২টা ৪০ মিনিটে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা ৩টা ৩২ মিনিটে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সাংবাদিককে বসতে কাঠগড়ায় চেয়ার দেওয়া হয়। ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি আজ দুপুর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আজও মিজানুর রহমান খানকে হাজির হতে বলা হয়েছে। আদালত অবমাননার অভিযোগের পক্ষে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে কাল শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি, জয়নুল আবেদীন, আহসানুল করিম, কাজী আখতার হামিদ সালাউদ্দিন দোলন, আসাদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। সাংবাদিকদের বিবৃতি প্রসঙ্গে আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আদালতে দেওয়া একজন আইনজীবীর বক্তব্য কীভাবে একজন সাংবাদিক প্রত্যাহারের দাবি জানান? তারা কীভাবে বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেন? আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, মিজানুর রহমান খান স্বভাবগতভাবেই একজন আদালত অবমাননাকারী। এর আগেও তিনি বিচারপতিদের বিরুদ্ধে লিখেছেন। তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আরও রুল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন বলেন, ওই নিবন্ধ লেখার পেছনে হিডেন এজেন্ডা আছে। পত্রিকায় মটিভেটেড নিউজ হয় না সাংবাদিকরা এ কথা বলতে পারবেন? কাজী আখতার হামিদ বলেন, আদালতকে হেয় প্রতিপন্ন করে যে লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তা হলুদ সাংবাদিকতা। আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, আদালত অবমাননার দায়ে মিজানুর রহমান খানের প্রতীকী শাস্তি নয়, কারাদণ্ড হওয়া উচিত।
বরিশালে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানায়, বরিশালের কৃতী সন্তান বিশিষ্ট সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ও তার লেখার প্রতি সুপ্রিমকোর্টের সহানুভূতি চেয়ে বরিশালে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশের নাগরিক সংগঠন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্লাকার্ড নিয়ে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা এমজি কবির ভুলু, সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল আলম ফরিদ, খালিদ হোসেন, জামাল উদ্দিন, কামাল উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।