লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই,তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। (http://www.ishakkhan.blogspot.com)
ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং ... ...
মাথার ভেতর দপদপে যন্ত্রণা নিয়েও রোমেল কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে চায়, হাতের থাবায় থামিয়ে দেয় অ্যালার্ম ক্লক।
কিন্তু রোজকারের তাগিদ, যেটা শরীরে একটা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করে দিয়েছে - ওকে টেনে ওঠায়, মিনিট দশেকের মধ্যেই সে ঢুলতে ঢুলতে বাথরুমে ঢোকে।
চোখেমুখে জল দেয়ার সময় আয়নায় নিজেকে দেখে। এইমাত্র দাঁত ব্রাশ করেছে, মুখে পানির ঝাপটা দিয়েছে, তারপরও কি কুৎসিত দেখাচ্ছে তাকে, যেন রাজ্যের ভার ওর মাথার ওপরে। যেন কিছু একটা সবসময় টেনে নিতে নিতে সে ক্লান্ত, এবার ছুটি চায়। না না, ছুটি তো সাময়িক একটা ব্যাপার; স্থায়ী একটা মুক্তি দরকার, খুব দরকার।
ওর বন্ধু সোহানের কাছে সে শুনেছে, সোহানের মা ওকে রোজ সকালে ডেকে তোলেন।
এমন আচরণ করেন, যেন সে একটা বাচ্চা ছেলে। মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতেই থাকেন, ডাকতেই থাকেন। সোহান বলে, মায়ের জ্বালায় আর পারি না। এখনো মায়ের মধ্যে ছেলেমানুষি ব্যাপারগুলো রয়ে গেছে।
রোমেল নাক দিয়ে একটা বিচিত্র আওয়াজ করে বিদ্রূপ প্রকাশ করে।
ওর ঘুম কোনোদিন অ্যালার্ম ক্লকের এই মাথা ধরে যাওয়া আওয়াজ ছাড়া ভাঙে না। একটি কোমল হাত এখন আর ওর কপালে হাত রাখার সময় পায় না। একটি পরিচিত কণ্ঠ বলে না, রুমু, ওঠ্ পাজি ছেলে। আর ইচ্ছে করে দেরী করা, জোর করে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকার দুষ্টুমিগুলোর কথা ভাবতেও ভয় হয়। সময় পাল্টেছে, আশ্চর্য দ্রুততায় পাল্টেছে।
নিজেকে এখন বড় ভাবতে হবে, ফর্মাল ব্যাপারগুলো এসে মিষ্টি-মধুর আন্তরিকতাগুলোকে দূরে সরিয়ে দেবে।
ঘড়ির কাঁটার দিকে সে আরেকবার তাকায়। বিশ্বাসঘাতকের মত সে যতটা ভাবে, তার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকে এই যন্ত্রটি। সবসময়। এক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতেই মনে হয়, ঘড়িটা জড়বস্তু নয়, ওটার প্রাণ আছে; ওর দূরবস্থা আর পিছিয়ে পড়া ঘড়িটা খুব উপভোগ করছে, মুখ টিপে হাসছে।
ভীষণ রাগ হয় রোমেলের। মনে হয়, এই তিন কাঁটাওয়ালা জিনিসটাই যত অনর্থের গোড়া, নষ্টের মূল। এটার সাথে পাল্লা দিতে গিয়েই, এটার কাঁটাগুলোর সাথে নিজেকে সমান্তরালে আনতে গিয়েই আজ এই অবস্থা। ভেঙে দিতে পারলে ভালো হত। কিন্তু সেটা তো পাগলামি হবে।
ভাবার সময়ও নেই, কষ্ট পাবার সময় নেই, রাগ করার সময় নেই। পা ছড়িয়ে ভাবতে বসার সময় নেই। এখুনি ওকে বেরুতে হবে, নাকেমুখে খাবার গুঁজে। ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নেমে আসে সে নিচে। খাবার দেয়া হয়েছে।
ঐ তো বাবা, ঐ তো মা, ঐ তো রুনু আপু।
চুপচাপ সে বসে পড়ে, প্রতিদিন যে চেয়ারে বসে সেটাতেই। একটা সময় রুনু আপুর চেয়ারটাকে ভালো মনে হত, সেটার দখল নিতে গিয়ে সে কি মারামারি, চুল টানাটানি। এই তো সেদিন, চোখ বুজলেই মনে পড়ে। আর আজ, উচ্ছল রুনু আপু গোগ্রাসে জেলি মাখানো পাউরুটির টুকরো মুখে পুরছে, ওর দিকে তাকানোর সময়টাও নেই।
দমবন্ধ করে খেতে থাকে সে। না, সে নিঃশ্বাস নিচ্ছে না তা নয়, তবে পরিবেশটা কেমন যেন হাঁপ ধরিয়ে দেয় অল্পক্ষণেই। আর কারুকে জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় না কিংবা ইচ্ছে হয় না, তবে নিজের কথা বলতে পারে রোমেল, ওর ভালো লাগে না ব্যাপারটা। একটা খাবার টেবিল, যেটাতে খেতে বসে সবাই মিলে খুনসুটি করত, সেটাতে আজ প্লেট-চামচ-কাঁটার আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই কেন? একটি কথাও কেন বলছে না কেউ?
কত সুখ জড়ানো ছিল, সবখানে একটা হাসিখুশির ছোঁয়া লেগে থাকতো অষ্টপ্রহর। প্রতিবেশীরা বলত, সুখী পরিবার দেখতে হলে ওদেরকে দেখো।
ছেলেমেয়ে নিয়ে উনারা কেমন আনন্দ করছেন, দেখলেই হিংসে হয়।
হ্যাঁ, এখনো বলে। তবে সুখী পরিবার বলে না, বলে সফল পরিবার। খুনসুটি আর রসিকতার শব্দগুলো নিষ্ঠুরের মত কেড়ে নিয়েছে কাঁটাচামচের আওয়াজ। ডিম, পরিজ, জেলি, পাউরুটি কেনা যায়, ডাইনিং টেবিল ইচ্ছেমত বড় করা যায়, তবে রুচি আর সুখ কেনা চলে কী? জোর করে রোমেল নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারে না।
ঐ তো বাবা, যে বাবা ছিল সে বাবাই আছেন। শুধু নাকের ওপর গুঁজে রাখা চশমার পাওয়ার একটু বেড়েছে। ঐ পত্রিকাটা তো আগেও পড়তেন, কিন্তু চওড়া পাতাটার আড়াল থেকে কোন প্রশ্ন ভেসে আসে না কেন? কেন তিনি বলেন না, দেশটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে? কেন বলেন না, রোমেল আর রুনু, তোমরা সাবধানে থাকবে, আর সেটা শুনে তারা দুজনই এতখানি জিব বের করে ভেংচি কাটবে?
মা, ঐ তো মা। ছোটখাটো মহিলাটি আগে খেতে বসেই এটা-ওটা জোর করে খাওয়াতে চাইতেন। কত এনার্জেটিক ছিলেন, মুখ চলত অনবরত।
রুনু আপু বলত, জগতের সবচেয়ে বিরক্তিকর মা। সবকিছুটে খবরদারী। আজ তিনি এত বিধ্বস্ত, এত চুপচাপ কেন? ঐ বিরক্তিকর মা-টাই তো ভালো ছিল। এই ভদ্রতার চাদরে মোড়া ফর্মাল মা কে চেয়েছিল?
ভাবার সময় নেই। বিশ্বাসঘাতক ঘড়ি টিকটিক শব্দ না করলেও এগিয়ে চলছে।
ঢক ঢক করে পানি খেয়ে উঠে গেল রোমেল, চা খাবার সময় নেই। রুনু আপু আগেই ছুট দিয়েছে।
রোমেল খেয়াল করে, মায়ের সাথে চোখাচোখি হতে তিনি কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁট নাড়লেন, কিন্তু অবশেষে কিছু বললেন না। গম্ভীর মুখে নিজের ব্যাগ খুলে কিছু একটা বার করতে লাগলেন।
একটু পরই ওদের বাড়িটা হয়ে যাবে পুরোপুরি ফাঁকা, সগিরন বুয়া বসে পায়ের ওপর পা তুলে হিন্দি চ্যানেল দেখবে, সিনেমা কি সিরিয়াল।
অথবা ফোন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলবে দেশের বাড়িতে। ওসব নিয়ে ভাবার সময় নেই, কাজেই বাবা-মা ছুট লাগাবেন নিজের কর্মস্থলে। সারাদিন আর কারো সাথে কারো কোন যোগাযোগ নেই, কারো জন্য কারো কোন উদ্বিগ্নতা নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস এবার বুক ভেঙে না এসে পারল না। তাদের মতো তাদের বাবা-মাও হিসেব করে কথা বলতে শিখেছেন, এখন সন্তানকে বেরুবার আগে সাবধান করা আদিখ্যেতা।
সময়ের প্রয়োজনে নির্লিপ্ত হতে হয়েছে।
গাড়িতে চেপে বসেছে রোমেল। এসি চলছে। শীতল বাতাস ওকে এতটুকু স্বস্তি দিতে পারছে না। তবে বাইরের ধুলোবালি এড়াতে হলে জানালা বন্ধ না রেখে উপায় নেই।
এই ঢাকা শহরকে দেখতে হয় দূর থেকে, কাঁচের এপাশ থেকে, তার স্পর্শ-ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে।
মনে পড়ে ওর রিকশায় চড়ে স্কুলে যাবার কথা। কিছু কিছু রিকশাওয়ালা ছিল দারুণ ফুর্তিবাজ। মুখে শিস দিত, গান গাইত, পুরো রাস্তা বকবক করতে করতে যেত, পরিচিত অন্য সব রিকশাওয়ালাকে দেখলেই দরাজ গলায় রাস্তা সচকিত করে হাঁক দিত, ও মিয়াবাই, কই যাও?
ফুর্তিবাজ রিকশাওয়ালাগুলো নিশ্চয়ই এখনো আছে, তবে তাদের বাহনে চড়ার দিনগুলো সে পার করে এসেছে। এখন তাদের জায়গা নিয়েছে এই গুঁফো সন্দেহজনক চেহারার ড্রাইভার, যার সাথে একবারের বেশী কথা বলার ইচ্ছে হয় নি; যে জানে শুধু দরজা খুলে দিতে, বন্ধ করতে আর স্টিয়ারিং ধরে রাখতে।
সারাদিন ক্লাস-ল্যাবের চাপে একরকম কেটে যায়। তারপরও এখানে একটা অতৃপ্তি পাক খেয়ে যায় রোমেলের মনে। সবাই কেমন মুখ গুঁজে কাজ করে যাচ্ছে। কাজ করতে গেলে কথা তো বলতেই হয়। কিন্তু সেগুলোও সব দরকারী কথা, কাজের কথা।
এই অঙ্কটা এভাবে না করলে তো হচ্ছে না। আচ্ছা এই মেজারমেন্টটা এত গণ্ডগোল করছে কেন? আবার আমাকে কম নম্বর দিয়েছে – এইসব। একটু বসে যে কারো সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলবে, সেটা এখানে রীতিমতো স্পর্ধা। শুধু যেটা করতে এসেছ, সেটার ফায়দা পুরোমাত্রায় লুটে নিয়ে কেটে পড়। এটা শিক্ষাঙ্গন নয়, কারখানা।
যত তাড়াতাড়ি পারো বেরিয়ে যাও, আর নিজের রাস্তা খুঁজে নাও। এখানে কেউ বলে না, আয় রোমেল, একটু গল্প করি, একটু দম নিই। বাকি সব চুলোয় যাক।
সারাদিন পর ক্লান্ত-অবসাদগ্রস্ত রোমেল যখন ফেরে, তখন অবাক হয়ে খেয়াল করে, সারাটাদিন সে প্রায় কোন কথা না বলেই কাটিয়ে দিয়েছে। যা বলেছে সব দরকারী কথা, একবারও বাজে বকে নি।
সবচেয়ে যেটা পোড়ায়, তা হল অনেকদিন প্রাণ খুলে হাসা হয় নি। যে রোমেল অনেকদিন আগে বন্ধুদেরকে গোল করে বসিয়ে নিজে মাঝখানে বসিয়ে কৌতুক বলত, গান গাইত আর অকারণ সব সস্তা বিষয়ে হেসে সবার সাথে গড়িয়ে পড়ত, যার হাসির আওয়াজ পাওয়া যেত অনেকটা দূর থেকে; তার মুখটা আজ আশ্চর্য রকম গম্ভীর, পরিণত এবং দায়িত্বশীল ভাবটি অজান্তে নিজের মুখমণ্ডলে পাকাপাকিভাবে বসে গেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে সে নানা আজব কাণ্ড করে, নিজেকে অন্য আরেকজন কল্পনা করে কথা বলতে চায়। অবশ্যই দরজা বন্ধ করে, কারণ কেউ দেখে ফেললে তার মানসিক স্থিরতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবে। নিজের প্রতিবিম্বটিকে সে হাসানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু দুঃখিত হয়ে সে দেখে হাসিতে প্রাণ আসছে না। ঠোঁট দুটো দু’পাশে ছড়ালেই তো আর হাসি হয় না, আরও একটা কিছু থাকতে হয়। সেই “একটা কিছু” অনেক আগে তার কাছ থেকে পালিয়ে গেছে।
দিবানিশি নিজের সাথে যুঝছে সে। এগোও।
খবরদার, থামবে না। ঐ দ্যাখো, আবার বসে পড়লে কেন? ওঠো, সবাইকে মাড়িয়ে এগোতে হবে। আবেগ-টাবেগ ঝেড়ে ফেল। খবরদার পেছনে তাকাবে না, স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলেই দুর্বল হয়ে পড়বে। বর্তমানে বাস কর আর পাঁচ বছর পরে চোখ দুটো রাখ, সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান কেন্দ্রীভূত কর ওখানেই।
খবরদার, কারো দিকে নরম চোখে তাকাবে না, কারো সাথে দরকার ছাড়া যোগাযোগের দরকার নেই, শুধু ভাবো মানুষটির কাছ থেকে কী কী সুবিধে পেতে পারো, কীভাবে তাকে ব্যবহার করে নিজের রাস্তাটা আরও পরিষ্কার, আরও প্রশস্ত করতে পারো।
ভেতরের এই সত্তাটিকে সে কিছুতেই পছন্দ করতে পারে না, ভালোবাসা তো দূরের কথা। সন্দেহ নেই, তার ভেতরে দিনে দিনে জমাট বেঁধে গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা এই সত্তাটি সে নিজেই, তারপরও বিদ্রোহ করতে মন চায়।
রাত দশটা বাজে, এগারোটা বাজে। ঘড়িটা নির্লিপ্তভাবে আরেকটি দিন শেষ করে দিতে চায়, বিশ্রাম নিতে চায় না মোটেই, যেন সে ওদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে।
মা ফেরেন, বাবা ফেরেন, রুনু আপু ফেরে। সবাই যেন যোদ্ধা, সারাদিন ধরে একটা লড়াই করে শরীরের সমস্ত শক্তি আর মনের সমস্ত উদ্দীপনা নিঃশেষ করে ফিরেছে শিবিরে, দানাপানির কথা ভুলে গিয়ে। তারপর যে যার ঘরে ঢুকে যান। সে খেয়াল করেছে বাবা-মা এখন আর পরস্পরের সাথে কথা বলেন না বিশেষ। সংসারী কথা, যেগুলো না বললেই নয় – সেগুলো ছাড়া।
আমি বলেই তোমার ঘর করে গেলাম, অন্য কেউ হলে লাথি মেরে চলে যেত – এই মধুর কথাটি মা কতদিন বলেন নি বাবাকে। বাবাও চুপে চুপে এসে হাসিমুখে বলেন নি কতদিন, এই মহিলা আমার জীবনটাকে ভাজা ভাজা করে দিল, শুধু সামনে কিছু বলতে সাহস পাই না। সবাই কেমন বিবর্ণ, নিস্তেজ। কথা বলার রুচি নেই কারো সাথে, যেন চুপ করে থাকতে পারলেই বাঁচেন, যেন কথা বললেই বিষম কিছু একটা ঘটে যাবে।
ড্রইংরুমে সে গুম মেরে বসে থাকে।
কোন কথা নেই। রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে মারামারির দিনগুলো চলে গেছে কত আগে, এখন আর সচল ছবিগুলো মোটেই আকর্ষণ করে না। কিছুক্ষণ সে বসে থেকে উঠে যায়।
কম্পিউটার আছে, ফেসবুক আছে। হাজারো জনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা, কথা বলার সুযোগ আছে।
কিন্তু যেখানে বসে সে যাদের সাথে অন্তত কিছুক্ষণ হলেও কথা বলতে চায়, তারা কেমন গুটিয়ে গেছে। ভয় ধরানো একটা নীরবতা বাসা বেঁধে আছে সবসময়। সে তো মুখে কথা বলতে চায়, কীবোর্ড টিপে টিপে নয়।
রোমেল ভাবে, কেন তারা এমনভাবে আছে? এভাবে কষ্ট করে, যন্ত্রণা সয়ে থাকার চেয়ে চলে যাওয়াই কি উচিৎ নয়? এক ছাদের নিচে থাকার জন্য, নিরাপত্তা আর সামান্য দায়বদ্ধতার জন্য এই চারটি প্রাণী কেন এত লড়াই করছে?
আচ্ছা, বাবা, মা, রুনু আপুও কি এমনটাই ভাবে? ভাবলে বলে না কেন? আমি নিজেও কেন মুখ খুলতে সাহস পাই না, কেন কাউকে বলি না, এসো, একটু কথা বলি, অস্বস্তিকর নীরবতাটি ভেঙে দিই জন্মের মত।
বিত্ত এসেছে, বৈভব এসেছে।
কিন্তু কথাগুলো, আনন্দময় মুহূর্তগুলো কী করে পালিয়ে গেল আলগোছে। টের পাওয়া গেল, কিন্তু কিছুই করা গেল না, ঠেকানো গেল না। নাকি সবাই মিলে এটাই চেয়েছিল? কি সাংঘাতিক, কি সাংঘাতিক।
সিলিংয়ের দিকে সে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে, তাকিয়ে থাকে ঘুরন্ত ফ্যানের তৈরি বড় বৃত্তটার দিকে। বুকের ভেতর চাপ চাপ কষ্ট দিচ্ছে এই নীরবতা, ওকে পুড়িয়ে যাচ্ছে।
বাড়িটার নীরবতা রাত গভীর হবার সাথে সাথে কয়েক গুণ বেড়ে যায়, একটা শব্দও নেই কোথাও! প্রতিটি দরজা বন্ধ, যেন একটা আগল তুলে নিজেকে আলাদা করার চেষ্টা। প্রতিটি প্রাণী ঘুমে আচ্ছন্ন, নিদারুণ ক্লান্তিতে অচেতন। একটু দেরী করলে কাল সকালে ঘড়ির সাথে দৌড়ে পারা চলবে না।
দলা পাকিয়ে ভেতর থেকে কিছু একটা ওপরে উঠতে চায় রোমেলের। সে জোর করে আটকায়।
কাঁদতেও এখন ভদ্রতায় বাধে।
(২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।