নাশকতাকারীদের নিশানায় রয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সুযোগ পেলেই তারা বিমানবন্দরে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কাজনক তথ্যের পর শাহজালালে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ভেতর থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের চারদিক ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। তবে এই রেড অ্যালার্ট পরিস্থিতি কত দিন চলবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত নেই বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ছাড়াও ডজনখানেক সংস্থা কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধমূলক ঘটনার পর স্পর্শকাতর এ স্থাপনার নিরাপত্তাই ছিল ঝুঁকির মধ্যে। এরই মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে নাশকতার ঘটনা ঘটায় জামায়াত-শিবির। নিজ দলের সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। গত শনিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় সেখানকার এক কর্মচারীর মাধ্যমে। রেললাইনে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নাশকতায়ও তাদের কর্মচারী জড়িত থাকার অভিযোগ তারা পেয়েছেন। একই প্রক্রিয়ায় সরকারি অন্য স্থাপনাগুলোতেও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা আছে বলে তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে। শাহজালাল বিমানবন্দর তাদের টার্গেটে রয়েছে। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য জানান, বিমানবন্দরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ, গোপনে কার্গো বিমানে চড়ার চেষ্টা, সংরক্ষিত এলাকায় সশস্ত্র ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার ও কার্গো ভিলেজে বড় ধরনের চুরির পর অতি গুরুত্বপূর্ণ ও নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল এ স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থাই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের নাজুক বিমানবন্দরগুলোর একটি। দুর্বল নিরাপত্তার কারণে বিমানবন্দরটি জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। পাশাপাশি সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস এবং বিমানের কর্মকর্তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে গেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। এখানে যে কেউ তদারকি ও পর্যবেক্ষণ ছাড়াই সহজে প্রবেশ এবং বেরিয়েও যেতে পারে। সারা বিশ্বেই এখন বিমানবন্দরগুলো সন্ত্রাসীদের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং বিমানবন্দরের শিথিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাশকতার সুযোগ সৃষ্টি করতেই পারে।
এদিকে হামলার আশঙ্কায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাধারণ দর্শনার্থীসহ সব ধরনের যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে আসা সাধারণ দর্শনার্থীদের টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ লোকজনের চলাফেরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন পরিচালক উইং কমান্ডার জাকির হোসেন বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় বহির্গমন ও আগমন টার্মিনালের টিকিট কেটে যে দর্শনার্থী প্রবেশ করতেন, আপাতত তা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হাসান বলেন, সিভিল এভিয়েশনের মৌখিক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আগমন ও বহির্গমন টার্মিনালে সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।