আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে স্থানীয় সরকার পর্÷

দেশে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক দশকে উপজেলা পর্যায়ে নারী জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে নারী জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ও নির্বাচিত হওয়াকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নারী জনপ্রতিনিধি ও ভোটার উভয়ই আগের তুলনায় নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সচেতন। তারা ক্রমেই দায়িত্ব পালনে আত্দবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নারীকে গ্রহণ করার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সামাজিক প্রচলিত ভাবনা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী-পুরুষ সমানভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যহারে নারীরা অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনের ফলাফলেও অতীতের চেয়ে তারা ভালো অবস্থানে আছেন। আগের তুলনায় নারী প্রতিনিধিদের সম্মান ও আত্দমর্যাদা দুটোই বেড়েছে। এখন আর শুধুমাত্র 'মেম্বার আপা' ডাক শুনেই তারা সন্তুষ্ট থাকছেন না। বরং স্থানীয় উন্নয়নে একজন পুরুষ মেম্বারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন। এখন পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাবেক নারী প্রতিনিধি জানান, উপজেলা পরিষদের সভায় হাজিরা, ভিজিডি ও ভিজিএফ তালিকা তৈরির মধ্যেই আটকে ছিল নারী সদস্যদের ক্ষমতায়ন। এলাকার উন্নয়নে পরিষদের ফান্ড কিংবা প্রকল্পের কোনো কাজেই তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। এক সময় সরকারি বরাদ্দ, টিআর কিংবা কাবিখা থেকে শুরু করে এলাকার উন্নয়নে পরিষদের কোনো প্রকল্পেই নারী সদস্যদের প্রধান করা হতো না। এমনকি গ্রামের উন্নয়নে একক সিদ্ধান্তও নিতে পারত না। গ্রাম্য রাজনীতির শিকার হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের রোষানলে পড়তে হতো নারী প্রতিনিধিদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এজন্য নারী প্রতিনিধিদেরকে নিজেদের কাজের পরিধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে।

শিক্ষা ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন নারী প্রতিনিধিরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। পাচ্ছেন পরিবার থেকে সহযোগিতা। বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অনেক নারী এখন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে আগের থেকে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও তুলনামূলক বেশি শিক্ষিত নারীরা উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচনে তেমন আগ্রহী নন। অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষা নিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন বেশিরভাগ নারী সদস্য। তবে বেশ কয়েকজন জানান, মেম্বারদের সম্মানী বাড়ানো হলে শিক্ষিতরা আগ্রহী হবেন। তখন তারা স্থানীয় উন্নয়নে অবদান রাখবেন।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে নারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার হার অনেক বেশি। তবে আগের তুলনায় স্থানীয়ভাবে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন। তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের আরপিও-তে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্যদের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তবে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের উপর জোর দেন। সুজন সম্পাদক বলেন, পুরুষ জনপ্রতিনিধিদের তুলনামূলক বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়া ও দায়িত্বহীনতার কারণে এখন নারী জনপ্রতিনিধিরা আগের চেয়ে বেশি নির্বাচিত হচ্ছেন। বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা 'ব্রতী'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ বলেন, বাংলাদেশের নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের হার বেশি। এক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পাশাপাশি রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক। ক্রমেই নারী জনপ্রতিনিধিদের আত্দবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। এদের মধ্যেই অনেকেই আছেন যারা পূর্বে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হওয়া পর এখন সরাসরি নির্বাচিত হচ্ছেন। অর্থাৎ নারীরা ক্রমেই নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন হয়ে উঠছেন। এটি স্পষ্ট , রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের চিত্র ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে নারীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.