নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আগামী বছর জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সম্ভাবনায় এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলছে ধীরগতি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, তিনটি বড় ও একটি ছোট সৌরবিদ্যুৎ এবং দুটি বায়ুভিত্তিক ও একটি বায়ু-তেলচালিত হাইব্রিড প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী, ২০১৫ সাল নাগাদ মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াট এবং ২০২০ সাল নাগাদ দুই হাজার মেগাওয়াট এই খাত থেকে আসার কথা। কিন্তু আইন পাস হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট) প্রকল্পের আওতায় একটি তিন মেগাওয়াট এবং একটি ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সুনামগঞ্জের সালনায় ৬০০ কিলো ভল্টের প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ। ফেনী, কুতুবদিয়া, কাপ্তাই ও হাতিয়ায় একটি করে বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। আর এ কেন্দ্রগুলোর কাজ শেষ হলে ১০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বিপিডিবি সূত্র জানায়, সরিষাবাড়ির তিন মেগাওয়াট কেন্দ্রের কাজ আইপিপির আওতায় বেসরকারিভাবে অনুমোদন পাওয়ার জন্য শেষ পর্যায়ে। এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে। জানা গেছে, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশকে ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার অনুদান দিচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ ও ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেকটর পাউলিন টেমসিস সম্প্রতি এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আবুল কালাম আজাদ জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়াতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানী নীতি অনুযায়ী, ২০১৫ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুতের পাঁচ শতাংশ আসার কথা এই উৎস থেকে। আর ২০২০ সাল নাগাদ তা হবে দশ শতাংশ। কিন্তু টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২ করা হলেও তা কাজে আসেনি। এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষই গঠিত হয়নি। তবে ছোট ছোট প্যানেল থেকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বড় আকারে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজও ঢিমেতালে এগোচ্ছে। আশুলিয়ায় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে এক-দুই বছরের মধ্যেই এখান থেকে বিদ্যুৎ যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নবায়নযোগ্য বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হলে জমির প্রয়োজন। সরকারের খাসজমি, রেললাইনের দুইপাশের পরিত্যক্ত জমি, যমুনার দুই তীর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রাম এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়গুলো এ জমি দিতে ইচ্ছুক নয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, 'নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। যেহেতু দেশের সীমিত গ্যাস শীঘ্রই ফুরিয়ে আসছে, সে কারণে বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা ভাবতেই হবে। আর বড় আকারে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি ১০ টাকার নিচে নেমে যাবে।'
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।