যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর ঢাকার কূটনীতিকদের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সমর্থন চেয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার। গতকাল দুই দফায় ব্রিফিংয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সহায়তার অংশ হিসেবে নেওয়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে কূটনীতিকদের জানানো হয়। এ সময় দূতাবাসগুলোতে কর্মরত কূটনীতিক ও নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে সরকারের কাছে আরেক দফায় নিরাপত্তা চেয়েছেন কূটনীতিকরা।
আগের দিন সার্ক ও এশিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে ব্রিফিংয়ের পর গতকাল সকাল ও বিকালে দুই দফায় ব্রিফিং আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মুস্তাফা কামাল ব্রিফিংয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। কূটনীতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেওয়া হয়। সকালের ব্রিফিংয়ে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মোজেনা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার এ নিকোলভ, জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদাশিমা, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ুন ইয়ং ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার। বিকালের ব্রিফিংয়ে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সৌদি আরব, প্যালেস্টাইন, ইরাক, মিসরসহ অন্য সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি রাষ্ট্রদূত ও সরকারের প্রতিনিধিরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রের তথ্যানুসারে, ব্রিফিংয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ৫ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্দক সহযোগিতার অংশ হিসেবে নানান নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকার। সব ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম প্রতিহত করার জন্য সরকারের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুসারে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যের পর কূটনীতিকদের প্রশ্নের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে কূটনীতিকরা প্রশ্ন করার পরিবর্তে নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও জোরদার করার আনুরোধ জানান। এক নারী কূটনীতিক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মিশনগুলোর নিরাপত্তার জন্য নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা সম্মানিত বোধ করছি। কিন্তু এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আমাদের উদ্বেগ কমাতে পারছে না, কারণ আমাদের দেশের অনেক নাগরিক বিভিন্ন কাজে এই দেশে অবস্থান করছে। তাদের নিরাপত্তার কথাও আমাদেরকে ভাবতে হচ্ছে। আর কঠোর নিরাপত্তার পরও সরকারের মন্ত্রীদের বাসভবন যেখানে আক্রমণের শিকার হচ্ছে সেখানে নিরুদ্বিগ্ন থাকার উপায় নেই। এর জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১ অনুসারে বাংলাদেশে থাকা সব কূটনৈতিক মিশন, বিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে আপসহীন ও অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি সম্প্রতি গুলশান ও বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন সম্পর্কে কয়েকটি বিষয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশি দেশগুলোর সমর্থন আশা করেন। তিনি বলেন, সরকার আশা করে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বন্ধু রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে সমর্থন করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধ চলাকালে গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানানোর পর কূটনীতিকদের উভয় গ্রুপ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওআইসির রাষ্ট্রদূতরা সরকারকে আশ্বস্ত করেছেন যে, মুসলিম উম্মাহ বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের পাশে আছে। নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপগুলোর প্রতিও সমর্থন প্রকাশ করেছেন মুসলিম দেশগুলোর এই কূটনীতিকরা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।