বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচলে প্রবেশাধিকার চাইছে ভারত। 'এগ্রিমেন্ট অব প্যাসেঞ্জার অ্যান্ড কার্গো ভেহিক্যাল মুভমেন্ট বাংলাদেশ বিটুইন ইন্ডিয়া' নামে একটি চুক্তির মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে চায় দেশটি। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে একই সুবিধা বাংলাদেশও পাবে বলে জানানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কর্িং গ্রুপের (জেটিসি) বৈঠকে ভারতের পক্ষে এ সুবিধা চাওয়া হয়েছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে অন্য দেশের যান চলাচল সুবিধার বিষয়টি ট্রানজিটের আওতায় পড়ে বলে এ ব্যাপারে পৃথকভাবে আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) নামে একটি চুক্তি রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের পণ্যবাহী যান একে অপরের সীমানার ২০০ মিটার ভেতরে যেতে পারে। তবে জেটিসির বৈঠকে ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে বোঝা যায়, তারা তাদের যাত্রী ও পণ্যবাহী যান বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় চলাচল সুবিধা চাইছে। এমনকি তৃতীয় দেশের পণ্য নিয়েও তাদের কার্গো সড়কপথে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় যেতে পারবে। বিনিময়ে একই ধরণের সুবিধা আমরাও পাব বলে জানানো হয়েছে। দুই দেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের যান চলাচলের বিষয়টি সরাসরি ট্রানজিটের সঙ্গে যুক্ত। আর ট্রানজিটের বিষয়টি বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছে। সে কারণে প্রস্তাবটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাদের। সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হওয়ার পর বিগত মহাজোট সরকারের আমলে 'এগ্রিমেন্ট অব প্যাসেঞ্জার অ্যান্ড কার্গো ভেহিক্যাল মুভমেন্ট বাংলাদেশ বিটুইন ইন্ডিয়া' নামক চুক্তির প্রস্তাব দেয় ভারত। সড়কপথে ভারতের ট্রানজিট সংক্রান্ত ওই চুক্তির ব্যাপারে মতামত চেয়ে গত বছরের ১১ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভারতের ওই প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহারে কিছু সুবিধা চেয়েছে ভারত। ভারতীয় যান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সড়ক মেরামত, নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে যান চলাচলের জন্য যেসব ফি, চার্জ ও লেভি আরোপ হবে সেগুলো দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিশনের (জেডবি্লওসি) বৈঠকে নির্ধারণ হবে বলে ভারতের প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। ভারতের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, 'ল অব ল্যান্ড' অনুযায়ী যানবাহনগুলো চলাচল করবে। অর্থাৎ যখন যে দেশে যানবাহন থাকবে সে দেশের আইন প্রযোজ্য হবে। পাশাপাশি ট্রানজিটের আওতায় চলাচলরত যানবাহন চালানোর জন্য রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত অপারেটর নিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের সুবিধা প্রদান সাপেক্ষে এই রেজিস্ট্রেশন দেবে বলে প্রস্তাবিত চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নৌ প্রটোকলের আওতায় ভারতীয় কার্গো জাহাজ বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করছে। আর সড়কপথে প্রস্তাবিত চুক্তি বাস্তবায়নে যদি ওই ধরনের পৃথক প্রটোকল করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেটিও করার ব্যাপারে তারা রাজি আছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে 'ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড প্রটোকল'র আওতায় বাংলাদেশে নৌপথে ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে ভারত। এ প্রটোকলের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে নদীপথে আশুগঞ্জ হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন করে ভারত। প্রটোকলটি সময় সময় নবায়ন করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।