বেঁচে থাকতে যে সম্মান হারিয়েছিলেন, তা ফিরিয়ে দেওয়া হল মৃত্যুর ৬০ বছর পরে। ব্রিটেনের রানী স্বয়ং সেই ভুলের জন্য মরণোত্তর ক্ষমা চাইলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের নয়নের মণি। তুখোড় বুদ্ধিমান সেই লোকটির নাম অ্যালান টুরিং। টেলিগ্রামে জার্মানির পাঠানো দুর্বোধ্য সব কোড তুড়ি মেরে সমাধান করতে পারতেন অ্যালান।
মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই অসম্ভব প্রতিভাসম্পন্ন অ্যালান পাকা জায়গা করে নিয়েছিলেন বাকিংহামশায়ারের ব্লেচলি পার্কে। যুদ্ধের সময়ে যেখানে গোপনে কাজ চালাতেন ব্রিটেনের গোয়েন্দারা। টুরিংয়ের দৌলতে হাজার হাজার জীবন বাঁচাতে পেরেছিল ব্রিটেন।
অ্যালানের বুদ্ধিমত্তার জন্য কম্পিউটার সায়েন্সের জনকও বলা হয় তাকে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার ছয় বছর পরে তার অবদানের জন্য রয়্যাল সোসাইটির ফেলো করা হয় তাকে।
কিন্তু তার এই উজ্জ্বল ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৫০-এর দশকে পৌঁছে। অ্যালানের একমাত্র অপরাধ, তিনি ছিলেন সমকামী।
১৯৫২ সালে একটি চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত হন অ্যালান। সেই সূত্রেই প্রকাশ্যে আসে তার লিঙ্গ পরিচয়ের কথা। ওই চুরির দায় ছিল অ্যালানের পুরুষ-সঙ্গীর এক বন্ধুর।
১৯৬৭ পর্যন্ত ব্রিটেনে সমকামী সম্পর্ক অবৈধ ছিল। যে কারণে, তিনি সমকামী এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই অ্যালানকে গ্রেফতার করা হয়। কারাবাসে চরম আপত্তি ছিল তার। রাসায়নিক প্রয়োগ করে নিজের সত্তা বিসর্জন দিতে রাজি হন অ্যালান।
ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
এর দু’বছর পরে সায়ানাইড খেয়ে শেষ করে দেন নিজের জীবন। ঠিক নিজের ৪২ তম জন্মদিনের আগে। প্রতিভাশালী এই ব্যক্তির এমন পরিণতি মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। অ্যালানের বন্ধু, পরিবার, প্রাক্তন সহকর্মীরা সেই সময় থেকেই তার সম্মানহানি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। এই নিয়ে পরবর্তীকালেও শুরু হয় জোর প্রচার।
যার নেতৃত্বে ছিলেন স্টিফেন হকিংয়ের মতো ব্যক্তিত্বও।
অ্যালানের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছিল, তার জন্য ২০০৯ সালে ব্রিটেনের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ক্ষমাও চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজপ্রাসাদের সমর্থন জোটেনি তখনও। তবে আইনমন্ত্রী ক্রিস গেলিংয়ের উদ্যোগে অ্যালানের সম্মান ফেরাতে এ বার সক্রিয় হয় বাকিংহাম প্যালেস।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।