নামেই ১৮-দলীয় জোট। আন্দোলনের মাঠে শুধু বিএনপি আর জামায়াত। অধিকাংশ দলই ওয়ান ম্যান শো। বিশেষ করে রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াত ছাড়া জোটের অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। অবশ্য অঞ্চলভিত্তিক জোটের কিছু নেতার জনসমর্থন রয়েছে। মাঠের আন্দোলনেও তাদের দেখা যায়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জোট নেতাদের প্রথম সারিতে বসতে দেখা গেলেও কার্যত তৃণমূলে তাদের কোনো জনশক্তি নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি কিংবা পার্টি অফিস নেই অধিকাংশ দলেরই। এখনো বাসাবাড়িকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে বেশ কয়েকটি দল। হরতাল, অবরোধ কিংবা রাজপথের কর্মসূচিতে বিএনপি-ছাড়া জোটের বাকি দলগুলোর শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদেরই চোখে পড়ে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, জোটের অনেক শরিক দল মাঠে নেই অনেকাংশে সত্য। তাদের ওপর বিএনপিও তেমন কোনো ভরসা করে না। তারা মাঠে থাকলে আন্দোলন আরও জোরদার হতো। তবে সব দল সমান ভূমিকা পালন করবে, এটাও ঠিক নয়। ওয়ান ম্যান শো হলেও শরিক দলের নেতাদের রাজনীতিতে দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে।
গত বছরের ১২ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে চারদলীয় জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেন। ১৮ এপ্রিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে খালেদা জিয়া ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে ১৮-দলীয় জোটের আনুষ্ঠানিক আত্দপ্রকাশের ঘোষণা দেন। জোটে নেতৃত্বের আসনে রয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এ ছাড়া রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও পিপল্স লীগ। এর মধ্যে বিএনপি, এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও মুসলিম লীগের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে। এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জোটের শরিক দল এলডিপির চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, জয়পুরহাটে কিছু জনসমর্থন রয়েছে। জোটের কর্মসূচিতে এসব এলাকায় এলডিপির নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়। শুধু ভোলায় নিজ সংসদীয় আসনে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপির সমর্থনে নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নিজ এলাকা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কল্যাণ পার্টির নেতা-কর্মীদের রাজপথে দেখা যায়। জেবেল রহমান গাণির নীলফামারী জেলায় বাংলাদেশ ন্যাপের কিছু নেতা-কর্মীকে সক্রিয় দেখা যায়। দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ে শফিউল আলম প্রধানের সমর্থনে জাগপার নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়। অন্যান্য শরিক দলের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায়ও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ইবরাহিম জানান, আমরা ছোট রাজনৈতিক দল। এর পরও ২০ জেলায় কমিটি রয়েছে। বট গাছের নিচে কলা গাছের অবস্থান যেমন, বিএনপি জোটে আমাদের কর্মকাণ্ডও চোখে পড়ে তেমন। এর পরও কাজ করে যাচ্ছি। এলডিপির যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, প্রায় ৫০ জেলায় আমাদের কমিটি রয়েছে। দলের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সারা দেশেই একজন জনপ্রিয় নেতা। ঢাকাসহ সারা দেশে জোটের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অলি আহমদের নেতৃত্বে অংশ নিচ্ছি। এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা জানান, আমাদের তিনটি জেলায় কমিটি রয়েছে। শর্তানুযায়ী একজন এমপি থাকার কারণে (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধন পেলেও নির্বাচন কমিশন গড়িমসি করছে। আমরা বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে আছি। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না পেলেও ৪০ জেলায় কমিটি রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে নেতা-কর্মীরা ১৮ দলের কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন। জোটের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতেও কাজ করে যাচ্ছি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।