নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিত্বসহ বিভিন্ন 'লোভনীয় অফার' দিয়ে ১৮-দলীয় জোটের নিবন্ধিত সংসদীয় দলগুলোকে সর্বদলীয় সরকারে নেওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে জোটের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপির বলয় থেকে বেরিয়ে আসারও অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে বেশি আসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও আসছে। বিএনপিকে একঘরে করে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নির্বাচন করে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনই এর লক্ষ্য। এ ছাড়া ১৮-দলীয় জোটে ভাঙন ধরিয়ে বিএনপিকে দুর্বল করতে চায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। বিএনপিতেও দ্বিধাবিভক্ত করার তৎপরতাও চলছে। তবে বসে নেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও। তারাও জাতীয় পার্টির একটি অংশসহ জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। নির্বাচনে গেলে সবাইকে যার যার প্রাপ্য অনুযায়ী আসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে বিএনপি। ১৮-দলীয় জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে এমন আভাস দিয়েছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাতে গুলশান কার্যালয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, 'আমাদের জোটের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করছে সরকার। লোভনীয় অফার দিয়ে তারা জোটে ভাঙন ধরাতে চায়। কিন্তু আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা এখন আন্দোলন করছি। সবাইকে যার যার প্রাপ্য অনুযায়ী আসন দিয়ে নির্বাচনে যাব। কাউকে ঠকানো হবে না। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন।' জানা যায়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না এলে অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচন করতে চায় সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে ১৮-দলীয় জোটের মধ্যে অন্তত ৮টি নিবন্ধিত দলকে সর্বদলীয় সরকারে নিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জোটের বাইরে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, গণফোরাম, বাসদ, তরীকত ফেডারেশনসহ জামায়াতবিরোধী কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে সরকার। বাইরে এসব দলের বক্তৃতা-বিবৃতিতে সর্বদলীয় সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচনে সর্বোচ্চ আসনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও দরকষাকষি চলছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, সরকারের রাজনৈতিক উইং ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে লোভনীয় অফার দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি যা দেবে তার চেয়ে বেশিসংখ্যক এমপি-মন্ত্রী দেওয়ারও আশ্বাস আসছে সরকারের পক্ষ থেকে। ১৮ দলের নিবন্ধিত ১১টি দলের মধ্যে দু-একটি বাদে প্রায় সব দলের কাছেই নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ৪২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১১টি। অবশ্য সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। সূত্র জানায়, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপিকে ১০টি আসনে নির্বাচনের সুযোগ, একজন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা নিয়োগের অফার দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিজেই এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সঙ্গে দেখা করে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবারও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সদ্য নিয়োগ পাওয়া দুই মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী এ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে মহাজোটে যাওয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি মঙ্গলবার রাতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন কর্নেল অলি আহমদ। পরে গতকাল রাতে তার দলের একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আগামী নির্বাচনের জন্য ১৫ জন এমপি প্রার্থীর তালিকাও তুলে দেয়।
বেগম জিয়া তাদের বলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না, আন্দোলন করে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সবাইকে যার যার প্রাপ্য অনুযায়ী আসন দেওয়া হবে। এতে আশ্বস্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তালিকা দিয়ে বেরিয়ে আসেন এলডিপি নেতারা। জানা গেছে, শুধু এলডিপিই নয়, জামায়াত, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি এবং এনডিপির সঙ্গেও যোগাযোগ করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের মাধ্যমে। তবে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকার শুধু জোটেই নয় বিএনপিতেও ভাঙন ধরাতে নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। জোটের অনেক নেতাকেই নানা প্রলোভন দেখিয়ে সর্বদলীয় সরকারে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি, জোট নেতারা সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই আসন ভাগাভাগি হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইববাহিম বীর প্রতীক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি। তিনি ১৮-দলীয় জোটেই আছেন বলে জানান। এলডিপির যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, তার দলকে সর্বদলীয় সরকারে যোগদানে নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তবে আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮-দলীয় জোটের ওপর আস্থাশীল। আশা করি, বিরোধীদলীয় নেতা যথাসময়ে এই আস্থার মর্যাদা দেবেন। বসে নেই বিএনপিও : প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও বসে নেই। মহাজোটের শরির দল জাতীয় পার্টির নাখোশ নেতা ও সাবেক এমপিদের সমন্বয়ে একটি অংশকে জোটে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় সরকারের বিরুদ্ধে থাকা জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের কথা হয়েছে। জাতীয় পার্টির ওইসব নেতা আরও কয়েক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চান। পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে দলের বড় একটি অংশকে নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটে চলে আসার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে। অন্যদিকে জোটের বাইরে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, গণফোরাম ছাড়াও অন্য দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।