ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ধূলোমাখা ব্লগ
নিজের বিবেক হলো সবচেয়ে বড় বিচারক। দেশের আলো বাতাসে বড় হলাম। দেশের প্রতিতো একটা দায়বদ্ধতা আছে। দেশের জন্য কিছু করা হয়নি।
কিন্তু সুন্দরভাবে ধন্যবাদতো অন্তত প্রকাশ করতে পারি।
আজ ইচ্ছে হলো এতোদিনের জমে থাকা ধন্যবাদগুলো প্রকাশ করে নিজের বিবেকের কাছে একটু পরিষ্কার হই।
পিকেটারঃ
একটা গাড়ী পুড়ালে ৫০০ টাকা করে আপনারা পান। দিনে যদি তিনখানা গাড়ী পুড়াতে পারেন তবে ১৫০০ টাকা হয়। মাসে ৪৫০০০ টাকা।
বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত হয়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে ওঠার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
কর্তব্য কাজে মারা যাওয়া পুলিশ কনস্টেবলঃনুন
নুন আনতে পান্তা ফুরোয় আপনার পরিবারের অবস্থা। ছেলেমেয়ে পরিবার পরিজন সবাই আপনার উপর খুবই বিরক্ত। ওরা আপনাকে আর বিরক্ত করবেনা। আপনাকেও আর ওদের যন্ত্রনা সহ্য করতে হবেনা।
এখন ওরাও সুখী, আপনিও সুখী। স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম একটি সুখী পরিবারইতো চাই। নিজে পুড়ে মরে এরকম একটি সুখী পরিবার তৈরীতে অবদান রাখায় আপনাকে ধন্যবাদ।
রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা দশ বছরের শিশু শান্ত
পরিবেশের ভারসাম্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য নাকি ২৫% বনভূমি দরকার।
সেখানে আমাদের দেশে ৯% শতাংশ বনভূমিও নেই। আর গাছপালা না থাকলে পাখি থাকবে কোত্থেকে। তাই সৌখিন পাখী শিকারীদের আজ বড় কষ্ট। শান্ত তুমি রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাগরিক শিকারীদের টার্গেট প্রাকটিস করার সুযোগ করে দেয়ায় তোমাকে ধন্যবাদ।
যাত্রীবাহি বাস পুরানো দলঃ
প্রচন্ডে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা।
এই ঠান্ডা যে কত ভয়াবহ তা আমার যারা উষ্ন কাপড়ে আবৃত হয়ে ঘরে বসে রাজা উজির মারি তাদের বোঝার সাধ্য নাই। কিন্তু উনারা শীতার্ত মানুষের এ কষ্টটুকু বুঝেছেন। শীতবস্ত্রহীন হাজার হাজার মানুষের এ শীত কষ্ট লাঘব করতে আপনারা যারা বাস পুড়িয়ে একটু উষন্তা দিচ্ছেন, তাদের অনেক ধন্যবাদ।
সম্মানীত সরকারী এমপি মহোদয়ঃ
তৃতীয় বিশ্বের খুব গরীব দেশ হিসাবেই বহির্বিশ্বে আমাদের পরিচিতি। প্রতি বছর ফোর্বস ম্যাগাজীনে যে ধনী মানুষের লিস্ট বানায়।
সেটা পড়ি আর হাহাকার করি। আহ! যদি নিজের দেশের কেউ থাকতো। পাঁচ বছরে আপনাদের এ্যভারেজ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ গুন বেড়েছে। আর কয়েট টার্ম যদি আপনারা এ আসনটি ধরে রাখতে পারেন আর জ্যামিতিক হারে সম্পদের পরিমাণ বাড়াতে পারেন, তবে ইনশাল্লাহ দরিদ্র দেশের বদনাম গুছে যাবে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের পাতা আপনাদের ছবিতে শোভিত হবে।
বিল গেটস হয়তো আপনাদের সম্পদের পরিমান দেখে লজ্জিত হবে। এ আনন্দ কোথায় রাখি। সম্মানিত সাংসদ মহোদয় সম্পদের ভান্ডার তৈরীর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। আপনাদের ধন্যবাদ।
র্যাবঃ
চারবছর পর পর অলিম্পিকের আসর বসে।
আমাদের দৌড় শুধুমাত্র মাঠে পতাকা হাতে মাঠ প্রদক্ষিণ পর্যন্তই। কোয়ালিফায়িং রাউন্ড থেকেই আমার টাটা বা বাই। কিন্তু মনে হয়, এবার আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। রাতের অন্ধকারেও আপনারা যে নিঁখুতভাবে নিশানা প্র্যাকটিস করে সফলতা লাভ করছেন। আশাকরি, আগামি অলিম্পিকের শুটিং ইভেন্টে আমরা সোনা নিয়েই ঘরে ফিরবো।
ঠিকঠাক প্রাকটিস চালিয়ে যান। র্যাবের নিখুঁত মানুষ শিকারী সদস্যবৃন্দ আপনাদের ধন্যবাদ।
সম্মানিত মন্ত্রীমহোদয়গণঃ
দেশে নাকি এখন টেলিভিশনের চেয়ে টেলিভিশনের চ্যানেল বেশী। কিন্তু একটাও কামের চ্যানেল নাই। বিনোদনের বড়ই অভাব।
একমাত্র ইত্যাদি আর কত টেনে নিয়ে যাবে। তাছাড়া স্টান্ডআপ কমেডি' যে বিশাল বড় রসের ভান্ডার তা এখনো দেশে প্রচলিত না। কিন্তু আপনার সেই দ্বার মুক্ত করে দিয়েছেন। শুধু আপনাদের কথা-বার্তা, আচার আচরণ নিয়ে ২৪ ঘন্টার একটা দারুন হাস্যরসের বিনোদন চ্যানেল হতে পারে। কেউ ঈদের নামাজকে জানাযার নামাজ বলছেন, কারো পায়জায়মার দড়ি খুলে যাচ্ছে, কেউ মিডিয়ার সামনে দাঁত কেলিয়ে দমকাচ্ছেন, কেউ মন্চে মন্চে বসে ঝিমুচ্ছেন, কেউ দিনরাত শুধু কালো বিড়াল ,কালো বিড়াল বলে নিজেই বিড়াল খ্যাতি লাভ করেছেন,কেউ শুন্য বাতাসে রিভলবার নিয়ে খেলছেন, কেউ পিট বাচাঁতে দৌড়াচ্ছেন,কেউ বোরখা পরে কোর্ট কাচারি করছেন, কেউ সারাক্ষণ রাবিশ রাবিশ বলে চেচাচ্ছেন ইত্যাদি আরো কতকি? দেশের মানুষকে হাজারো দুঃখের মাঝেও এমন নির্মল আনন্দ দেয়ায় আপনাদের ধন্যবাদ।
সরকারী দল/বিরোধী দলঃ
বাঙালীর বদনাম হলো এরা খুব অলস জাতি। শুধু খায় আর ঘুমায়। দেশের উন্নয়নে এই জাতি বিরাট বোঝা। তাছাড়া দিনদিন যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। মানুষের পাচঁটি মৌলিক চাহিদা পূরণে আপনাদের সূদর প্রসারী কাজ জাতি যুগযুগ ধরে মনে রাখবে।
এমনকি বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোও আপনাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। প্রতিদিন গড়ে নাকি শুধু জানামতে ৯ জন লোক মারা যাচ্ছে। যেটা হলো অস্বাভাবিক মৃত্যু। এবার হিসাব করে দেখেন-দিনে ৯ জন হলে মাসে ২৭০ জন, বছরে ৩২৪০জন। চিন্তা করে দেখেন সংখ্যাটি আরেকটু বাড়ানো যায় কিনা।
এই মানে দিনে ৯ জনের বদলে ৯০ জন আরকি। আশাকরি আপনারা একটু মনোযোগ দিলেই পারবেন। যদি পারেন, তবে খুব সহজেই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা , চিকিৎসা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবেনা। মানুষই নাই, চিন্তা করবেন কীসের। শুধু কিছু কিছু এলিট শ্রেণী রাখবেন।
যাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়ালিখার পাশ দিবে। এই পাশ দিতে যে সময় লাগবে,সে সময়ে যদি লোকসংখ্যা আবার বেড়ে যায়, তবে উনারা দেশে ফিরে এসে আবার ব্যালেন্স করে নিবেন। দেশের জনসংখ্যা কমানোর এরকম একটি সফল কাজের জন্য আপনাদের দু দলকেই ধন্যবাদ। কারণ, আজকের যে বিরোধী দল কাল সে সরকারী দল।
বিব্রতবোধকারী দলঃ
আপনারা হলেন শিষ্টাচারের বিশাল নিদর্শণ।
একটা সময় ছিলো যখন সভ্যতা, ভব্যতা, আদব কায়দা, লাজ লেহাজ ছিলো। এখন কার আগে কে বলে। কে কারে দমক দেয়। মুখ দিয়ে কথার খই ফুটে। পোলা-মাইয়া এখন প্রেমিক প্রেমিকার কপালে চুম্বন দিয়ে পরিবারকে প্রগতিশীল করে তোলে।
চারদিকে বয়ফ্রেন্ড , গার্লফ্রেন্ডের বিশাল হাটবাজার। অমুকের সাথে তমুক এনগেজ্ড। বিশাল ঘোষণা। আদব লেহাজ যে একটা জিনিস ছিলো তা এখন আর দূরবীন দিয়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ অবস্থায় আপনারা যে কোনো কিছুতেই লাজুক হাসি দিয়ে মুখ লুকিয়ে বলেন-এ ব্যপারে আমি বিব্রতবোধ করছি।
আহ! প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো। অন্তত এই ভেবে শান্তনা এখনো কিছু মানুষ আছেন যারা ঠাস করে সব বলে ফেলেন না, মাঝে মাঝে বলতে বিব্রতবোধ করেন। জনাব, আপনাদের ধন্যবাদ।
আমজনতা
সক্রেটিস একবার বড় দুখি হয়ে নাকি বলেছিলেন, ভেড়ার পালের একটা ভেড়া হলেই ভালো হতো। তাইলে আর এতো কিছু চিন্তা করতে হতোনা।
ভেড়ার পালও তো খেয়ে বেঁচে থাকে। আর যখন ছুটে কিছু না বুঝেই না জেনেই একদিকে ছুটে। রাখাল যে দিকে নিয়ে যায় ভেড়াদল সেদিকেই ছুটে যায়। তারপর খোয়াড়ে আটক করে রাখে। কিন্তু এই ভেড়াদল কেন যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কোন খোয়াড়েই আটকা পড়বে তাও চিন্তা করেনা।
মহান সক্রেটিসের চিন্তাকে নিজের জীবনে রুপ দেয়া আমজনতা ভেড়ারদল আপনাদেরও ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।