গুলশানে নিজের বাসভবনের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, 'আপনারা মুখ বন্ধ করুন। দেশ কোথায়? গোপালী? এরা সবাই গোপালী। গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে। এই নামই থাকবে না। আর যারা এসব করছেন, তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে।
কত আলেমকে হত্যা করেছেন। কত বিডিআর অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কোথায় ছিল শেখ হাসিনা। ' গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে গুলশান এভিনিউয়ে ৭৯ নম্বর সড়কে 'ফিরোজা' নামের ওই বাসভবনের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৪টার দিকে বাসায় চলে যান তিনি। ধাক্কাধাক্কিতে বিরোধীদলীয় নেতা এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, আপনার মেয়েরা (নারী পুলিশ) ঝগড়া করছে কেন? এ সময় নারী পুলিশদের ধমক দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মেয়েরা চুপ কর।
কত দিন ধরে চাকরি কর। বেয়াদব কোথাকার। এক পুলিশকে ধমক দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের অফিসার কোথায়? উনি এলে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবেন। বুঝেননি, বাংলা কথা বলছি। অন্য ভাষায় কথা বলিনি।
দেশকে ভালোবাসলে সার্বভৌমত্ব রক্ষার এ কর্মসূচিতে বাধা দিতেন না। গোলামি বাদ দেন। গোলামি ও দালালি করবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আগামীকালও মার্চ ফর ডেমোক্রেসি চলবে। আমরা দেশ ও দেশের মানুষ বাঁচাতে আন্দোলন করছি। আর আপনারা ঘরে ঢুকে মানুষকে গুলি করে হত্যা করছেন। মনে রাখবেন, আজ যারা অত্যাচার নির্যাতন করছেন তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কান্না করতে করতে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। বিডিআরের ঘটনায় নিহত অফিসারদের পরিবারের কান্না, নিহত আলেম ও এতিমদের কান্না, অসহায়দের কান্না বৃথা যাবে না।
আপনাদেরও একদিন এ জন্য কাঁদতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও দেশ রক্ষা করবেন, না গোলামি করবেন? কোনো অন্যায় নির্দেশ তামিল করবেন না। চাকরি করেন ভালো কথা, কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। তা না হলে এর জন্য একদিন জবাবদিহি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আজ আমার বাড়ির সামনে এত ফোর্স এত প্রতিবন্ধকতা, এই ফোর্স তখন কোথায় ছিল, যখন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে জীবন দিতে হলো।
তখন কেন তাদের রক্ষায় এই ফোর্স পাঠালেন না? সেই ঘটনায় শেখ হাসিনা জড়িত ছিলেন, তাই ফোর্স পাঠাননি। পৃথিবীর কোনো স্বৈরসরকারই টিকে থাকতে পারেনি। আপনিও আজীবন র্যাব-পুলিশের ওপর ভর করে টিকে থাকতে পারবেন না। আপনার পতন হবেই। বেগম জিয়া বলেন, সাহস থাকলে এসব বাদ দিয়ে জনগণকে নিয়ে এরকম একটি পাল্টা কর্মসূচি দিতেন।
তখন দেখা যেত- কেমন পারেন। আওয়ামী লীগের কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিসি, এসপি দিয়ে তাদের সমাবেশে লোক জড়ো করতে হয়। আজকে পুলিশি বাধায় সমাবেশ করতে পারিনি, কাল বের হব, কালকে না পারলে পরশু বের হব। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে এটা কী নির্বাচন।
জনগণ সরকারকে ধিক্কার দিয়েছেন, আমরাও ধিক্কার জানাই। একইসঙ্গে তিনি সাংবাদিক ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন।
কুশপুত্তলিকা দাহ : গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গোপালগঞ্জ জেলার নাম মুছে দেওয়া হবে, বেগম খালেদা জিয়ার এমন ঘোষণার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও খালেদা জিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর গোপালগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এসব কর্মসূচি পালিত হয়। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
পরে কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবদুল হালিম, উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, পৌর মেয়র ইলিয়াস হোসেন সরদার প্রমুখ। জেলা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় চৌরঙ্গীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম, তানজিমুর রহমান, মিকাইল মুন্সি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলা সদরেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।