জনগণের সেবার জন্য সরকার। জনসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েই প্রতিটি সরকার নির্বাচিত হয়। মানুষের ভোগান্তি কিসে কমে এটিই সভ্য দুনিয়ার প্রতিটি সরকার তাদের করণীয় কর্তব্য বলে বেছে নেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, নিজেদের সভ্য দুনিয়ার অংশ হিসেবে ভাবার ক্ষেত্রে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কার্পণ্য রয়েছে। এ কার্পণ্যের বিষয়টি জ্বলজ্জমান হয়ে উঠেছে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলার ক্ষেত্রে। বিরোধীদলীয় কর্মসূচিতে বাদ সাধার জন্য সরকারি উদ্যোগে সারা দেশ থেকে রাজধানীকে কার্যত গত তিন দিন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ঢাকার সঙ্গে বিমান ছাড়া রাজধানীর বাইরের সব ধরনের যোগাযোগ। এমনকি রাজধানীতেও গণপরিবহন বিশেষত বাস বন্ধ করে নগরবাসীকে জিম্মি করা হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা স্তব্ধ করতে জনগণকে জিম্মি করার যে চেষ্টা চলেছে তা কতটা রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত তা প্রশ্নের ঊধের্্ব নয়। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও বিরোধী দলের আন্দোলনের নানা বিচ্যুতি রয়েছে এবং তার দায় তারা অস্বীকার করতে পারেন না। আন্দোলনের নামে ককটেল এবং পেট্রলবোমার ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধান নাগরিকদের আন্দোলন-সংগ্রামের অধিকার দিলেও সন্ত্রাস সৃষ্টির অধিকার কাউকে দেয়নি। তবে এসব নিয়ন্ত্রণের তথা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার দায় সরকারের এবং সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতাও আকাশছোঁয়া। বিরোধী দলের ভূমিকার ব্যাপারে সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। কর্মসূচি পালনকারীরা আইনশৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটালে কেবল সে ক্ষেত্রেই তাদের বিরত রাখার পদক্ষেপ নেওয়া যেত। কিন্তু বিরোধী দলের ঘোষিত কর্মসূচি ঠেকাতে রাজধানীর দেড় কোটি মানুষসহ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যেভাবে জিম্মি করা হয়েছে তা শুধু অন্যায়ই নয়, নিন্দনীয়। রাজধানীতে যানবাহনের অভাবে কর্মজীবীদের কর্মস্থলে পেঁৗছতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। শনিবার পুলিশ নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের অজুহাতে বিপুল পরিমাণ বাস রিকুইজিশন করায় বাস মালিকরা সে ভয়ে গতকাল কোনো বাসই রাস্তায় নামাননি। রাস্তায় প্রাইভেট কার চললেও গণপরিবহন না চলায় নিম্নবিত্ত লোকজনকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের লক্ষ্যস্থল হওয়ার এ অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত সরকার কেন নিল সে প্রশ্নও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে জনগণকে যেভাবে জিম্মি করা হচ্ছে তা তাদের গ্রহণযোগ্যতার জন্যে বিপজ্জনক হবে কিনা ভেবে দেখা উচিত।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।