নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিরতি চান না ব্রিটেন প্রবাসী, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের আত্দগোপনসহ চলমান আন্দোলনে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। জাতিসংঘের বিশেষ দূত তারানকোর বাংলাদেশ সফরের পর পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে তারেকের ফোনালাপ থেকে এ বিষয়গুলো জানা যায়। ইউটিউবের যঃঃঢ়://ুড়ঁঃঁনব/শজশথুনঈথগপম এই ভিডিও লিংকে ফোনালাপটি পাওয়া যায়।
কথোপকথনের প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোর বাংলাদেশ সফরের পরপরই তাদের মধ্যে এই ফোনালাপ হয়। পাঠকের সুবিধার্থে এই ফোনালাপ হুবহু তুলে ধরা হলো : শমসের মবিন চৌধুরী, সালামু আলাইকুম, তারেক।
তারেক রহমান, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
মবিন : আর আছি কীভাবে। দেশ যেভাবে আছে, আছি সেভাবে।
তারেক : ওবায়দুল কাদের দুই দিন আগে একটি কথা বলেছেন, খেয়াল করেছেন নাকি?
মবিন : খেয়াল করেছি, সমঝোতা হচ্ছে পর্দার আড়ালে। সমঝোতা হলে একটা একটা করে ছাড়া পেয়ে যেতে পারে।
তারেক : সমঝোতাটা কারা করছে?
মবিন : ওনারা নিজেরা নিজেরা সমঝোতা করছেন।
তারেক : আমাদের কারও সঙ্গে কথা বলছে, আপনি জানেন? এতে আপনিসহ আরও কয়েকজনের নাম জড়ানো হচ্ছে।
মবিন : আমাদের কারও সঙ্গে কথা বলছে না। আজকে তো আলমগীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে তারা মার্ডার চার্জ দিয়ে দিয়েছে।
তারেক : এটা তো তারা করবেই। তবে উনি এত লুকোচুরি (হাইডেন সিক) করছেন কেন? উনি তো রাজনীতিক, একজন রাজনৈতিক নেতা।
মবিন : কে?
তারেক : আলমগীর সাহেব।
মবিন : আমরা একটু পরে ম্যাডামের কাছে যাওয়ার জন্য বসে আছি। এ বিষয়ে কি তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছ?
তারেক : ওনার (খালেদা জিয়া) ওখানে কথা বলা অনেক সমস্যা আছে। ডিটেলস বলা মুশকিল। কিন্তু কথা হচ্ছে এ রকম লুকোচুরির ((হাইডেন সিক) প্রতিক্রিয়া তো খারাপই হচ্ছে।
মবিন : এটা তো ম্যাডামকে অনেকবার বলা হয়েছে।
তারেক : যদি পালিয়েই থাকবেন, আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিতে না পারবেন, কোনো কথাও বলতে পারবেন না, তাতে লাভ কিছু নয়, বরং খারাপই হচ্ছে। জেলার নেতারা মার খাচ্ছে। আর উনি পালিয়ে থাকছেন, তাতে লাভ কী হচ্ছে? এটার বেনিফিটটা কী হচ্ছে, বেনিফিট তো কিছু হচ্ছে না।
মবিন : এই প্রশ্নটা অনেকেই করছেন। বিষয়গুলো ম্যাডামকেও দু-একবার বলা হয়েছে। সবকিছু তো ম্যাডামের নির্দেশনাতেই হচ্ছে। আমি যতদূর বুঝি, এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছে। ম্যাডামের কথা হলো, এরা ধরা পড়ে গেলে কারা কাজ করবে, আমি কাদের দিয়ে কাজ করাব?
তারেক : উনি কি কাজ করছেন, কাজ করতে পারছেন, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন? কোনো জেলার সঙ্গেই তো কথা বলছেন না। কিছু হচ্ছে না, যোগাযোগ করছেন না। লাভ হচ্ছে কি। ওনাকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। কেউ ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। উনি যে চার্জে আছেন, সে জন্য উনি সিদ্ধান্ত দেবেন বা দিকনির্দেশনা দেবেন, সেটা তো হচ্ছে না। তাহলে এই লুকোচুরি কোনো কাজে আসছে?
তারেক : আপনার নামসহ বেশ কয়েকজনের ব্যাপারে একটি গুজব আছে, যেটি আমি আপনার সঙ্গে আলোচনার জন্য বলছি- বাইরের অতিথিরা এলে আন্দোলনে বিরতি দেওয়ার চিন্তা করছেন আপনারা?
শমসের : আমার মনে হয়, অতিথিদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এখন এ ধরনের চিন্তা করা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
তারেক : আপনি যদি আন্তরিকভাবে এই চিন্তা করে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় আপনি ঠিকই আছেন। বিরতি-টিরতি দেওয়ার বোধহয় আর কোনো সুযোগ নেই। আপনি অন্যরকম, অন্য কিছুতে গেলে, তাতে তারা একটি সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেলে, নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে যাবে। তাদের টেনে তুলতে পারবেন না। দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের ফেরানো যাবে না। পরিস্থিতিতে যে আসবে আসবে। কিন্তু এখন এটি অব্যাহত না রাখলে স্যাবোটাজ হয়ে যাবে।
শমসের : কোনো ধরনের বিরতিতে গেলে তারা হতাশ হয়ে যাবে, ডিমোরালাইজ হয়ে যাবে। বিরতি দেওয়ার কোনো লজিক নেই, কারণ নেই।
তারানকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সমাধান কী। আমি বলেছি যে, এ মুহূর্তে নির্বাচন সমাধান নয়। যদি নির্বাচনে বড় ধরনের বিরতি দিতে পারো, প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে তা করতে পারো, তাহলে হয়তো এটা কাজ করবে, না হয় কোনো কাজ করবে না।
তারেক : আপনি বিরতি দিয়ে কি করবেন। সমাধান তো একটাই- ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) অবশ্যই দাবি মানতে হবে। যদি নির্বাচনে বিরতিও দেয়, তাহলে কী হবে যদি তিনি থেকে যান।
মবিন : বিরতি বলতে জানুয়ারির ২০-২২ পর্যন্ত থাকুক। সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। তাহলে তো ৯০ দিন পাওয়া যাবে। তবে ৯০ দিনের পরও যদি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) থাকেন, তাহলে তো আর হলো না।
তারেক : না না, আপনি তত দিন যাবেন না। যদি তা-ই করেন, তাহলে আপনারা বড় ভুল করবেন। এরপর কিন্তু বেঁচে থাকা মুশকিল হবে। কিছু লোক ছাড়া অধিকাংশেরই বেঁচে থাকা মুশকিল হবে। যারা এটা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে, বহু মানুষের ক্ষতি হবে। তার দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে।
মবিন : ঠিক আছে, আমি সেভাবেই কথা বলব।
তারেক : দাবি যেটা, তা হলো এখনই পদত্যাগ করতে হবে এবং সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এটাকে দীর্ঘায়িত করলেই সুযোগ পেয়ে বসবে, ২৪ তারিখ পর্যন্ত সুযোগ দিলে অন্য কিছু করে ফেলবে।
মবিন : ঠিক আছে, সেভাবেই কথা বলব।
তারেক : আসসালামু আলাইকুম।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।