মিসরের রাজধানী কায়রোর আল ফাতাহ্ মসজিদে শেষ পর্যন্ত ঢুকেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার রাত থেকে মসজিদটি ঘেরাও করে রাখে তারা। নিরাপত্তা বাহিনী মসজিদে ঢোকার সময় কাঁদুনে গ্যাস ছুড়লে দম বন্ধ হয়ে এক মহিলা মারা যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। অভিযানের পর পরই মসজিদের ভেতর থেকে একজন মহিলা আলজাজিরা টেলিভিশনকে বলেন, কেউই এখানে নিরাপদ নয়, তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) মসজিদের ভেতরে গুলি করছে। টেলিফোনে সে সময় গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।
এদিকে, মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের ফেসবুক পাতায় জানিয়েছে, সংগঠনের আধ্যাত্দিক নেতা জেনারেল মুহাম্মদ বাদির ছেলে আম্মার বাদি মারা গেছেন। শুক্রবার কায়রোর রামসিস স্কয়ারে গুলিতে মারা যান ৩৮ বছর বয়সী আম্মার বাদি। প্রেসিডেন্ট মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর পরই সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। সেনা অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড। অন্যদিকে মিসরের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছেন। এদিকে মিসরের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে সমর্থন জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ। মিসরকে ধ্বংসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তিনি আরব দেশের নেতাদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে নিহতদের স্মরণে জেরুজালেমে বিক্ষোভ করেছে হামাস। গত কয়েক দিনে ব্যাপক গণহত্যার পর এই মসজিদের ভেতর মুরসির হাজারো সমর্থক আটকা পড়েন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এর মধ্যে সেনারা মুরসির বিক্ষোভরত সমর্থকদের মসজিদ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেননি তারা। অনেকে জানিয়েছেন, তারা নিরাপত্তার কারণে মসজিদ ছেড়ে দিতে রাজি নন। এর আগে, গতকাল নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় নিহত ২০ ব্যক্তির লাশ এ মসজিদে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির সমর্থক মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। এর পর থেকেই সংঘর্ষের কেন্দ্র রামসিস স্কয়ারের আল ফাতাহ্ মসজিদে আশ্রয় নিয়ে আছেন ব্রাদারহুড সদস্যরা। ৩ জুলাই সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে কায়রোর রাব্বা আল আদাবিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অপসারণের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ করতে থাকেন তার সমর্থক ব্রাদারহুডের সদস্যরা। এই প্রতিবাদ দমনে ২৭ জুলাই মসজিদ প্রাঙ্গণে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানে ৮০ জনেরও বেশি মুরসি সমর্থক নিহত হওয়ার পরও অবস্থান ছাড়েননি মুরসি সমর্থকরা। বরং এই ঘটনার পর থেকে আদাবিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণের পাশাপাশি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অন্য আরেকটি স্থানেও অবস্থান নিয়ে লাগাতার বিক্ষোভ চালাচ্ছেন তারা। এ দুটি স্থান থেকে তাদের সরাতে বুধবার অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে দুটি স্থানে অন্তত ৬৩৮ জন নিহত হন।
বুধবারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবারকে 'ক্ষোভ দিবস' ঘোষণা করে মুসলিম ব্রাদারহুড। ওইদিন জুমার নামাজের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দেয় ইসলামপন্থি সংগঠনটি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা দিয়ে কায়রো ও আশপাশে সান্ধ্য আইন জারি করে মিসরের অন্তর্বর্তী সরকার। জুমার নামাজের পর ব্রাদারহুডের হাজার হাজার সদস্য পথে নামলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সারা দেশে অন্তত ৮২ জন নিহত হন। আল ফাতাহ্ মসজিদের দখল ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে ব্রাদারহুড সদস্যদের রাজি করাতে শনিবার মসজিদটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা প্রবেশ করেন। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, মসজিদের বাইরে দাঙ্গা পুলিশ অবস্থান নিয়ে আছে। বিবিসির কায়রো প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেওয়া ব্রাদারহুড সদস্যরা মসজিদ থেকে বের হলে তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। মিসরের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল ইখওয়ানুল মুসলিমুন বলেছে, মসজিদ ঘেরাও করার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি গণহত্যার আশঙ্কা করছে তারা। বিবিসি, এএফপি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।