আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চেতনার বিষবৃক্ষ ও বেদনার্ত স্বদেশঃ একটি পর্যালোচনা



ভুমিকাঃ নীতির কথা কিন্তু নীতিহীন লোকেরাই বেশী বলে ,
এটা আমার পর্যবেক্ষণ । অপ্রাসঙ্গিক ভাবে যখন কেউ নিজের
কৃৎ কোনব কাজের সাফাই গায় , অথবা তাকে কোন বিষয়ে
কেউ কেউ দোষারোপ করে কিন্তু সেই প্রসঙ্গের
ধারে কাছে কেউ না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে ডিফেন্ড করতে
দেখলে - বুঝতে অসুবিধা হয়না ডাল মে কেয়া হেয় ।

চেতনার খেরোখাতাঃ গত দুইটা বছর চেতনা শব্দটি
শাসক দলের সব স্তরের লোকেরা এত বেশী পরিমাণ উচ্চারন করেছে
আর আমরা এই এত এত বার চেতনা শব্দটি শুনে শুনে ভেতরে
ভেতরে আত্মশ্লাঘায় ভুগেছি আমার এই চেতনা নেই কেন ?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা , স্বাধীনতার চেতনা এই বস্তুগুলা কি ?
যখন পরাধীন ছিলাম তখন যে অনুভুতিটা বেশী কষ্ট দেয় তা হল
নিজের ইচ্ছা মোতাবেক জীবন যাপন করার নিরুপায়তা । তখন
আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীন জীবন যাপন
করবেন । মনের এই Awareness টাই স্বাধীনতার চেতনা ।

এখন
যখন সরকার নিজ উদ্যোগে দেশ অবরোধ করে রাখে তখনও
এই চেতনা কাজ করে , তখন জনগণ সরকারকে গালমন্দ করে ।
আবার বিরোধীদল যখন হরতাল অবরোধ করে তখনও এই চেতনা
কাজ করতে থাকে । স্বাধীন দেশ নিয়া আপনার কি কি স্বপ্ন ছিল
কি অসুবিধায় , কার কার আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা অর্জিত হল ।
এই অর্জনের পর আপনি যে স্বপ্ন বুকে নিয়া যুদ্ধ করেছেন সেই
স্বপ্নের বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা হইল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা । যাদের
ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে এই যুদ্ধ জয় তাদের কথা , তাদের
স্বপ্নের কথা প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়া , দেশের সার্বভৌমত্ব
স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখা , বিশ্বের বুকে দেশের মান বাড়ানো এই সবই
হইল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ।

অনেক ক্ষণ পরে যেন দেহে
প্রানের সঞ্চার হল , আমারতো এই সব আছে , তাইলে নাই বলে
অপরাধবোধে ভুগলাম না খামাখা । না আপনি খামাখা অপরাধ
বোধে ভুগেন নাই , এই অপরাধ বোধ আপনার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া
হয়েছে । সহজ সরল চিন্তা চেতনায় একজন অপরাধপ্রবন নয় এমন
যে কোন নাগরিক অবচেতন মনেই এই বিমূর্ত চেতনা ধারণ করে ।
যে কাজ আমার দেশের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ক্ষতির কারন হয় সে কাজ
গুলো করা মানেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমাননা করা ।
এই বিচারে যিনি দেশের সেবা করবেন বলে রাজনীতিতে নেমে
জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রাপ্য সেবা দিলেন না , তবে
তিনি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপী , তিনি একজন চেতনা বিরোধী লোক ।


সেই তিনিই যখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেন্ডার, নিয়োগ,
বদলী বানিজ্য সহ , ঘুষ , দুর্নীতি , কালোবাজারী , চোরাকারবারী ,
অর্থের বিনিময়ে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ইত্যাদি করে অঢেল
বিত্ত সম্পদের বৈভবের মালিক হয়েছেন এবং যার বেশীর ভাগ টা
মানুষের কাছে গোপন রেখে অল্প যে টুকু প্রকাশ করেছেন তাতেই
লোকজনের চক্ষু চড়ক গাছ । তারপর এই সম্পদের উৎস জানতে
চাওয়ায় আপনি মৎস্য ব্যবসার কাহিনী শোনালেন , সাংবাদিকগন
সেই মৎস্য ব্যবসার সন্ধানে গিয়ে বেকুব হয়ে জানলেন যে আদতে
এই মাছব্যবসা বহু আগে থেকেই বন্ধ । তারপর যখন তাকে জানানো
হল আপনার মাছের খামারের তো সন্ধান পাওয়া গেলনা , তার
উত্তরে তিনি রেগে গিয়ে জানালেন এই দশ কোটি টাকার দুর্নীতি
করে কামাই করা লাগেনা , চাইলে শ শ কোটি টাকা অর্জন করতে
পারতেন কেননা তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ছিলেন ।
এখন আপনি নিজেই ভাবুন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে
তিনি শুধু বরখেলাপ ই করেন নাই , সেই চেতনার বিরোধীতা
কোন মাত্রায় কোন প্রকারে করেছেন , লাজ শরম তো নাই ই
উপরন্তু তিনিই কথায় কথায় এরে মার ওরে ধর তার বিচার
কর ইত্যাদি বলে বলে চেতনার সোল এজেন্সির মালিক বোনে যান ।
তাজ্জব ব্যাপার তাই না , যখন বর্ডার কিলিং হয় , ফেলানীরা
তারকাটায় নিথর হয়ে ঝুলতে থাকে তখন এই এই চেতনার
সার্বভৌমত্ব অংশটি অসহায়ের মত ধর্ষিত হলেও আপনি জী
হুজুর জী হুজুর বলে স্পিকটি নট যখন তখন এই চেতনার
বাস্তবিক অবমাননা হয় ।

ফেলাসি হল আপনি নিজে যে অপরাধ
উঠতে বসতে ২৪ ঘন্টা করতেছেন সেই আপনার উপর অর্ধশতক
বছরের আগের একই অপরাধের বিচার করার ভার অর্পিত ।

শাহবাগের চেতনা বনাম আম জনতার চেতনাঃ এখন এই আমাদের
অভ্যন্তরের বাই ডিফল্ট চেতনার সাথে শাহবাগের চেতনার পার্থক্য
টা কোথায় ? শাহবাগের চেতনা নিয়াআমার কোন এলার্জি নাই ,
কিন্তু চেতনার সোল এজেন্টদের, নীতি টিতি কিছু আছে বলেতো মনে
হয়না । উঁহু , তারাব এক্সট্যাসি খাইলো না ব্যাকারডি খাইল ,না
গার্লফ্রেন্ড নিয়া টাইম পাস করল - এইসব জিনিসদিয়া আমি
নৈতিকতার বিচার করিনা । আইডিওলজিক্যাল নীতিরকথা ,
যা তারা সর্বক্ষণ জপতেছে , যেকোন অন্যায়কে সুরক্ষা দিতে ঢাল
হিসেবে ব্যবহার করতেছে । একজন মানুষ হিসেবে যতটূকু যৌক্তিকতা
থাকলে সমাজ নিয়াভাবতে পারে , কোনক্রিটিক্যাল ইস্যুতে মতামত
দিতে পারে ,ততটুকু নিশ্চয়ইচেতনাধারীদের আছে ।

এবং সেই
যুক্তির জায়গাটা পরিষ্কার থাকলে আপনার দুইটা কথা শুনতে আমি
আগ্রহী হব । যদি মনে হয় যে যুক্তি হাফ হার্টেড যেটুকু পক্ষে থাকে
সেটুকু নেন বাকীটা চেপে যান , হজম করে ফেলেন , পাত্তা দেন না , বা
অপযুক্তির আশ্রয় নেন বা ত্যানা পেচান , তখন আপনাকে
আর যুক্তিশীল ভাবা সম্ভব হয়না । আপনার আইডিওলজির
মূল্যমানও আপনার কারনে কমতে থাকে । ফলে আপনার
চেতনা আর আইডিওলজী আড়লে মুখে যা বলতেছেন তা
থেকে ভিন্ন কিছুর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় । আমি আপনাকে
খুব বড় , গুরুগম্ভীর , তাত্ত্বিক, বা ঐতিহাসিক কোন বিষয় নিয়া
টক শোর বাচালতা করবনা ।

আপনি যদি নিজেকে সত্যি ই
চেতনার কথা যা বলেন তা ভেতরে লালন করেন , এর ভিত্তিতেই
মনোঃজাগতিক , সামাজিক, রাজনৈতিক , দার্শনিক ইলিম্যান্ট
সেট করে অর্থপূর্ণ আদর্শিক জীবন যাপন করেন তাহলে
আপনার চেতনায় আমার সমর্থন না থাকলেও তাকে আমি
সম্মান করব , কোন অবস্থাতেই তার ব্যতিক্রম হবেনা ।
আমার মত মানুষের আমার মাপে করা ওয়াদা , এক জবান ।
আমি জানি মানুষের সাথে সম্পর্কের টাই বা বন্ড সবচেয়ে জোরালো
হয় আদর্শের কারনেই । ব্যক্তি মুখ্য না মুখ্য তার আদর্শ , তার
ভাবনা, সংবেদনশীলতা – যার ভেতর দিয়ে আপনি কেমন সমাজ
কেমন জীবনাচরণ প্রত্যাশা করেন তা বোঝা যায় । কোন ব্যক্তির
বছরের পর বছর লালন করা জীবন দর্শন হুট করে বদলে যাবেনা ,
বা যদি বাস্তবিক ই বদলে যায় তবে ধরে নিতে হবে পূর্বের দর্শন
যেটা সে নিজের বলে দাবী করেছিল , সে দর্শনে সে বিশ্বস্ত ছিলনা ।


এরকম ব্যক্তিকে নিয়ে আইডিওলজীর জ্ঞান-দর্শনের আলাপ অবান্তর ।
কোন গোত্র ত্যাগ করলে সঙ্গে সঙ্গে মানুষটি আমুল বদলে যায়না ,
সম্ভব না । সেই গোত্রের নিয়মকানুন , প্রথা , অভ্যাস, ভাষা ,মুল্যবোধও
অটুট থাকে । অর্থাৎ যিনি আদর্শ বা দর্শন মনে প্রানে বিশ্বাস করেন
দীর্ঘ সময় সে অনুযায়ী চর্চা করেন তবে ব্যক্তি গোত্রচ্যুত হলেই
আদর্শ চ্যুত হয়ে যান না রাতারাতি । যদি উপরের সব কথা যৌক্তিক
হয় তাহলে দেখা যায় জামাত শিবিরের যে ই যে নেতা কর্মী বা
সমর্থক ইসলামী ধ্যান ধারনা , খেলাফতের স্বপ্ন ও ইমানের দাবীর
প্রেক্ষিতে রাজনীতি করে এসেছে সে হুট করে পার্টি চেঞ্জ করে
আওয়ামী লিগে যোগ দিল , আপনি তাকে মিষ্টি দিয়া ফুল দিয়া
বরনই শুধু করলেন না , তাকে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্যে
একটা আসনের প্রার্থীও বানাইয়া দিলেন ।

ও মোর খোদা হ্যার বাদেও
আপনার লগে চেতনা নিয়া কথাবার্তা কমু ? মাপ চাই দোয়াও ।

চেতনার আড়ালের অপরাধের সাতকাহনঃ ক্ষমতাসীনদের বলে বলে ফেনা
তুলে ফেলা যুদ্ধপরাধের বিচার , মুক্তি যুদ্ধের চেতনা , রাজাকারদের
রাজনৈতিক অধিকার রদ করা নিয়ে । সেই সাথে আজকের জনগণ
কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়া নির্বাচন , বিরোধীজোটের উপর অত্যাচার
নির্যাতন খুন গুম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে দিয়ে তালিকা করে চিরতরে
সরিয়ে দেয়া্‌ , এই চরম পন্থার প্রতিবাদে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা দমনের নামে
খুনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া , বিরোধীদলের কর্মী সমর্থকদের বাড়ী বাড়ী
গিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর নির্যাতন ভাংচুর লুটপাট চালানো,
দলীয় লোক সমেত সরকারী যৌথ বাহিনীর অভিযান কারো বাড়ী ঢুকে
তাকে পরিবারের সব সদস্যদের সামনে থেকে ছাদে তুলে ফেলে দেয়া
তারপর নিচে নেমে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা , (আইন রক্ষক দের
এমন বর্বরতা আমরা গত ৪০ বছরে দেখিনি , তারা যে সব ধরনের
সুরক্ষা প্রাপ্ত সেটা বুঝতে বাকী থাকেনা) এসব নিষ্পেষণ ও আতংক
সৃষ্টিকারী পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ যোগ সুত্রটা কোথায় ?

গত এক বছরে যুদ্ধপরাধীদের বিচার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার
সেলফ মেইড ক্রাইসিস তৈরি করে , যার সুচনা হয় সংখ্যা গরিষ্ঠতার
জোরে কেয়ারটেকার পদ্ধতি বাতিল থেকে ,সংবিধান রক্ষার বাদ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে
যে ব্যাপক নিষ্ঠুরতা এই আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে তা গনতান্ত্রিক ভাবে
নির্বাচিত কোন সরকার করেছে এমন ইতিহাস এই ভুখন্ডেই নয় পৃথিবীর
ইতিহাসে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে নিজ
দেশের মানুষের উপর ঠাণ্ডা মাথায় জেনে শুনে অন্যায় ভাবে এমন
অত্যাচারের খড়গ চালানো সম্ভব না , অন্ততঃ এ যুগে সম্ভব নয় ।
এই মহা কাব্যিক নিষ্পেষণের মাত্রা , বিস্তার , গভীরতা , শ্রেনীবিন্যাস ,
এবং বিচিত্রতা অনেক গবেষণা তদন্ত ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ।


দেশের ইতিহাসে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ছাড়া এতো লোকের মৃত্যু হয়নি যত হয়েছে
এই ২০১৩ সালে। গত এক মাসে প্রায় ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে ।
সরকার স্রেফ একটা খুনীর আচরন করে গেছে । ৫ বছরে সরকারের দায়িত্ব
প্রাপ্ত এম পি মন্ত্রী থেকে সর্বস্তরের নেতাদের বিত্ত বৈভবের প্রকাশ যোগ্য
অংশটি দেখলেই তাদের দুর্নিতির ভয়াবহ মাত্রাটা বেশ টের পাওয়া যায় ।
একের পর এক জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে দলের লোকের সুরক্ষা করে
যাওয়াই যেন তাদের কাজ ছিল , ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কারীদের বহু কায়ক্লেশে
জমানো অর্থ নির্বিঘ্নে লুটে নিলতো সরকারের লোকেরাই , কোন প্রতিরোধ
নেই বিচার নেই , স্রেফ বাহানা করে লাখ লাখ মানুষকে নিঃস করে দেওয়া
কেমন শাসনের পর্যায়ে পড়ে জানিনা ।

এতো এতো অপকর্ম আছে যেগুলো
ঢেকে রাখতে হলে এমন একটা বিষয় সামনে নিয়ে আসতে হবে যেটা
বিতর্কিত বহু দিনের অমিমাংসীত , যা তরুণ প্রজন্মের আবেগকে নাড়িয়ে
দিতে সক্ষম যেটা দিয়ে বিরোধীদলের বৈধ দাবীকেও যুদ্ধপরাধী সংশ্লিষ্টতার
অজুহাতে মিনমিনে আবদারে পরিণত করা যাবে । একমাত্র বাংলাদেশের
স্বাধীনতার বিরোধীতা এবং সেই সময়ে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের
সংশ্লিসটতা এনে জামায়াতে ইসলামকে প্রস্নবিদ্ধ করার মধ্যেই সব কিছুর
রিমেডি নিহিত আছে । ক্ষমতার তিন বছর পর আওয়ামী লীগ ছক কষে
এগোতে থাকে , সময় মাত্র দুই বছর , তিন বছরের করে ফেলা দুর্নীতি
আর রয়ে যাওয়া দুই বছরের সবটুকু মধু চেটেপুটে খেতে এমন একটা
লিকপ্রুফ সিস্টেমের প্রয়োজন ছিল যাতে করে যুদ্ধপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার
ডামাডোলে ক্ষমতার শেষ সময়টা আড়ালে রাখা আর তত্ত্বাবধায়ক সিস্টেম
বাতিল করে বিরোধীদলকে এর দাবীতে আন্দোলনে ব্যাস্ত রাখা । কিন্তু ওই
যে তিন বছর পর এই চিন্তাটা মাথায় আসা য় কম সময়ের মধ্যে সব কাজ
সম্পন্ন করার তাগাদা থেকে মুলত তাদের সব বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে দেখা যায় ।
স্কাইপি কেলেংকারীর পরও প্রশ্নবিদ্ধ আদালত ও দলীয় বিচারকদের বহাল
রেখে সারা দুনিয়ার কাছে বিচার প্রক্রিয়ার নেংটো চেহারা বের হয়ে যেতে
দেখেও কোন সংস্কারের রাস্তায় কেন হাটেনি সরকার? এর উত্তর ও সেই
সময় স্বল্পতা ।

বিচারের রায়ের আগেই আদালত নিয়ে প্রশ্ন থাকায় রায় নিয়ে
ভাবার সুযোগ কোথায় ? যখন বোঝা গেল বিচার একটা প্রহসন তখন রায়ের
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হবে – এটা অনুমিত ব্যাপার । সরকার এই প্রতিক্রিয়া জনিত
আচরণ কে আবার তাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট বলে প্রচার করে আদালত রিফর্মের
মত জরুরী কাজ ধামাচাপা দিয়েছে । তারপর শুরু হল বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে
তালবাহানা । কোন হোম ওয়ার্ক ছাড়া অর্ধশতক আগে সংঘটিত অপরাধের
ট্রায়াল আন্তর্জাতিক নাম দিয়ে চালালেই বিশ্ব মেনে নেবে ? এবার আসুন কাদের
মোল্লার রায়ের প্রশ্নটি । রায় সংশোধন করে মৃত্যুদন্ড দেবার জন্যে যদি আইন
বদলাতে হয় , তাও অল্পবয়েসী ছেলেছোকরাদের আবদারের প্রেক্ষিতে !! তবে
আর বিচার থাকল কোথায় ? এটা নিকৃষ্ট ভাবে মঞ্চস্থ নিষ্ঠুর নাটক ছাড়া কিছু
মনে হয়নি , দেশে – বিদেশে কোথাও ।

এই রায়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল কেন
এত প্রতিক্রিয়া দেখালো – এই প্রশ্নটির সুরাহা করতে পারলে নির্বাচন ও কাদের
মোল্লার ফাঁসি নিয়ে এতো চাপের মুখে সরকার কে পড়তে হতোনা । সময় বেঁধে
দিয়ে বিচার করতে বলা ( দ্রুতবিচার আদালতের মত ) মানে হল বিচারকের
কাজের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যহত করা । সবাই যে সব অভিযোগ গুলো বার বার
করে করেছে , আওয়ামীলীগ গোয়ারের মত সব অস্বীকার করে গেছে , আর
বিরুদ্ধ বাদীদের সকলকে জামায়াত শিবির বলে অযৌক্তিক ভাবে গালিগালাজ
করে মুলতঃ জামায়াতের প্রতি সহানুভুতিশীল হতে সাহায্য করেছে । তারপর রায়
কার্যকর করার আগে রিভিউ করতে না দিয়ে ফাঁসির আয়োজন করে ফেলা ।
আবার নামকা ওয়াস্তে রিভিউর নাটক মঞ্চস্থ করা ১৪ ডিসেম্বরের আগে রায়
কার্যকর করা , এসব ঘড়ি ধরা প্রিয়েম্পটিভ ডিসিশানগুলো খুব সহজে কাজে
পরিণত করা কোন যৌক্তিক উপায়ে কারো পক্ষেই সম্ভব ছিলনা ।

গত দুই বছর
আওয়ামীলীগ সরকার ও দল হিসেবে যত অপরাধ , অন্যায় , অমানবিক ,
অযৌক্তিক , অসাংবিধানিক কাজ করেছে তা বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশ গুলোর
পক্ষেও সম্ভব না । ইরাক আক্রমন করার জন্যে “ উইপন অফ মাস ডেস্ট্রাকশান “
নামক ধোয়া তুলে বুশকে যথেষ্ট আভ্যন্তরীন সমালোচনা সইতে হয়েছে । সেরকম
বিরোধী জোটকে দুর্বল করতে , দেশবাসীর দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিজেদের
লুটপাট হালাল করতে ও ক্ষমতা না ছাড়তে বদ্ধ পরিকর ছিল । আর এ পরিকল্পনা
বাস্তবায়নে যত গোজামিল , তাড়াহুড়ো , চোখ কান নাক বুজে , অযৌক্তিক ,
অন্যায়, দলীয়করন, নিষ্পেষণ , গনতান্ত্রিক অধিকার হরণ সহ যা যা করতে
হয়েছে সব তারা করেছে নির্দ্বিধায় । বিরোধীদলের সাথে সরকার যে আচরন করেছে ,
বিগত দিনে তার কোন নজির নেই ।

কোন সমাবেশ , মিছিল , মিটিং , লং মার্চ ,
মানব বন্ধন এসব শান্তিপূর্ণ গনতান্ত্রিক পন্থাগুলো বন্ধ করে দিয়ে বিরোধীদলকে
সহিংস হতে বাধ্য করেছে , আবার সহিংসতা দেখালে গনতান্ত্রিক আচরনের
সবক দিয়েছে । দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সরকারের কিচ্ছু আসে যায়না , মানুষ মরছে ,
পুলিশ মরছে সব ঘটনাকে কিভাবে পুঁজি করে বিরোধীদের উপর দায় চাপানো যায়
এই ছিল কৌশল । পৃথিবীর কোন দেশ বিরোধীদলের গনতান্ত্রিক কর্মসূচী বানচাল
করতে পুরোদেশ অচল করে দেয় ? আমরা শুনিনি, বরং আমি অভিভাবক আমার
অধীনে বিরোধীদলের কর্মসূচী সফল হওয়া আমার দায়িত্ব , জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা
থাকলে আচরন এবং মাইন্ডসেট এরকম থাকার কথা। কিসের কি ? গনতান্ত্রিক
আচরনের বিশ্বরেকর্ড সরকারের সব বাহিনী নিয়োগ করে জন গনকে অবরুদ্ধ রাখা,
টিভি চ্যানেল , সংবাদপত্র কোন কারণ ছড়া বন্ধ করে দেয়া । আর এসবের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করলে যুদ্ধপরাধের বিচার বানচালের অভিযোগ আনা , এসব শঠতা ,
কুটিলতা সহ এমন কোন অসদুপায় নেই যা অবলম্বন করা হয়নি ।

চেতনা
ধারীদের কাছে প্রশ্ন – সরকার যুদ্ধপরাধের বিচার না করে মানবতা বিরোধী
অপরাধের বিচার করছে কিন্তু করছে যুদ্ধপরাধের বিচার বানচালের অভিযোগ –
কাহিনী কি ? ৯৫ জন অভিযুক্ত পাকিস্তানি , প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই ,অন্যান্য মুসলীম
লিগার, পাকিস্তানী সরকারের দালাল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঃ খাঃ র বিচার না করলে
আপনাদের চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়না কেন ? সাতকানিয়া থেকে নির্বাচিত আপনাদের
প্রার্থী রেজা নদভী গোলাম আজমের শিষ্য জামাতের পেট্রনাইজার , তো তাকে
আত্তীকরন করলে আপনাদের চেতনার কোন আপত্তি থাকে কিনা ? একদিকে
বিচার অন্য দিকে মার্কিন রাষ্ট্র দুতের বাসায় জামায়াত নেতাদের সাথে সমঝোতার
চেষ্টা – এই ব্যবস্থায় আদালত ও আপনাদের চেতনা দুটোরই ফ্লেক্সিবিলিটির কথা
আমাদের জানায় , জামাত এই শর্তে রাজীতো আদালত এই আদেশ দেবে আর
শাহবাগের ছেলেপুলেরা এই ইস্যুতে চুপ বা সরব থাকবে । রাষ্ট্র ডাকাতের মত
আচরণ করছে , মুক্তিপন আদায়ের উদ্দেশ্যে গনজাগরন মঞ্চ আর আদালতকে
ব্যবহার করছে , এই বিসয়টিতে আপনাদের চেতনার বক্তব্য কি ? আপনাদের
বিবেক সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমান ভাবে সরব থাকবে এটা যুক্তিশীল মানুষের
আচরণ – কিন্তু আওয়ামিলিগের অব্যাহত লুটপাট দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনাদের
টু শব্দটি নেই কেন ? যার অন্তর দেশ বিরোধীদের বিচার করার জন্যে এত
রোরুদ্ধমান , এতো পরিশুদ্ধ চেতনা যারা ধারণ করে তাদের পক্ষে এতো দুরাচারী
হওয়া সম্ভব ? নাকি প্রশ্নটা এমন হওয়া উচিৎ এই দুর্বৃত্ত , লুটেরা , চোর , অনাচারী ,
শঠ , চরিত্র হীনেরা যখন দেশপ্রেম স্বাধীনতার চেতনা , যুদ্ধপরাধের বিচারের কথা
বলে তখন আপনার চেতনার কি কোন অবমাননা হয়না ? এরকম শ শ প্রশ্ন পাশ
কাটিয়ে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে দেশ বেঁচে দেয়া লাগলে বেঁচে দিতে কার্পণ্য
করবেনা যে দল তার দালালী করতে আপনার চেতনা কি আহত হয়না , আপত্তি করেনা ?
এসব করতে হলে সরকার আর গনতান্ত্রিক থাকেনা , দল আর রাজনৈতিক থাকেনা ,
দল আর দেশ আলাদা সত্ত্বা থাকেনা , আর সব কিছু একজনের মাথা থেকে না এলে
সিঙ্ক্রোনাইজড থাকেনা । কারণ একসাথে এতগুলো মাথার বিকারগ্রস্ত হওয়া কোন
অবস্থাতেই সম্ভব না ।
জনগণ কে শিশুর মগজধারী ভেবে লামছাম বুঝিয়ে ভেবেছেন ছক কষে রাখা
সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ফেলবেন রাষ্ট্রযন্ত্রের সব উপাদান গুলোকে নষ্ট করে ,
ব্যবহার করে , আর জনগণ চেতনার লেবেনচূষ মুখে ভরে হাততালি দেবে ? কোন
দুনিয়ায় থাকেন আপনারা ? জানতে খুব ইচ্ছে করে । নসিমনে করে আমাদের চাঁদের
দেশে নিয়ে যাবার স্বপ্ন ৫০০ বছর আগে দেখালেও লোকজন ভ্রু কুঁচকে তাকাতো ,
আর এটা তো ডিজিটাল বাংলাদেশ ।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।