ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের।
যখন দুটি পক্ষ এক ও অভিন্ন লক্ষ্য স্থির করতে সক্ষম হয়। কেবল তখনই শুধুমাত্র তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা সম্ভব এবং উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে একটি স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াও সম্ভব।
কিন্তু লক্ষ্য যখন ভিন্নতর হয় তখন আলোচনা হয়ে যায় লৌকিকতা। যা সমাধান নয় বিভ্রান্তিই তৈরি করে মাত্র।
বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতেই চাইত তাহলে তারা সরকার যত চালাকিই করুক না কেন প্রাপ্ত সুযোগগুলি কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে পারত। বিএনপি নেত্রী চাইলেই পারতেন প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপকে স্বাগত জানিয়ে আলোচনায় বসতে, তিনি চাইলেই পারতেন সরকারের আন্দোলন প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার আহ্বানে সারা দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করে আলোচনায় বসতে। তিনি চাইলেই পারতেন তারানকোর হাতে একটি সুনির্দিষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য প্রস্তাবনা তুলে দিতে।
যা ধরে তারানকো এগিয়ে যেতে পারতেন একটি সমাধানের দিকে। এমনকি যখন এটা নিশ্চিত হওয়া গেল আওয়ামী লীগ যে করেই হোক ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করবে। তখনও তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আগাম একাদশ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করিয়ে নিতে পারত। কেননা তখন আওয়ামী লীগ ছিল অনেক বেশি দুর্বল। অনেকখানি দ্বিধাগ্রস্থ।
বিএনপি এর কোনটাই করেনি। যা নির্বাচনে অংশগ্রহণে তাদের অনাগ্রহকেই স্পষ্ট করে তুলেছে।
আওয়ামীলীগের লক্ষ্য ছিল দুটি- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা এবং একই সাথে এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করে নেয়া। আর বিএনপিরও প্রধানত দুটিই লক্ষ্য। একটি হল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা এবং অন্যটি আওয়ামীলীগের জয়ের রথ থামিয়ে দেয়া।
উভয়ের পরস্পর বিরোধী এই লক্ষ পূরণে প্রয়োজন ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতায় আরোহণ এবং তার যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ পেতেই প্রয়োজন নির্বাচনের নামে জনসাধারণের সাথে চরম প্রতারণার এক নাটক মঞ্চস্থ করা। এই নাটক মঞ্চায়নে যে নির্বাচনী সরকার এবং যে নির্বাচন কমিশন যত বেশি দক্ষতা যত বেশি মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে সক্ষম হন তাদেরকে তত বেশি সফল বলে গণ্য করা হয়। যা হোক, এই নির্বাচনী নাটক আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আমার এই নিবন্ধের আলোচনার বিষয় বস্তু হল বিএনপির এবারের নির্বাচনী নাটকে অংশগ্রহণ না করা প্রসঙ্গে।
আমরা সে আলোচনাতেই থাকি।
প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে বিএনপিরও রয়েছে। তবে তাদের এবারের লক্ষ্যটি সরাসরি ক্ষমতারোহন নয়। ক্ষমতারোহনের থেকে জন্মের দায় শোধই এখন তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সেটা তারা স্বেচ্ছায় করছেন, না করতে বাধ্য হচ্ছেন তাও আলোচনার দাবি রাখে।
তবে এটা সুস্পষ্ট যে, নির্বাচন-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এসবই উপলক্ষ মাত্র। আসল উদ্দেশ্য মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল করা। লক্ষণীয় বিষয় হল, বিএনপির এই আন্দোলনে যে তাদের জোটভুক্ত দল গুলিই মাঠে অনুপস্থিত শুধু তাই নয়। খোদ বিএনপির নেতা কর্মীরাও এই আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। কারণ একটাই, আর তা হল এর মধ্য হতে তাদের প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ফলে বিএনপির বর্তমান আন্দোলনটি হয়ে পড়েছে শুধুমাত্র জিয়া পরিবার এবং জামায়াত শিবিরের যুগপৎ আন্দোলন। যেখানে বিএনপিও অনুপস্থিত। যদিও তাদের নেতারা এই আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় অংশ না নিলেও মাঝে মাঝে প্রাণহীন কিছু বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে থাকেন। যাকে নিছকই চাকুরী বাঁচানোর স্বার্থে বলেই মনে হয়। এর বেশি কিছু নয়।
আজকের বাংলাদেশে যে সংকট চলছে। সে সংকট দূর হবে তখনই যখন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রশ্নে সব দলের ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা হবে। তার আগে নয়। আর সেটা যে কখনোই সম্ভব নয় তা বলাই বাহুল্য। কেননা বিএনপি মুখে যতই বলুক তারাও এদের বিচার চায়; আসলে যে তারা সেটা চান না তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, তারা ক্ষমতায় থাকতে কখনোই এই বিচার করতে উদ্যোগী হয়নি।
এমনকি ১৯৯২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে, গন আদালতে করা গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারকে পর্যন্ত তারা মেনে নিতে পারে নি। বিএনপি সরকার তখন গণআদালতের ব্যাপক সমালোচনা করে একে রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড বলে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মত অপরাধ বলে অভিহিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ শে মার্চ ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয় শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ গন আদালত সংশ্লিষ্ট ২৪ জনের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য ২৬শে জুন ১৯৯৪ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বি এন পি সরকারের দেয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপবাদ মাথায় নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন। সেই বিএনপি এবং তাদের দোসররা আজ যখন বলেন তারাও এই বিচার চান তখন একে স্রেফ ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কীইবা বলা যায়।
আজ যখন বাংলাদেশ ইতিহাসের দায়মুক্তির সেই সন্ধিক্ষণে এসে উপনীত হয়েছে তখন এই বিচারকে বন্ধ করাই যে বিএনপি নেত্রীর একমাত্র এজেন্ডা হবে তাতে আর সন্দেহ কি? এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপিও যে জঙ্গি রূপ পরিগ্রহ করছে তা কি বেগম জিয়া জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু এসবের এখন তিনি থোরাই কেয়ার করেন। তার সুযোগ্য সন্তানও আজ লন্ডনে বসে একই সুরে একই কথা বলেছেন। আলোচনা নয় আন্দোলন। এটাই আসল কথা যা এতদিন উহ্য ছিল।
আজ তা ভাষা খুঁজে পেল।
যারা বলেন নির্বাচন তিন মাস পেছালেই বিএনপি নির্বাচনে আসত তারা কি এটা বলতে পারেন নির্বাচনে আসতে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক প্রস্তাব ছিল কিনা, এমনকি আজো আছে কিনা? তারা কি জেনেশুনে দেশকে একটি সাংবিধানিক শুন্যতার মুখোমুখি করতেই এটা বলেননি? তিন মাসে যখন সমাধান হত না তখন কি হত? সে দায়ই বা কে নিত? তারেক রহমান-সমসের মুবিন চৌধুরির ফাস হয়ে হয়ে যাওয়া ফোনালাপ থেকে তো আমরা জানতে পারি কোন বিশিষ্ট জন কার শেখানো কথা বলেন। এই তো আমাদের ভাল মানুষদের চরিত্র!
যুদ্ধাবস্থায় যে শান্তিচুক্তি হয় তাও যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেই করতে হয়। আর বিএনপি নেত্রীর কথা হচ্ছে আন্দোলন ও আলোচনা যুগপৎ চলবে। তা হয়ত চলতে পারে তবে তা সমাধানের উদ্দেশ্যে নয় কালক্ষেপণের উদ্দেশ্যেই করা হয়।
যা যুদ্ধের একটি কৌশল মাত্র।
আজ যদি মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিষয়টি না থাকত তাহলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলও বিএনপি বা আঠারো দলীয় জোটকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারত না। আর তাছাড়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কালীন সময় পর্যন্ত বিএনপির যে জনসমর্থন ছিল তা জাতিয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এটা তারাও ভালই জানত। কিন্তু সমস্যা হল বিএনপি নির্বাচিত হয়ে এলেও জনরোষের কারণে এই বিচার বন্ধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত না।
কাজেই প্রয়োজন ছিল হয় আওয়ামী লীগ কর্তৃক অথবা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায় আরোহণ করা সরকার কর্তৃক এই বিচারকে বন্ধ করা। তারা সেই পথেই হেঁটেছে এবং এখনো সে পথেই হাঁটছে।
কাজেই এর একমাত্র সমাধান মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার সুসম্পন্ন করা। যতদিন পর্যন্ত একটি বিচারের রায়ও কার্যকরী করা বাকি থাকবে। ততদিন পর্যন্ত তাদের এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি তখনই রনে ভঙ্গ দেবে যখন আর কাউকে বাঁচানোর দায় তাদের থাকবে না। কাজেই আলোচনার জন্য অপেক্ষা করে বা জনসম্মুখে বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গিবাদী চরিত্রে উপস্থাপিত করতে সময় ক্ষেপন না করে এক্ষণে সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ যে কোন মূল্যে দেশে সহিংসতা বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারকে যতটা দ্রুত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করা।
এটাই একমাত্র সমাধান। এটাই আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে। গনতন্ত্রমনার সাথেই গণতান্ত্রিক আচরণ করতে শোভন অগণতান্ত্রিকের সাথে নয়।
যে যতটা সহিষ্ণু তার সাথে ততটাই সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হয়। নয়ত প্রতিপক্ষ উদারতাকে দুর্বলতা বলে ধরে নেয়। যা সমাধানের পথকেই রুদ্ধ করে।
সঞ্চালক: আপন ভুবন ডট কম
০৭। ০১।
২০১৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।