নির্বাচন শেষ। আগুনের অাঁচ দ্রুত যেন নেভানো হয়। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের ভোটের পর সম্প্রতি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ কথা জানালেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। সেই সঙ্গে ঘরে-বাইরে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে যাতে হাসিনা সরকার দৃঢ়ভাবে হাল ধরতে পারে, সে জন্য কিছু পরামর্শও মেনন দিয়েছেন হাসিনাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাশকতা এবং পশ্চিমের চাপ- সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক রঙ্গমঞ্চের কেন্দ্র এখন ঢাকা। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘতম সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া ভারতের উদ্বেগও তাই কমা তো দূরের কথা, বরং বেড়েই চলেছে। ভোটপরবর্তী সময়ে সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর জামায়াতের তাণ্ডবের ফলে সীমান্তে চাপ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন শিবশঙ্কর মেনন। এ কথাও তিনি জানিয়েছেন, সীমান্তের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার প্রশ্নে তার ওপর চাপ আসছে খোদ ভারতেরই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলো থেকে। এর আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অনিল গোস্বামী জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সীমান্ত সিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বুধবার মালদহের (দক্ষিণ) সংসদ সদস্য তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) বাংলাদেশ-পরিস্থিতি নিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রকে। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে যে সন্ত্রাস তৈরি হয়েছে তাতে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ত্রাস বাড়ছে। তার বক্তব্য, অবিলম্বে কেন্দ্র যদি বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে এ ব্যাপারে সজাগ করে দেওয়ার অনুরোধও কেন্দ্রকে করেছেন ডালুবাবু। ফোনেও তার সঙ্গে মেননের কথা হয়েছে। ডালুবাবুর কথায়_ 'শিবশঙ্কর মেনন আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গে তারা সঠিক লাইনেই কথা বলছেন।' সূত্রের খবর, যশোরে হিংসার ফলে বেশ কয়েক হাজার সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন বেনাপোলে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, এখনো বড় হারে অনুপ্রবেশ শুরু হয়নি ঠিকই, কিন্তু হাসিনা সরকার যদি কঠোর হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা না করতে পারে তাহলে অবশ্যম্ভাবীভাবে ভারতে চাপ অনেকটাই বেড়ে যাবে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরামর্শ মেনন দিয়েছেন হাসিনাকে। প্রথমত, বলা হয়েছে, সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মূলস্রোতে নিয়ে আসা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমাজে সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব এবং জোরের জায়গা আরও বাড়বে। পায়ের তলায় লড়াইয়ের বাড়তি জমিটুকু পাবেন হিন্দু সম্প্রদায়। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে জামায়াতের একতরফা অত্যাচারের মোকাবিলা তারা নিজেরাই করতে পারবেন সামাজিক সশক্তিকরণের মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতায় আসার পর আর কোনো রকম নরম মনোভাব না নিয়ে শক্ত হাতে সবরকম হিংসাত্দক আন্দোলন রুখতে হবে হাসিনাকে। পরিস্থিতি যেন কখনোই এমন না হয় যে, জঙ্গিদের চাপে দলে দলে মানুষ সীমান্ত পার হয়ে ভারতের শরণার্থী হচ্ছেন। সেটা দুই দেশের পক্ষেই দুর্ভাগ্যজনক। তৃতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ফিরিয়ে এনে ভারত এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সাধারণভাবে সে দেশের ভারতবিদ্বেষী অংশকে বোঝানো। অপরপক্ষে নয়াদিলি্লও যে হাসিনা সরকারের নতুন ইনিংসে তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবে সেই আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তবে এ কথাও বলা হয়েছে, ভারতে নির্বাচন কড়া নাড়ছে। তবুও এই সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে অন্তত স্থলসীমান্ত চুক্তিটি যাতে করে উঠতে পারে বর্তমান মনমোহন সরকার, সে জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। চতুর্থত, ভারত জানিয়েছে, এর আগে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার দিকে এবার যথোচিত মনোযোগ দেওয়ার সময় হয়েছে। নতুন সরকারের মন্ত্রী এবং পদস্থ কর্তা যারা হবেন, তাদের অতীতের রেকর্ডকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পগুলোকে যথাযথভাবে রূপায়িত করা, যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার মতো বিষয়গুলোতে ঢাকার পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। এর আগের দফায় যে অনুদান এবং কম সুদে আর্থিক ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সে সব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যও বিশেষভাবে জোর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।