আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিল্লির রাজপথে কম্বলমুড়ি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এক রাত

দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত না করায় সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তার এই অবস্থান কর্মসূচি, ভারতে যাকে বলা হচ্ছে ধর্না। ইতোমধ্যে পুরো দিল্লিবাসীকে ১০ দিনের এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের প্রধান নিজেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ভূমিকায় নেমে পড়ায় ভারতের রাজধানীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা জট পাকিয়ে গেছে।     

মুখ্যমন্ত্রীর নজিরবিহীন এই বিক্ষোভে সোমবার দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে পার্লামেন্ট, নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লকসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। আম আদমি পর্টি প্রধানের এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের জড়ো হওয়া ঠেকাতে বন্ধ রাখা হয় আশেপাশের বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশন।

 

১০ দিনের ধর্নার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও চলছে একই দশা।

রাজ্য সরকারের দুই মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারে অস্বীকৃতি জানানো পুলিশের সদস্যদের বরখাস্তের দাবি নিয়ে সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচির ডাক দেন কেজরিওয়াল, দাবি পূরণের জন্য সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। ওই সময়ের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে রওনা হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু সচিবালয়ের পথে ইন্ডিয়া গেইটের কাছে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকা পড়েন কেজরিওয়াল ও তার মন্ত্রিসভার ছয় সদস্য। তাকে ঠেকাতে সুশীল সিন্ধের কার্যালয়ের সামনে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে সেখানেই অবস্থান নিয়ে টানা বিক্ষোভের ঘোষণা দেন কেজরিওয়াল। অবশ্য সেখানে তিনি কেবল বিক্ষোভই করেননি, রাস্তায় বসেই রীতিমতো সরকার চালিয়েছেন। একের পর এক ফাইল দেখেছেন, কয়েকটিতে সইও করেছেন।

 

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নীল রঙের গাড়িটি আটকে দিয়েছে, তার পাশেই সোমবার রাত কাটিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী কেজরিওয়াল ও তার দলবল।

১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কনকনে শীতের মধ্যে রাস্তায় ম্যাট্রেস বিছিয়ে কয়েকটা কম্বলে নিজেকে জড়িয়ে সেখানেই ঘুমিয়েছেন আম আদমির নেতা।

মুখ্যমন্ত্রীর পাদুকাজোড়া এ সময় পাশেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এনডিটিভি লিখেছে, মুখ্যমন্ত্রীর শরীর বিশেষ ভাল নয়, আগের দিন বেশ কয়েকবার কাশতে শোনা গিয়েছিল তাকে। তারপরও মধ্যরাতের সামান্য আগে শুয়ে ভোর সোয়া ৫টার পর তিনি উঠে পড়েন।

আর ঘুম থেকে উঠেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শুরু হয় কেজরিওয়ালের ঝাঁঝাঁল বাক্যবান, আগের দিন যিনি নিজেকে নৈরাজ্যবাদীিই ঘোষণা করেছেন।    

ভোরের আলো তখনো ফোটেনি, কেজরিওয়াল রাস্তায় অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “দিল্লিতে যখন এতো অপরাধ, মেয়েরা যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিন্ধে কীভাবে আরাম করে ঘুমান! আমরা তাকে ঘুমাতে দেব না।

কেজরিওয়ালের অভিযোগ, সুশীল সিন্ধে ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ করছেন। এই শীতের মধ্যে যারা রাস্তায় জেগে বিক্ষোভ করতে এসেছেন, তাদের ন্যূনতম অধিকারগুলোও আমলে নেয়া হচ্ছে না। রাতে ব্যারিকেডের মধ্যে খাবার ও পানি আনতেও বাধা দেয়া হয়েছে।   

“এখানে কোনো টয়লেট নেই। গতকাল আমাকে রেল ভবনের টয়লেট ব্যবহার করতে দিয়েছিল, আজ সেটাও দিচ্ছে না।

”  

অবশ্য রাজ্যের মন্ত্রীরা একটি মোবাইল টয়লেট যোগাড় করেছেন বলে জানান তিনি।  

 

 

মঙ্গলবার সকালে রাজ্যসভার ছয় মন্ত্রীর পাশাপাশি শ’ দুয়েক কর্মীকে দেখা যায় আম আদমি নেতার সঙ্গে।

কেজরিওয়াল অভিযোগ করেন, আরো অনেকেই তার সঙ্গে যোগ দিতে চাইলেও তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে।

“আমাদের দাবি অনুযায়ী রোববার প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই যদি কর্তব্যে অবহেলাকারী পাঁচ পুলিশকে বরখাস্ত করা না হয়, তাহলে লাখো মানুষ রাজপথে নামবে। ”

গত বুধবার রাতে দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী নগরের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বাড়িতে মাদক ও নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য অভিযোগে উগান্ডার কয়েকজন নাগরিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন পুলিশকে।

কিন্তু পরোয়ানা না থাকায় পুলিশ অভিযান চালাতে অস্বীকৃতি জানায়।

এরপর পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন চার নারী। তারা অভিযোগ করেন, মাদক গ্রহণ করেছেন কিনা পরীক্ষা করতে পুলিশ তাদের মূত্রের নমুনাও নিয়েছে।

এছাড়া একটি মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের আরেক মন্ত্রী রাখি বিড়লা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেও পুলিশ তা পালন করেনি বলে অভিযোগ কেজরিওয়ালের।

সম্প্রতি দিল্লিতে ডেনমার্কের ৫১ বছর বয়সী এক পর্যটককে ধর্ষণের ঘটনাও পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত করছে না বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

দিল্লির পুলিশ কমিশনার বিএস বাসি বরখাস্তের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে তদন্ত চলছে। তবে দাবি আদায়ে সেই তদন্তের ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি নন কেজরিওয়াল।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.