Set sail, ye hearts~ into the sea of hope..
এরকম অভিজ্ঞতা মনে হয় সবারই আছে, ধরেন পিচ্চিকালে হাটি হাটি পা পা করে আপনি রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছেন। সেখানে গিয়ে দেশলাইয়ের প্যাকেট বা ধারালো চাকু নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছেন, ঠিক সেই সময় মুরুব্বি কেউ দেখে ফেললেই শুরু হয়ে যেতো কেয়ামত! রেখে দাও বাবা! এসব নিয়ে খেলতে হয় না, যাও ড্রইংরুমে যাও, শোকেস থেকে খেলনা বের করে সেগুলো দিয়ে খেলো।
বলা হয় বয়স যত বাড়ে মানুষের জ্ঞান তত বাড়ে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার মনে হয় আছে যেসব আমরা পিচ্চিকালে ভালোই জানতাম, যত বয়স হচ্ছে, তত মাথায় ভেতর প্যাচ খেলছে – ততই ভুলে যাচ্ছি। সেই ব্যাপারটা হলো, যে খেলতে জানে, তার কাছে সবকিছুই খেলনা।
একটা ছোট একটা বাচ্চা রান্নাঘরের ধারালো চালু নিয়েও খেলতে পারে। তার কাছে লোড করা রিভলভারও খেলনা। আমাদের কাছে কিন্তু সেসব মোটেও খেলনা না। কারণ এইসব জিনিষ আমরা কোনো একটা কাজে লাগাই। রান্নাঘরের চাকু দিয়ে আমরা কাটাকাটির কাজ করি, আর রিভলভার দিয়ে..ওয়েল এটার ভালোমন্দ অনেক রকম কাজ আছে..এই যেমন পেছন থেকে চলন্ত গাড়ীর টায়ার পাংচার করা..গ্রেফতার এড়াতে সুইসাইড করা ইত্যাদি।
যাহোক, আসলে পোস্টের মূল বিষয় ছিলো ড্রোন। আপনারা সবাই জানেন, শাবিপ্রবিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রোন উড়ানো হয়েছে কিছুদিন আগে। টিভিতে দেখে তাদের সাক্ষাৎকার শুনে যতদূর বুঝলাম এই ড্রোনের সমস্ত সার্কিট ডিজাইন কলকব্জা তৈরির সব কাজ তারা নিজেরাই করেছে। এই ড্রোন প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে আছেন অবশ্যই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। (হ্যাঁ, সেইই পেইনফুল লোকটা, যিনি একদা ‘তোমরা যারা’ প্যাটার্নে একটা আর্টিকেল লিখেছিলেন ছাগুদের উদ্দেশ্যে, ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে যেটা তালিবানের উপর মার্কিন ড্রোন হামলার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো)।
তো, যেহেতু জাফর ইকবাল স্যার এই প্রজেক্টের সাথে জড়িত, তাই ওই ড্রোন বানানোর আগেই চাইনিজ ড্রোন পৌঁছে গেছে বাংলার ঘরে ঘরে। সবার বাড়িতেই এখন এসব পাওয়া যাচ্ছে, সবাই এখন ড্রোন বিশেষজ্ঞ। বলা যায় না, কিছুক্ষণ পরে হয়তো শুনবো হাটহাজারী থেকে ঝাড়ফুঁক করা কাগজের পেলেন উড়ানোর এন্তেজাম করা হচ্ছে।
কিন্তু, কথা হচ্ছে খেলনা হেলিকপ্টার বা প্লেন আর সেনাবাহিনীর ব্যাবহার করা ড্রোন – এই দুইটার মধ্যে পার্থক্যটা কি আসলে? যে বস্তুটাকে শাবিপ্রবিতে উড়ানো হচ্ছে সেটাকে কি এখনই ড্রোন বলা যায়? আমার কাছে মনে হয় যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেই বস্তুটাকে বাস্তব জীবনে কোনো কাজে লাগাতে না পারছি ততক্ষণ এটাকে ড্রোন না বলাটাই শ্রেয়। (জাফর ইকবাল স্যার নিজেও এটাকে এখনো ফ্লাইং মেশিন বলেছেন।
তবে ধীরে ধীরে এটাকে ড্রোনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। )
বিজ্ঞানের খটমটে তত্ত্বকথা আমি বুঝি না, আওড়াতেও পারি না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাকে ড্রোন বলবো, যখন -
##এটা যেখানে থেকে কন্ট্রোল করা হবে তার দৃষ্টিসীমার থেকে দূরে যেতে পারবে, এবং সেখান থেকেও এটাকে কন্ট্রোল করা যাবে।
##দীর্ঘসময় নিঃশব্দে আকাশে অবস্থান করতে পারবে।
##নিখুঁতভাবে পথ চিনে লক্ষবস্তুতে পৌছাতে পারবে।
##সফলভাবে শত্রুপক্ষের রাডার ফাঁকি দিতে পারবে।
##তাৎক্ষনিক ভাবে তথ্য বা ছবি কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে দিতে পারবে।
প্রথম যেদিন ড্রোনটা আকাশে পরীক্ষামূলক ভাবে উড়ানো হলো সেদিনই টিম মেম্বাররা বলছিলেন তাদের পরিকল্পনা আছে সিলেট থেকে চিটাগাং পর্যন্ত একে উড়িয়ে নেয়ার। ছবি তোলা, তথ্য পাঠানো সহ আরও কিছু কিছু ফিচার এর মধ্যেই ঠিকভাবে কাজ করছে।
এই ঘটনাটা এমন সময় ঘটছে যখন গুগল সহ আরও বড় বড় জায়ান্ট ড্রোন ব্যাবহার করে কুরিয়ার সাপ্লাই দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখছে।
আর নজরদারী, বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা সহ যাবতীয় সামরিক ব্যাবহার সম্পর্কে ইউএস আর্মির কল্যাণে আমরা তো সবাই-ই সম্যক অবগত।
কতগুলো বাচ্চা ছেলে যদি রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে একটা খেলনা পেলেন বানায়, আর সেটা যদি সত্যিই দেশের মানুষের কোনো একটা কাজে লাগে, সেনাবাহিনী যদি এই ডিজাইনটা ব্যাবহার করে। কোনো এক সোনালী সকালে এরকম একটা ড্রোন যদি দেশের আরেক প্রান্তে থাকা আপনার জরুরী কাগজপত্র বা মালসামান চোখের নিমিষেই পৌছে দিতে পারে আপনার এলাকার কুরিয়ার অফিসে, তাহলে ক্ষতি কি!
যদি শেষমেশ সেটা ড্রোন না হয়, যদি এই প্রজেক্টটা ব্যর্থই হয়ে যায়, তাহলে নাহয় খেলনার দোকানই দিয়ে দিলাম একটা! আপনার বাচ্চাকাচ্চাকে নাহয় কম দামে একটা দেশি খেলনাই কিনে দিলেন।
আপনার বাচ্চাটা সেই দেশি খেলনাটাকে মুগ্ধচোখে বাড়ীর সামনে উড়িয়ে বেড়াবে। আর আশেপাশের সবাই দেখবে ছোট একটা প্লেন কলোনির ভেতর উড়ে বেড়াচ্ছে, পাখার উপর বড় বড় করে লেখা,
“MADE IN BANGLADESH”
--
আরও পড়ুনঃ
এইডসের ভ্যাকসিন: আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।