আমার টিউন টি আমার বাবার লেখা আর্টিকেল থেকে নেয়া। আশাকরি ভালো লাগবে।
সূধী পাঠক,সরৎকালের বিকেলে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে ভাবেনি এমন লোক হয়তোবা খুঁজেও পাওয়া যাবেনা। নীল সামীয়ানায় ঢাকা দিগন্তে যখন সন্ধ্যা নামে, গোধূলীর ধূসরাভা পশ্চিমের নীলাকাশকে যখন কলুসিত করে তোলে তখন পূর্ব দিগন্তে নামে আঁধার। সেই সাথে ফুটে উঠে দু’একটি তারা।
কখনোবা পূর্ণিমার চাঁদ এসে উকি দেয় পূর্ব দিগন্তের কাল রেখায়। কবিমন ভাবে আকুল হয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের মন উদ্ভেল হয়ে উঠে। শুধু কি পূর্ণিমার চাঁদই সুন্দর! না! কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকার আকাশটা যে আরো সুন্দর,সুশোভিত তারার মেলায় দিগন্ত ব্যপ্রিত ছায়াপথ যেন চোখের সামনে নিয়ে আসে কোটি কোটি কুসুমের ঢালি। তাইতো দয়াময় বলেছেন,
১৫:১৪ وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ السَّمَاء فَظَلُّواْ فِيهِ يَعْرُجُونَ
১৫:১৫ لَقَالُواْ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ
১৫:১৪,১৫‘যদি আমরা আসমানের কোন দরজা খুলিয়া ধরিতাম এবং তাহারা উহাতে আরোহণ করিত তাহা হইলে তাহারা বলিত,আমাদের চক্ষু বিভ্রান্ত হইয়াছে মোহাচ্ছন্নতায়। বরং আমরা সকলে যাদুগ্রস্ত হইয়াছি।
’-
অত্যান্ত সহজ ভাবধারা,‘যদি’ অব্যয় দিয়ে শুরু যার মধ্যে একটা দূর্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত-অর্থাৎ যদি হত,তবে দেখতে পেতে,আসলে হওয়ার নয়। এমনি একটি বাক্য দিয়ে দয়াময় আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন,তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। সেই আদিকাল থেকে আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে সাদাবর্ণে হরেক রকম তারা দেখি আর ভাবি কত তারা দয়াময় সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু একবারও ভাবতে পারিনা,কত বর্ণের মুখচ্ছবি নিয়ে ভেসে আছে আকাশের গায়ে। তারাদের দিকে তাকিয়ে মানুষ একসময় ভাবত এগুলো বেহেশ্তী প্রদীপ।
তখন মানুষ দেখতে পায়নি তাদের প্রকৃত রূপ,জানতনা তাদের প্রকৃতি, ভাবাবেগে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবনত মস্তকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েই ও কথা বলতো। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান তার যন্ত্র চোখে দেখে,সবকিছু জেনে শুনে বলছে সত্যি এ গুলো যেন বেহেশ্তী প্রদীপ। নিজের চোখে না দেখলে এদের প্রকৃত রূপ বর্ণনা করা যায়না। এ্যাপোলো-৮ এর দলপতি ফ্রেঙ্ক বোরম্যান পৃথিবীর অপরূপ রূপ দেখে বলেছেন,অনন্ত ও শাশ্বত নীরবতার রাজ্যে ভাসমান আমাদের পৃথিবীটি একটি নীল ও হাল্কা সাদা সংমিশ্রনের রূপসী গ্রহ। সূধী পাঠক আসুন,অন্তত আমাদের সৌরপরিবারের সদস্যদের রূপ সম্পর্কে কিছুটা অবহিত হই।
সৌর পরিবারে সূর্যের পরে তার পরিবারের বাকি সদস্যরা হল- বুধ,শুক্র,পৃথিবী, মঙ্গল,বৃহস্পতি,শনি,ইউরেনাস,নেপটুন,প্লুটু। আমাদের মাতৃ ছায়াপথে ২০০ বিলিয়ন নক্ষত্রের মধ্যে সূর্য একটি নগন্য নক্ষত্র। তবুও পৃথিবী থেকে খালি চোখে দৃশ্যমান ৬০০০ নক্ষত্রের মধ্যে এটি উজ্জলতম নক্ষত্র। প্রতি মুহুর্তে সূর্যের উৎপন্ন শক্তির পরিমান ৩৮৬ বিলিয়ন বিলিয়ন মেঘা ওয়াট যার মধ্য থেকে প্রতিদিন আমাদের পথিবী ৯৪ বিলিয়ন মেঘা ওয়াট তাপশক্তি পেয়ে থাকে। তার নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমাসেন্টেরাই সূর্য থেকে তার দূরত্ব প্রায় ৪.৩ আলোক বর্ষ।
সৌরপরিবারে সূর্যের সবচাইতে নিকটতম গ্রহ বুধ,এর রং,উজ্জ্বলতা হুবহু চাঁদের মত মনোমুগ্ধকর। ইউ এস মেরিনার-১০, ১৯৭৪ সনে বুধের অনেক ছবি তুলে পাঠিয়েয়েছে। তা থেকে জানা যায় বুধ গ্রহটি রং, চেহারা ও উজ্জ্বলতায় একেবারে চাঁদের মতই। আকৃতিতে চাঁদর চেয়ে কিছু ছোট কিন’ পদার্থের পরিমান প্রায় দ্বিগুণ। রোমানীয় পৌরাণিক গল্পে বুধকে বলা হয়েছে দেবতাদের সংবাদ বাহক
শুক্র (ভেনাস)সৌর মণ্ডলে দ্বিতীয় গ্রহ,রূপে অপরূপা।
সকাল সন্ধ্যায় এর উপস্থিতি সত্যি খুব দৃষ্টি নন্দন। উজ্জল গ্রহ যেন নক্ষত্রকেও হার মানায়। চন্দ্র সূর্য বাদে শুক্রই আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা। আমাদের কাছে তার পরিচয় শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা নামে। গ্রীক জ্যোতির্বিদরা একে ‘লুসিফার’ নামেও অভিহিত করে।
প্রাচীন ব্যবিলীয়নরা তাকে ‘মিষ্ট্রেস অব হেভেন’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। তারা ভাবতো শুক্র ভালবাসা ও সৌন্দর্যের দেবী। একে কখনো কখনো পৃথিবীর সহোদর হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়,কারণ পৃথিবীর সাথে এর প্রচুর সাদৃশ্যতা রয়েছে। নভোচারীরা এর রূপের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,প্রকৃতিতে শুক্রের অবস্থান আরেকটা সুন্দর মনোহর চাঁদের মত। এর দৈহিক গঠন মেয়েলি বলেই এর নাম হয়েছে ভেনাস।
তৃতীয় গ্রহটি হল আমাদের এই অপরূপ সুন্দর পৃথিবী। এই পৃথিবীর আকাশীয় রূপ তার সীমানা ছেড়ে না গেলে দেখা সম্ভব নয়। নভোচারীগণ তাদের অভিযান কালে এই পৃথিবীর আকাশীয় রূপ দেখে বিমোহিত হয়েছেন। এ্যাপোলো-৮ এর দলপতি ফ্রেঙ্ক বোরম্যান পৃথিবীর এই রূপ দেখে বলেছেন,অনন্ত ও শাশ্বতনীরবতার রাজ্যে ভাসমান আমাদের পৃথিবীটি একটি নীল ও হাল্কা সাদা সংমিশ্রনের রূপসী গ্রহ। আবেগে আপ্লুত হয়ে এক নভোচারী বলেছিলেন, রূপে রঙে এক অচিন্তনীয় সুন্দর জগৎ।
নীল সাদা,লাল,বেগুনী,কাল ও হাল্কা সবুজের উপর সামান্য হলদে ছোয়ায় এক মায়াময়ী রূপে অপরূপা আমাদের এই পৃথিবী।
চতুর্থ গ্রহটি হল রেড প্লানেট বা মঙ্গল। এটি পৃথিবীর পরবর্তী প্রতিবেশী। এটি একটি উজ্জ্বল গ্রহ। মঙ্গলের আকাশ ও তার গ্যাসীয় বলয় হাল্কা পীত,কমলা ও মলিন লাল বর্ণের।
পঞ্চমে বৃহস্পতির স্থান। সৌন্দর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। দূরবীণ যন্ত্রের মাধ্যামে বৃহস্পতিকে নানা রঙে দেখা যায়। হরেক রকমের রঙের মিশ্রনে মিশ্র সৌন্দর্যের বলয় গ্রহটিকে ঘিরে রাখে। মিথেন ও এ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে একে মূলত হলুদ কিংবা সবুজাব হলুদ দেখায়।
এ ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে লাল বাদামী,বেগুণি ও নীল বর্ণের মিশ্র সৌন্দর্য। আমাদের তিনটি পৃথিবীর সমান এই বৃহস্পতি। এর চারিদিকে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ১৪ টি ছাঁদ অবস্থান করছে। এদের মধ্যে চারটি অদ্ভূত দর্শনের,অপূর্ব সোণালী-রূপালী আলোর সংমিশ্রনে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।
তারপরে শনির অবস্থান,এটি সৌর মণ্ডলে ষষ্ট গ্রহ।
বিজ্ঞানী ঈন রিডপাত শনি প্রসঙ্গে তার অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন‘শনির লাল ছোপে কমলা রং-এর মিশ্রনে লেগে থাকা অপরূপতার সাথে গ্রহটির প্রান্তিক ভাগে একটু কালচে-সাদা ও নীল রং এর লেপন দেয়া আছে। তার বিষ্ময়কর রিংগুলো ধূসর,রক্ত-বর্ণ,কমলা,বেগুনি এবং কাল এর সমন্বয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
সপ্তম গ্রহ ইউরেনাস যাকে দেখতে সবুযাভ থালার মত দেখায়। গ্রহটিতে হাইড্রোজেন হিলিয়াম ও মিথেনের উপস্থিতির কারণে তাকে সবুজ দেখায়।
অষ্টম গ্রহ নেপচুন একটি নীল গ্রহ এতেও আলো বিশোষক মিথেনের প্রাধান্য রয়েছে।
নবম গ্রহ প্লুটো,জানামতে এটা সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। বরফায়িত মিথেন গ্যাস তাকে নীলাভ সবুজতা প্রদান করছে।
গ্রহ উপগ্রহ হতে প্রতিফলন জনিত আলোর বিচ্ছুরন সৌন্দর্য ছাড়াও আরেকটি রূপের পশরা রয়েছে গ্রহদের অরোরাতে। উষা বা সন্ধ্যালগ্নে আলোর বিভিন্ন রকম প্রতিফলনের মিশ্রনে তৈরী হওয়া আলোকশয্যাই হল অরোরা। উষাকালে পূর্বাকাশে ও পোধূলিতে পশ্চিমাকাশে আমরা যে আভামণ্ডল দেখে থাকি তা প্রকৃত সৌন্দর্যের যৎসামান্যই দেখে থাকি।
পূর্ণ রূপটি দেখতে হলে পৃথিবী হতে কয়েকশ মাইল দূরে গিয়ে দেখতে হবে এ রূপটি। আর তখনি উপলব্দিতে আসবে ১৫:১৪,১৫ আয়াতের মর্মার্থ।
কেন এই রঙের বৈচিত্রতা? আমরা এতক্ষণ সৌর পরিবারের সদস্যদের রূপের যে বর্ণনা পেলাম তা হল আলোর খেলা। আমরা জানি আমাদের এই গ্রহগুলির মধ্যে কারোরই কোন আলো নেই। মহাকাশের এক কোণে পড়ে থাকা যেন নিছক মাটির পিণ্ড।
তাহলে এই রূপ পেল কোথায়? এ সবই সূর্য দেবতার অবদান। যেন মাটির প্রদীপ থেকে আপতিত আলো ছোট্ট গোলাকার আর্সি থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আর্সিটিকেই প্রদীপ্ত করে তুলছে। প্রকৃতির কি বিধান-আলো যত কোণে আপতিত হয় ঠিক তত কোণেই প্রতিফলিত হয়, আর এই গুণটি দিয়েই কতগুলি মাটির ঢিবিকে করে তোলে প্রদীপ সম। সূর্য চলে গেল অস্তাচলে-চোখের আড়ালে,এর এদিকে জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠল আমাদের অতি পরিচিত এই গ্রহগুলি। শুধু জ্বলে উঠাই নয়-ক্ষণে ক্ষণে রঙের পশরা লয়ে রূপ পাল্টায় আপন মনে।
কেন এমনটা হয়,হয় আলোর প্রতিফলন ও বিক্ষেপণের গুণে। আমরা এও জানি আপতিত আলো যখন বিক্ষিপ্ত হয়,তখন তা সাত রঙে ভেঙে যায়। তখন এই বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন আমাদের চোখে নানা বর্ণ ও বর্ণের মিশ্রন ধরা পরে। আবার কোন নির্দিষ্ট স’ান থেকে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়া নির্বর করে তার আপতন তির্যকতার উপর। ঘূর্ণায়মান গ্রহগুলির এই আপতন তির্যকতা ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যায় আর সে কারণেই নানা বর্ণের প্রতিফলন চোখে পড়ে।
এতো হল মহাকাশের অতি নগন্য ১০ সদস্যের সৌর পরিবারের রূপ সম্পর্কে মানুষের জানা ইতিহাস। তার পর রয়েছে আমাদের মাতৃ ছায়াপথ ও তার চতুস্পার্শীয় ছায়াপথ সমুহ ও উন্মুক্ত মহাবিশ্ব। এই সবই ১৯শতকের শেষের দিকে এসে মানুষ উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যামে জানতে শুরু করেছে। এই সময়ে স্পেক্ট্রোস্কোপি জ্ঞান মানুষের কৌতুহলের সমাধান দিতে শুরু করল-খুলে গেল বিজ্ঞানের আবদ্ধ দুয়ার। তাইতো গেল শতাব্দীর সত্তর দশকে এসে বিজ্ঞানী J.B.Haldane অবাক বিষ্ময়ে উক্তি করেছিলেন, ÔÑThe Universe is not onlY queerer than we suppose,but queere than we can suppose.’তিনি হয়ত কোরআন পড়েননি,পড়লে অবাক বিষ্ময়ে জানতে পেতেন প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময় বিধাতা নিরক্ষর এক মরু বালকের মুখ দিয়ে শতভাগ সঠিকতায় বর্ণনা করিয়েছেন মানুষের এতদিনের কষ্টের ফল।
উপরে আলোচিত এই তথ্যজ্ঞান গুলি আজকের বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে পরীক্ষালব্দ জ্ঞান,শুধু তাই নয় সবই অত্যান্ত উন্নত প্রযুক্তিতে পরিমাপকৃত। যেমন বর্ণালী বিক্ষণ যন্ত্রের পরিমাপ-সেতো নিতান্তই হালে আবিস্কৃত যন্ত্রের হিসাব। অথচ প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অশিক্ষিত মরুচারীর মুখ থেকে কি করে অবলীলায় বেড়িয়ে এল এত উন্নত তথ্য? কোনক্রমেই বলা যায়না এই সব পরীক্ষা লব্দ ফলাফল, এ অবশ্যই কোন মহাজ্ঞানীর বিধিত বাণী। এত পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারার পরেও মেনে নিতে কেন আমাদের এই কৃপণতা! এখানে লক্ষ্যণীয় হল উপরে প্রস্তাবিত ১৫:১৪,১৫ আয়াতে ব্যবহৃত দু’টি শব্দ-মোহাচ্ছন্নতা ও যাদু গ্রস্ততা। মানুষ কখন মোহাচ্ছন্ন হইয়া পড়ে- যখন সৌন্দর্যের অসীমতায় নিমগ্ন হয়,যে সৌন্দর্য আগে কখনো উপলব্দি করেনি- এমন অবস্থায়।
আর যাদুগ্রস্ততাতো আরও অভাবনীয় ব্যপার। মানুষ যখন অকল্পনীয় কোন কিছু দেখে বা অনুভব করে তখনই এ কথা আসতে পারে। দয়াময় সম্ভবত এ কথাই জানাতে চেয়েছেন যে,মহাকাশ অসীম সৌন্দর্যের স্থান যা মানুষ জানেনা। এছাড়াও মহাকাশে রয়েছে আরো এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি ওয়ারর্মেহোল। এ ইবষেয় আমরা ভিন্ন প্রবন্ধে আলোচনা করেছি তাই এখানে আর বিষদ কিছু বলা হলনা।
নভোচারীদের অবলোকন প্রকৃত সৌন্দর্যের সামান্যই,বাকি রয়ে গেছে আরও অপরিমেয় রূপ সৌন্দর্য,মূলতঃ যা দেখার জন্যে মানুষের চেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করাই দয়াময়ের এই বর্ননা।
আমরা উপরে সৌরমণ্ডলের রূপের যে বর্ণনা পেলাম তা হল আমাদের মহারাজা সূর্যের রাজত্ব। আসলে সৌন্দর্যের বেলাভূমিতে এ হল নিতান্ত উপল,প্রবাল নয়। সৌন্দর্যের প্রকৃত ধারাই শুরু হয়েছে এই সৌরপরিবারের সীমানা ছাড়িয়ে। আমাদের জানা মতে সৌর জগতের সীমানা প্লুটো পর্যন্ত।
তার পরে আর সূর্যের আধিপত্য নেই বটে,তবে এক বিশাল শূণ্যতার মাঝে মহাকাশের অতি বিষ্ময়-সৌর দুনিয়ার প্রেত হিসেবে পরিচিত কোটি কোটি ধূমকেতু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদের গড়ন যেমনি অবাক করা আচরণও তেমনি বিষ্ময়কর। ঘন শির থেকে পুচ্ছের দিকে ক্রমান্বয়ে সৃষ্টিগত উপাদান গ্যাস-মেঘ-ধূলির ঘনত্ব কমতে থাকে। তাদের এই লম্বাকৃতি সর্পিল দেহের উপর সূর্যের আলোর বিভিন্ন কৌণিক আপতনে বিভিন্ন রং ও সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। লম্বা এই পুচ্ছের আঁকে বাঁকে বিক্ষিপ্ত প্রতিসরণে সৃষ্টি হয় রঙধনুর সাত রঙ।
তাদের চমৎকার এই হাসির ছটায় প্রেতরাও যেন হার মানে। ধূমকেতুদের সীমানা পেরুতে চলে যেতে হয় সহস্র সহস্র কোটি মাইল। ধীরে ধীরে সূর্যের আলো মৃয়মান হতে হতে শুরু হয়ে যায় অন্ধকারের রাজত্ব। শুরু হয় মহাবিশ্বের নিকষ কালো অন্ধকারের মহা ব্যাপ্তি-তারই স্থানে স্থানে জ্বলে থাকা তারা পুঞ্জ। এত বিশাল ব্যপ্তিতে এদের আস্তানা যে একটার আলোকীয় প্রভাব আরেকটার উপর পড়ার সুযোগই হয়না।
আবার এক এক পুঞ্জে তারাকাগুলির নিজেদের মধ্যেও দূরত্ব এত বেশী যে, প্রায় সকলেই যেন মিটি মিটি করে জ্বলছে হয়ত এক ফুৎকারেই নিবে যাবে সব। মহাকাশের আসল সৌন্দর্যই লুকিয়ে রয়েছে সেই মহাব্যপ্তিতে। সেখানেও রয়েছে নানা বর্নের নানা আকৃতির বিশাল বিশাল নক্ষত্র। তাদের রূপ সৌন্দর্যের শেষ নেই। আমাদের এই দৃশ্যমান মহাজগৎটি আমাদেরই মতৃ ছায়াপথ মিল্কিওয়ে।
বাকী কোটি কোটি ছায়াপথের রূপ সৌন্দর্য ও এমনিতর। বিজ্ঞানীগন মহাবিশ্বের স্থানে স্থানে সজ্জিত এই সকল নক্ষত্র সমুহের রূপ রঙ ও উজ্জলতার ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। কত বিশাল বিশাল নক্ষত্র আমাদের সূর্যের তুলনায় কোটি কোটি গুণ উজ্জ্বল হওয়া সত্যেও দূরত্বের কারণে রয়ে গেছে আমাদের চোখের আড়ালে। যাদের রূপ সৌন্দর্য কখনোই মানুষের পক্ষে খালি চোখে অবলোকন করা সম্ভব নয়। তাইতো মহাপ্রভু ‘যদি’ অব্যয়টি দিয়ে এই অসম্ভাব্যতাকেই তুলে ধরেছেন আমাদের কাছে,শুধু তাই নয় এই অসম্ভাব্যতাকে সম্ভব করে তোলার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট হতে মানুষকে অনুপ্রেরনা জোগিয়েছেন উপরিউক্ত আয়াত দু’টিতে।
তাছাড়াও দয়াময় আরো বলেছেন, صِبْغَةَ اللّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدونَ
২:১৩৮‘আল্লাহ্র রং এবং আল্লাহর রং অপেক্ষা কাহার রং উত্তম হইবে?’
২৪:৩৫ আয়াতাংশ ‘আল্লাহ্ আকাশ সমুহ ও ভ’মণ্ডল সমুহের আলো। ’
একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখুন আয়াত ১৫:১৪-১৫ এর সর্থক প্রয়োগ হয়েছে কিনা-
The Helix Nebula, a planetary nebula in the constellation Aquarius also known as the “Eye of God.” CREDIT: NASA, ESA, and C.R. O’Dell (Vanderbilt University)View full size image
উপরের ছবিটি হেলিক্স নীহারিক নামে পরিচিত, একে বিধাতার চক্ষু বলেও অভিহিত করা হয়। নাসার তোলা প্রকৃত ছবি। নিজের চোখেই দেখুন প্রকৃতিতে রঙের ব্যাবহার।
সূধীপাঠক আসুন,আমরা এবার ছায়াপথের রূপ সৌন্দর্য নিয়ে একটু আলোচনা করি।
This massive, young stellar grouping, called R136, is only a few million years old and resides in the 30 Doradus Nebula, a turbulent star-birth region in the Large Magellanic Cloud, a satellite galaxy of the Milky Way.
নীচের ছবিটির দিকে তাকিয়ে দেখুন কত বর্ণের সমাহার। এটি আমাদের মাতৃ ছায়াপথ মিল্কিওয়ের একটি উপ ছায়াপথ।
দূর্বোধ্য পাহাড়- এই এবড়ো-থেবড়ো উদ্ভট পাহাড় চূড়াটি আচ্ছাদিত হয়ে আছে রাশিকৃত মেঘ দ্বারা,যা দেখতে কিম্ভুতকিমাকার আকৃতি ধারন করেছে। এটি একটি ধূলিগ্যাসের স্তম্ভ যা তিন আলোক বর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। পার্শ্ববর্তী তারার বিকট আলো যেন তাকে গিলে খাচ্ছে।
এছাড়াও স্তম্ভটির চূড়াভাগ অভ্যান্তরীণ নবতারার অগ্নি গোলক থেকে বিচ্ছুরিত গ্যাস দ্বারা তীব্র ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এই দূর্দান্ত মহাজাগতিক শৃঙ্গটি অবস্থান করছে উন্মত্ত নাক্ষত্রিক বাগানে যাকে বলা হয় কারিনা নিহারীকা (Carina Nebula)। এটি কারিনা তারামণ্ডলের দক্ষিন অংশে পৃথিবী থেকে ৭৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবসি’ত। নিহারীকাস্থিত অতি উত্তপ্ত নতুন তারা জ্বলন্ত বিকিরণ ও আহিত কণার তীব্র স্রোত স্তম্ভটিকে প্রতিনিয়ত সঙ্কুচিত ও প্রসারিত করছে। নবতারা জন্মের উন্মত্ততা থেকেই এমনটা হচ্ছে।
স্তম্ভটির পৃষ্ঠদেশ ও ধূলিগ্যাস উপত্যকা থেকে উত্তপ্ত আহিত কণার স্রোত চূড়ার চারিদিকে তারা কর্তৃক আলোকিত অঞ্চলে বইতে দেখা যাচ্ছে। স্তম্ভটির ঘন অঞ্চলে বিকিরণ দ্বারা আহিত কণার স্রোতকে প্রতিহত করছে। চিত্রের চূড়ায় স্তম্ভমূল অঞ্চলে দীর্ঘ গ্যাস তল রয়েছে যেখানে গ্যাস স্রোত বিপরীত দিক থেকে অনবরত আঘাত করছে,আর এমনটা হচ্ছে নতুন তারা জন্মেও কারণে। এই বিচিত্র স্তম্ভটির নাম Carina Nebula, HH 901, HH 902, এটি আমাদের মাতৃছায়াপথে পৃথিবী থেকে মাত্র ৭৫০০ আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত।
দেখুন দয়াময়ের সৃষ্ট আকাশের রং, এটি একটি নিহারীকা, ‘নাম ঈঘল নেবুলা’ আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথে একটি সাধারন নিহারীরকা।
ছবিতে মহাজাগতি বস্তুটি আসলে নাক্ষত্রিক বাগান থেকে উৎপন্ন একটি ঠাণ্ডা গ্যাস ও ধূলির তরঙ্গায়িত স্তম্ভ। এটিকে দেখতে অনেকটা পাখাযুক্ত উড়ন্ত বস্তুর মত মনে হয়। এই উড্ডয়নশীল স্তম্ভটি পায় ৯.৫ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত,যা আমাদের মাপে ৯০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার উচু-অর্থাৎ আমাদের সূর্যের নিকটবর্তী কোন তারার দ্বিগুণ দূরত্ব। এই নিহারীকায় সৃষ্ট তারারা ঠাণ্ডা হাড্রোজেন মেঘ থেকে উৎপন্ন। ছবিটির উপরের অংশ থেকে বুঝা যায়, বিশালকায় নবতারার পঞ্জ থেকে অতিবেগুণী রশ্নির( ultraviolet light ) স্রোত যেন স্তম্ভটিকে গিলে ফেলছে।
স্তম্ভটিকে তারাপুঞ্জ থেকে বিচ্ছুরিত বিপুল অতিবেগুণী রশ্মি উজ্জ্বল করে তুলেছে। উপরের নীল রং উৎপন্ন হচ্ছে জ্বলন্ত অক্সিজেন থেকে। নিম্ন দেশের লাল রঙ উৎপন্ন হচ্ছে জলন্ত হাইড্রেজেন থেকে। এই ছবিটি ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাঠানা হয়েছে। এটি আমাদের মাতৃছায়াপথে পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
বিভিন্ন ছায়াপথের রং বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে তন্মধ্যে,কোন কোনটি বিভিন্ন রং এর মিশ্রন ও হয়ে থাকে। এক একটি গ্যালাক্সি এক একটি দ্বীপ জগৎ। উপরের ছবিটি দেখুন, একটা বিশাল তারার জগৎ লাল, হলুদ, ধূসর, কালো, সবুজ কত বর্ণের সমাহার। অথচ তার কিছুই আমরা দেখতে পাইনা। কত সৌন্দর্যইনা আমাদের দৃষ্টির আড়ালে আকাশের গহিণ কন্দরে লুকিয়ে আছে কোটি কুসুমের ঢালি।
তাইতো দয়াময় বলেছেন,
১৫:১৪,১৫‘যদি আমরা আসমানের কোন দরজা খুলিয়া ধরিতাম এবং তাহারা উহাতে আরোহণ করিত তাহা হইলে তাহারা বলিত,আমাদের চক্ষু বিভ্রান্ত হইয়াছে মোহাচ্ছন্নতায়। বরং আমরা সকলে যাদুগ্রস্ত হইয়াছি। ’
وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ
৩০ঃ২২‘আল্লাহ্র অন্যতম নিদর্শন হল যে তিনি আকাশসমুহ ও পৃথিবী সমুহ সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন বিভিন্ন ভাষা ও রং। নিশ্চই উহাতে জ্ঞাণী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রহিয়াছে।
’ এখানে বিশেষভাবে, আকাশের রঙের সাথে ভাষার কি সম্পৃক্ততা। আবার রঙের জগৎ বিধাতার আরেক সৃষ্টি। কেন রঙের সৃষ্টি হয় আবার আমাদের চোখে তা কিভাবে অনুভূতি জাগায়। সে আরেক জটীল সৃষ্টি তত্ত্ব। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রতি সদয় হলে আমরা পরে তার আলোচনা করবো।
قَالَ عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَابٍ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى -
২০:৫২‘ইহার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের কাছে লিপিবদ্ধ আছে,আমার প্রতিপালক ভুল করেননা এবং বিস্মৃত হননা। ’
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا -
৪:১৭৪ ‘হে লোক সকল,তোমাদের উপর তোমার প্রতিপালকের এক সনদ আসিয়াছেএবং আমি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট জ্যোতী অবতীর্ণ করিয়াছি। ’
সূধী পাঠক, উপরের চিত্র দু’টি দেখার পরেও কি মনে কোন সন্দেহ ঘোরাফেরা করে,একবারও কি মনে হয় কোরআনের বাণী মানব রচিত?
সূত্র- আলকোরআন দ্যা চ্যালেঞ্জ,বিভিন্ন ওয়েভসাইট।
____________________________________________________________________
_____________________________________________________________________
চাইলে আমার বাবার ব্লগটি ঘুরে আসতে পারেন।
http://sciencewithquran.wordpress.com
অথবা,
hccme.tk
________________________________________
আমি ফেসবুক এ ,
https:www.facebook.com/hridoy.khandakar1
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।