কি দেখার কথা, কি দেখছি !! কি শোনার কথা, কি শুনছি !! কি ভাবার কথা, কি ভাবছি !! হায়দার আলী ভাইয়ের বিস্ময় মাখানো প্রশ্নগুলো আমাদের সাময়িক আনন্দ দিয়ে ক্লান্ত হয়, অবাক হয় – কি শোনালাম আর কি শুনল! গানের আড়ালে এরকম হাজারো নচিকেতা রক্তবমি করে শহীদ হয়ে যাচ্ছে । তবু্ও আমাদের সম্মোহন ভাঙছে না ।
গন্ডার নাকি তিন দিন পর সুরসুরি টেঁর পায় । কপাল খারাপ আমরা গন্ডার না, তাহলে অন্তত তিন দিন পর হলেও টেঁর পেতাম । দুঃখের বিষয় আমরা বছরান্তেও টেঁর পাই না ।
আমাদের হয়তবা সুরসুরাঙ্গ বিলুপ্ত হয়ে গেছে !! সেক্ষেত্রে কি আর করা ?
প্রতিদিন ভোরে খবরের কাগজ খুলে এখন আর আমাদের চোখ কপালে ওঠে না । জনৈক ব্যাক্তিকে কোন এক মহান নেতার আদর্শে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দিপ্ত যুবকেরা কুপিয়ে খুন করেছে । কোন এক ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা সতের টুকরা করে নদীর ধারে ফেলে গেছে । তাতে আমার কি, আমি তো ঠিক-ঠাক, বেশ আছি । কোন এক কিশোরীকে এক দল সুবোধ বালকেরা পালাক্রমে অথবা তার স্কুলের সম্মানিত শিক্ষক বলা্ৎকার করেছে ।
পাড়ার আদর্শ ছেলেটা (উঠতি নেতা) প্রেমে অস্বীকৃতি জানানোর গুনাহ্ করায় এসিডে ঝলসে দিয়েছে মেয়েটির মুখ । তাতে আমার কি, আমার বোন তো ঠিক-ঠাক, বেশ আছে । যৌতুকের ডিমান্ডলিস্ট পূরন না করায় শাশুরী আর ননদ সহযোগে স্বামী আগুন লাগিয়ে দিয়েছে – হাসপাতালে কাঁতরাচ্ছে প্রিয়তমা বউ । তাতে আমার কি, আমার শশুর তো না চাইতে সংসারটা একদম সাঁজিয়ে দিয়েছে !……
তবে কত দিন যে ঠিক থাকবে…..?
বন্ধু শিরাজী শিক্ষিত মানুষের সাথে উল্লুকের তুলনা দিয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ করছিলেন । আমি অবশ্য দ্বিমত পোষন করি ।
অযথা অবলা জন্তুগুলোকে অসম্মান করা সমীচিন হবে না । গন্ডার তিন দিন পর হলেও টেঁর পায়, উল্লুকের সামান্য হলেও বিচার বিবেচনা আছে ।
আমরা তো কারও কিছু বিচার না করেই মতামত তৈরী করি । বাবুল বিস্কুট কোম্পানী এবং গং যা দেখায় আর প্রথম অন্ধকার বা দৈনিক ভূয়ান্তর বৃন্দ যা লেখে তা আসমানী ওহী জ্ঞান করি । তারা কি লেখে আর তা কেন লেখে তা খঁতিয়ে দেখি না ।
খঁতিয়ে দেখি না স্বনামধন্য কোম্পানীর গুঁড়া মসলায় বা তেলে গোবর আর প্রিজারভেটিভ মুক্ত আমের জুসে উহা যুক্ত কুমড়া পাওয়ার খবরের কোন ফলোআপ আর কেন ছাপা হয়না ।
কেন মালালার ব্যপক মার্কেটিং হয় আর হাজারো শিশুর লাশ ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের রাস্তায় পরে থাকে ? কেন সাদ্দাম, ইয়াসির আর গাদ্দাফিরা খলনায়ক বনে যায় ? কারা এই প্রোজেক্টে অর্থ্ যোগান দেয় ? কিভাবে ?
একটা দেশের আইন-কানুন, শিক্ষা-বানিজ্য, অর্থনীতি সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় শিক্ষিত জনগোষ্টির হুকুমে । আর অশিক্ষিতরা শুধু হুকুম তামিল করে । কি হুকুম করা হলো আর কিভাবে তামিল হলো – দুই-ই শিক্ষিতদের উপর নির্ভর করে । আর এর উপরে নির্ভর করে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ।
সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে দায়ী করতে হয় তবে তা হবে শিক্ষিত জন বা গোষ্ঠি ।
এখন প্রশ্ন হলো আমরা সত্যিকারার্থে শিক্ষিত কি ?...
আমাদের পন্ডিতেরা এখন শিক্ষার উদ্দেশ্য ডেফিনিশন্-সমেত পাল্টে ফেলেছেন । শিক্ষার ডেফিনিশন হলো যেকোন(?) উপায়ে পরী্ক্ষার খাতায় উত্তমরূপে ভমিটিং করে উচ্চ গ্রেডপ্রাপ্ত হয়ে দামী একেকটা পিস্ অফ পেপার অর্জন করা আর উদ্দেশ্য হলো তদ্দারা একটা চাকরী পাওয়া । একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ব্যপারটা বিশেষ আয়োজন করে প্রচার করেছে ।
চাকরী? সেতো যে কেওই নিতে বা করতে পারে ।
শুধুমাত্র সুযোগ-সুবিধা এবং বেতনের একটু কমবেশী – এই যা । বাসা-বাড়ীতে ঝিঁয়ের চাকরী আর কোন একটা গ্রুপ অফ কোম্পানীর বড় সাহেবের চাকরী –এর মৌলিক বিষয়াদিতে কোন অমিল খুঁজে পাওয়া এক নতুন আবিষ্কার হবে । যেনারা চাকরী করেন উনারা সম্মানহানীর ভয়ে বিষয়টা চেপে গেলেও মাঝে মাঝে বেফাঁস হয়ে যায় বটে ! তবে অনেক বন্ধুরা সৎসাহসে, অকপটে স্বীকার করেন । মোদ্দাকথা, চাকরী হলো কারও অধীনস্ত হয়ে শ্রমের বিনিময় নেয়া । সেজন্য গাদা গাদা বই পড়া কেন?
অনেক তথ্য মাথায় থাকা যদি জ্ঞানের মাপকাঠি হয় তবে ডিকশনারী বা এনসাইক্লোপিডিয়া প্রথম অবস্থানে থাকত ।
কয়েকটা পাশ দেয়ার পর যারা নিজেদের শিক্ষিত দাবি করে তাদেরকে বড়জোড় ডিগ্রীধারী বলা যায় । কোনক্রমেই শিক্ষিত বলা যায় না ।
শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি চাকরী না হয়ে জ্ঞানার্জন হতো তবে দেশে অনেক উদ্দ্যোক্তা সৃষ্টি হতো । এত এত বেকার তৈরী হতো না যা সকল সমস্যার মূল । এবং উপরে বর্নিত দূর্ঘটনা গুলো দূরেই থাকত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।