আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধরাছোঁয়ার বাইরে সোনা চোরাচালানিরা

গত বছরের ২৪ জুলাই ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাঠমান্ডু থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ১২৪ কেজি স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনায় এটি বিভাগীয় মামলা হয়। দেশি-বিদেশি গোয়েন্দারা তদন্তে মাঠে নামলেও জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ স্বর্ণ চোরাচালানের এ মামলাটির তদন্ত থেমে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, মামলাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

এর দুই মাস পর একই বিমানবন্দরে ১৩ কেজি স্বর্ণসহ দুবাই থেকে আসা যাত্রী মাসুদ রানা আটক হন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। মাসুদ রানা এখন জামিনে মুক্ত।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের হিসাব মতে, গত ১৩ মাসে বিমানবন্দরে ১০৭টি স্বর্ণের চালান আটকের ঘটনায় থানা ও বিভাগীয়সহ ৭০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক মামলা ধামাচাপা পড়ে গেছে।

এসব ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই আদালত থেকে জামিনে মুক্তিলাভ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছে, আজ পর্যন্ত স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি হওয়া দূরের কথা মূল হোতাদেরই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা বরাবরই রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর বাহক হিসেবে যারা ধরা পড়েন, আইনের ফাঁকফোকরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও চোরাচালানে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া চোরাকারবারিদের সহযোগী বিমানবন্দরে কর্মরত যে কয়েকটি চক্র রয়েছে এসব চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

গোয়েন্দারা বলছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। দেশি-বিদেশি চক্র এই বিমানবন্দরকে সোনা পাচারের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে মনে করছে। যে কারণে প্রায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান করছে। বাংলাদেশে পাচারের পর একইভাবে স্বর্ণের একটি বড় অংশ ফের পাচার হয়ে যাচ্ছে পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতে। চক্রের মূল হোতারা সিঙ্গাপুর, দুবাই, পাকিস্তান ও ভারতে বসে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে।

গত এক বছরে চোরাচালানের ঘটনা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ধরাও পড়েছে প্রচুর স্বর্ণের চালান। ঢাকা কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার কে এম অহিদুল আলম বলেন, আটক ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে তারা থানায় মামলা করেন। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলার আসামিরা কীভাবে জামিনে মুক্তি পান, তা তাদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, কাস্টমসের নিজস্ব প্রসিকিউশন বিভাগ না থাকায় এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পুলিশের মতো কাস্টমসকে যদি এসব মামলার তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এ সমস্যাটা দূর হতো।

আসামিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মামলা দায়ের করার পর পুরো বিষয়টি পুলিশের কাছে চলে যায়। তদন্তে কোনো ফাঁকফোকর থাকে কি-না, তা কাস্টমসের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যখন পর্যালোচনা করা হয়, তখনই আমরা জানতে পারি আসামিরা জামিনে রয়েছেন। ১২৪ কেজি স্বর্ণের ঘটনার তদন্ত ধামাচাপা পড়েনি বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে।

অচিরেই থানায় মামলা করা হবে। মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা সঠিকভাবে তদন্তের পরই আদালতে আসামিকে পাঠিয়ে দেন।

পুলিশ, কাস্টমস (শুল্ক) বিভাগ ও আদালত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৯ জুলাই হংকং থেকে আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জনতা হাউজিংয়ের বাসিন্দা কাইয়ুম মিয়া বিমানবন্দরে ৫২টি স্বর্ণের বারসহ আটক হলেও তিনি এখন জামিনে মুক্ত। একইভাবে জামিনে রয়েছেন সিঙ্গাপুর থেকে আসা ফ্লাইটের যাত্রী মজিবুর রহমান।

গত জুনে সাত কেজি স্বর্ণসহ আটক মোর্শেদ আলম এখন জামিনে রয়েছেন। জুনে ১৭টি বারসহ আটক মিজানুর রহমান, জুলাইয়ে মালয়েশিয়া থেকে আসা ৩ কেজি সোনাসহ আটক নজরুল ইসলাম, ৮ কেজি সোনাসহ দীপক কুমার, সাড়ে পাঁচ কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের মামলায় মো. হাবিব, সাড়ে ছয় কেজি স্বর্ণের মামলায় দেলোয়ার, এক ও দুই কেজি স্বর্ণ আটকের মামলায় আতিকুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুর রউফ, রব্বানী, মিজানুর রহমান, রাজেশ, আসাদুল্লাহ, কামাল উদ্দিন ও আবুল কাশেম জামিন পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর স্বর্ণ চোরাচালান ঘটনার মামলাগুলোর তদন্তে এখনো তেমন অগ্রগতি নেই। এ রকম বেশির ভাগ মামলাই পুলিশের খাতায় 'তদন্তাধীন' থাকে বছরের পর বছর। তবে ৩১ ডিসেম্বর এক হাজার ৩৪০ ভরি স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কে এম কামরুল হাসান, উড়োজাহাজের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবু জাফর, ভারতীয় এক নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।

স্বর্ণগুলো বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর মগবাজার থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় করা মামলারও তদন্ত চলছে বলে র্যাব সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা তদন্তে দেখা গেছে, বাহকেরা স্বর্ণসহ ধরা পড়েন। কিন্তু এ চোরাচালানের সঙ্গে বিমানের কিছু কর্মী, সিভিল এভিয়েশনের কর্মী, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মী এবং অন্য কিছু লোকও জড়িত থাকেন। এরা পর্যায় অনুযায়ী টাকা বা ভাগ পান।

দেখা যায়, তদন্ত না এগোনোয় ওই ব্যক্তিরা ধরা পড়েন না, তাদের নামও জানা যায় না। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাড়ে ১৩ কেজি সোনা উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে সিভিল এভিয়েশনের কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী, বিমানবন্দরে কর্মরত জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এক মাঠ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এনএসআইয়ের ওই মাঠ কর্মকর্তা ও এক নিরাপত্তাকর্মী গ্রেফতার হলেও বাকিরা গ্রেফতার হননি।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.