দশম সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যেসব নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার সন্ত্রাস দমন আইনে করা হবে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দেশের সব দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি এ সংক্রান্ত গেজেটেও প্রকাশ করা হয়েছে। স্মর্তব্য, সংসদ নির্বাচনের পর সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, যশোর, দিনাজপুর, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়। ভোট দেওয়ার 'অপরাধে' তাদের বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট চালানো হয়। এসব ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় দেশের ভাবমূর্তি। জনমনেও দেখা দেয় ক্ষোভ। সহিংস এ ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৮ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। এতে হামলার ঘটনার বিচার 'দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে' করার জন্য জেলা দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজদের চিঠি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও প্রস্তাব দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে তা সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্বাচনে ভোট দান যে কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট নির্বাচন বর্জনের অধিকার রাখে। কিন্তু নির্বাচন বর্জনের নামে কোনো নাগরিকের ওপর হামলা বা নির্যাতন চালানোর অধিকার কেউ রাখেন না। বিশেষত নির্বাচনের পর এ জন্য বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হওয়া উদ্দেশ্যমূলক। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশে সংখ্যাগুরু-সংখ্যলঘু বিভাজন থাকা উচিত নয়। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকই সমান। হামলা, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার মতো মারাত্দক অপরাধের শিকার যারাই হোক না কেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাষ্ট্রের কর্তব্য হওয়া উচিত। আমরা আশা করব, যারা আইন হাতে তুলে নেওয়ার সাহস দেখায় এবং দেশকে মৎস্যন্যায়ের সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে নিয়ে যেতে চায় তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে অবশ্যই কড়া হতে হবে। সরকারের এই ইতিবাচক পদক্ষেপটি যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে, সেহেতু আশা করা যায় এ নির্দেশনা প্রতিপালনের মাধ্যমে আইনের শাসনের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের অঙ্গীকার রক্ষা করা হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।