জিএসপি সুবিধা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ শর্তের দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইপিজেডে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে কমিটি। কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকা জেলা প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আমিনুল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি মুস্তাফিজকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে তার অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে।
গতকাল জিএসপি ফিরে পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকা সমন্বয় সভায় এসব অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরা হয় বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতাদেশেরবিষয়টি আগামী ডিসেম্বরে পর্যালোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে ওবামা প্রশাসন যে ১৬টি শর্ত দিয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের অগ্রগতি নভেম্বরের মধ্যে জানতে চেয়েছে দেশটি। গতকাল বৈঠকে ওই শর্তগুলোর অগ্রগতি নিয়েই আলোচনা হয়। বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্বরাষ্ট্র ছাড়াও পররাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বেপজা, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ-এর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, জিএসপি পুনর্বহালের জন্য যে ১৬টি শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এর প্রায় সবগুলোতেই অগ্রগতি রয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে অগ্রগতির এসব তথ্য তুলে ধরে একটি অবস্থানপত্র যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর-এ পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে ওবামা প্রশাসন। এর পরপরই কল-কারখানার পরিবেশ উন্নত ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে ১৬টি শর্ত দিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনাও দেয় তারা। ডিসেম্বরের মধ্যে ওই শর্তগুলোর ব্যাপারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এরপরই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ওই শর্তগুলো বাস্তবায়নে একযোগে কাজ শুরু করে যার সমন্বয় করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, এসব শর্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কাজ শুরু করে দিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসব কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য সচিবকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব। ওবামা প্রশাসনের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আমিনুল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা, ২০০ কল-কারখানার পরিদর্শক নিয়োগ, চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) পুনর্গঠনের আওতায় ৩২ জন পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) পুনর্গঠনের আওতায় ২৬০ জন পরিদর্শক নিয়োগ, শিল্প এলাকায় ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকের চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, আইএলওর সহযোগিতায় ওয়েবসাইটভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি, সংশোধিত শ্রম আইনের একক মৌলিক ইংরেজি অনুবাদপ্রাপ্তি নিশ্চিত, বিসিডবি্লউএস এবং সেফের নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া, বিদ্যমান শ্রম আইন ইপিজেডে প্রয়োগ, চিংড়ি খাতে শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
অগ্রগতির তথ্য : যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, শর্ত মেনে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। ইপিজেডে কারখানার স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করার বিধানটি তুলে নেওয়া হয়েছে। শিল্প পুলিশদের শ্রম আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে (এফএসসিডি) পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ৩১০ জনে উন্নীত করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে কল-কারখানা ও ইমারত পরিদর্শকের সংখ্যাও। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৩২টি অতিরিক্ত পদের প্রস্তাব করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।