নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে প্রথম ধাপে ৯৭ উপজেলার মধ্যে ৪৪টিতে দল সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় উল্লসিত হলেও বাকি নির্বাচনগুলোতে সতর্ক থাকবে বিএনপি। তবে ভোট জালিয়াতি ও অনিয়ম না হলে ১৯ দলীয় জোট অধিকাংশ উপজেলায় জয়লাভ করত বলে মনে করে দলটি। তারপরও এই জয়কে মন্দের ভালো বলছেন দলের নেতারা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মোটামুটি সন্তুষ্ট। বুধবার রাতেই উপজেলা নিয়ে কাজ করা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। সামনের পাঁচ ধাপের নির্বাচনে বাড়তি সতর্কতার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। ওই রাতে জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের আরও বেশি উপজেলায় জেতার কথা ছিল। সরকারি দলের কারচুপির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবুও জনগণ ১৯ দলকে ভোট দিতেই কেন্দ্রে গিয়েছে।' দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার প্রথম দফা নির্বাচনে ৯৭টি উপজেলার মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোট ৫৮টিতে জয়লাভ করে। একটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ৯টি উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করে গতকাল হরতাল পালন করেছে স্থানীয় বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনে প্রশাসন ও পেশিশক্তির ব্যবহার না করলে ১০ থেকে ১২টির বেশি উপজেলায় নির্বাচিত হতে পারত না।
তবে জয়-পরাজয় নিয়ে মূল্যায়নও করছে বিএনপি। কারচুপি, ভোট জালিয়াতির পরও ৪৪টিতে জয়ের পর আওয়ামী লীগ নতুন কোনো ফন্দি অাঁটছে কি না তাও পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। তাই সামনের নির্বাচনগুলোতে সতর্কভাবে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে পরাজয়ের কারণও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বন্দ্বেও অনেক উপজেলায় পরাজয় হয়েছে। সমন্বয়হীনতা, কোন্দল এবং বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ উপজেলায় বিজয়ী হতে পারত বলে মনে করে দলটি। এদিকে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কী কী অনিয়ম করেছে এবং জোট সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বুধবার দিনভর নির্বাচনের দিন কারচুপির অভিযোগ এনে বিকাল পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ থাকলেও রাতে ফলাফল অনুকূলে আসায় খুশি তারা। এ জয়ে নেতা-কর্মীরা বেশ উদ্দীপ্ত। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশান কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের বেশ চাঙ্গা দেখা গেছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে এই চাঙ্গাভাব কাজে দেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড় বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত থাকলেও নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণেই উপজেলা সদরে চেয়ারম্যান পদটি হাতছাড়া হয়েছে। এখানে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এবং পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার হোসেনের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে। জমির উদ্দিনের সর্মথন নিয়ে প্রার্থী হন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ প্রধান। সেখানে জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে ছাড় না দিয়ে তাদের প্রার্থী হন জেলা আমির মাওলানা আবদুল খালেক। বিএনপির একটি অংশ জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে। ভোট ভাগাভাগি হওয়া আর দলীয় কোন্দলের কারণে সেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে উপজেলায় চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও সদর উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট। রাজবাড়ী সদর থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ খালেক নির্বাচিত হলেও এই জেলার অন্য দুটিতে তাদের পরাজয় হয়েছে। বালিয়াকান্দি উপজেলায় একমাত্র প্রার্থী বাছাইয়ের কারণেই হাতছাড়া হয়েছে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ভোট জালিয়াতি না করলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটত। তবে বিএনপির প্রাথমিক জয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা চাঙ্গাভাব এসেছে। এটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই। আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এই চাঙ্গাভাবকেই কাজে লাগাতে হবে। তবে কয়েকটি উপজেলায় দল-সমর্থিত প্রার্থীর আগেভাগেই ভোট বর্জন করা ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি। এসব বিষয়ে সামনের নির্বাচনগুলোতে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।