উপজেলায় জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে বাগড়া দিচ্ছেন বিএনপির জেলা নেতারাই। জেলা নেতাদের প্রায় সবাই সাবেক মন্ত্রী-এমপি কিংবা আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী। তৃণমূলে জনপ্রিয় হলেও জেলা নেতাদের 'অনুগত ও পছন্দের' না হওয়ায় তারা নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে তারা প্রার্থী নিজেদের প্রার্থী সমর্থন দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করা নেতারাও জেলার সুপারিশকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমছে না। প্রথম ধাপের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় উভয় প্রার্থী হেরেছেন। আবার কয়েকটি স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। আসন্ন ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখেও প্রার্থী বাছাইয়ে একই চালচিত্র লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলা নিয়ে কাজ করা দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব বাধার কথা জানা গেছে। সূত্রমতে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অধিকাংশ এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা পকেটের ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাচনে সমর্থন দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনেকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। জেলা নেতাদের বিরাগভাজনের কারণে উপজেলা পর্যায়ের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত নেতাদেরও অনেক ক্ষেত্রে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে না। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে এ কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেশ কয়েকটি উপজেলায় হেরেছে বিএনপি। অনেক স্থানে উপজেলার পছন্দের প্রার্থীরা বেশি ভোট পেয়েছেন। উপজেলা নিয়ে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কারও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনপ্রিয় নেতাদের পক্ষেই আমাদের অবস্থান। তবে সবকিছুই নির্ধারণ করছে জেলা বিএনপি। কেন্দ্র থেকে আমরা শুধু মনিটর করছি। সেখানে তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই উপজেলায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় জনপ্রিয় নেতা ইমাম হোসেন আবু চাঁনকে মাত্র অল্প ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এমদাদুল হক খান নির্বাচিত হন। জেলা নেতাদের চাপে কেন্দ্র থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়। সেখানে বিএনপির জেলা নেতারা সমর্থন দিয়েছিলেন আলম ভূইয়া নামে এক প্রার্থীকে। তিনি অল্প ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ঢাকার এক আইনজীবী নিজের প্রভাব দেখিয়ে জেলা ও কেন্দ্রকে ম্যানেজ করে ওই প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ছিলেন। ফলে ওই উপজেলা হাতছাড়া হয় বিএনপির। একই ভাবে আসন্ন ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ওই আইনজীবী কলমাকান্দা উপজেলায় এক অজনপ্রিয় নেতাকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। জেলা ও কেন্দ্রকে একই ভাবে ম্যানেজ করেন তিনি। সেখানে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ চৌধুরী প্রার্থী হন। তবে দুর্গাপুরের মতো ওই উপজেলাও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত আবু সাঈদ চৌধুরী নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। নেত্রকোনো বারহাট্টাইও বিএনপির দুই প্রার্থী। একজন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুলাইমান হাসান রুবেল, আরেকজন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক আজাদ। সমঝোতা না হলে এটাও হাতছাড়ার আশঙ্কা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে ঝিনাইদহের মহেশপুরে তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা শাহ জামান। সেখানে জাসাসের এক কেন্দ্রীয় নেতার হস্তক্ষেপে জেলা নেতারা সুপারিশ করছেন শাহ আলম নামে তুলনামূলকভাবে অজনপ্রিয় নেতাকে। অবশ্য সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীও ব্যাপক শক্তিশালী। শাহ জামানকে একক প্রার্থী করা হলে ওই উপজেলায় জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। আগামী ১৫ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে বরিশালের হিজলায় উপজেলা বিএনপির জনপ্রিয় নেতা আবদুল গাফফার তালুকদার। তিনি বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যানও। সেখানে জেলা থেকে বাছাই করা হয়েছে অ্যাডভোকেট শহীদ দেওয়ান নামে এক অজনপ্রিয় নেতাকে। ইউপি ও উপজেলা নির্বাচনে ইতোমধ্যে তিনি চারবার হেরেছেন। স্থানীয় নেতারা বলছেন, জেলা থেকে অজনপ্রিয় নেতাকে প্রার্থী দেওয়ায় ওই উপজেলাটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই অবস্থা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে উপজেলা বিএনপির পছন্দের প্রার্থী ব্রুনাই আশরাফ। কিন্তু জেলা বিএনপি সমর্থন দিয়েছে নান্নু শিকদারকে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে ওই উপজেলাও হাতছাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই কারণে বরিশালের বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী ও ভোলার লালমোহন উপজেলায় একাধিক প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন। আসন্ন ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থী কামরুল ইসলাম গোরা। তিনি বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতিও। ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে বাড়ি হওয়ায় তার একটি শক্তিশালী অবস্থানও রয়েছে। অন্যদিকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে শরিফুল কামাল কারিমকে। জেলা কারিমের পক্ষে অবস্থান নিলেও ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় গোপন ভোটে কামরুল ইসলাম গোরা বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। দুই প্রার্থী থাকার কারণে এই উপজেলাটিও বিএনপির হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জেও একই অবস্থা। সেখানে বিএনপির দুই প্রার্থী নির্বাচন করছেন। উপজেলা বিএনপির সমর্থন নিয়ে অ্যাডভোকেট মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ নির্বাচন করলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আরেক নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু। অবশ্য আওয়ামী লীগেও সেখানে দুই প্রার্থী রয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াতেরও একজন প্রার্থী রয়েছেন। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জেলা বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবদুল হান্নান। সেখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শওকতুল হক সপু। জেলা বিএনপির প্রার্থী তৃতীয় স্থানে ছিলেন। জেলার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ওই উপজেলাটি হাতছাড়া হয় বলে স্থানীয় নেতারা জানান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।