আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপির সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর টানাপোড়েন



বিএনপির সঙ্গে জোটের শরিক ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শুরু হওয়া এ টানাপোড়েন দিন দিন বাড়ছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির সখ্য টিকে থাকা-না থাকা নিয়েও একরকম সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটে ধর্মভিত্তিক চারটি দল রয়েছে। সেগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপি এখন আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চাচ্ছে যে জোটের শরিক হলেও ইসলামপন্থী দলগুলো বিএনপির ওপর ততটা প্রভাব রাখে না বা দলগুলোর ওপর বিএনপি নির্ভরশীল নয়। এ কারণে বিএনপি দৃশ্যত একধরনের দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। জামায়াত ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম থেকে সুস্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিএনপির প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবের পর থেকে দলটির নেতারা এমন মনোভাব দেখাচ্ছেন। এতে ইসলামপন্থী দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছে।
সর্বশেষ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো বিএনপির কাছে গুরুত্ব পায়নি।

বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এ নির্বাচনের প্রথম দফার ৯৭ উপজেলার মধ্যে ২৮টিতে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিএনপির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। আবার ইসলামী ঐক্যজোট কয়েকটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাঁদের দল থেকে প্রার্থী দিতে চেয়েও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে সাড়া পায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের মনোমালিন্যের সূত্রপাত হয় ১৫ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে। ওই দিন জোটের অন্যান্য নেতার সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীও।

কিন্তু বসার চেয়ার না পেয়ে তিনি রাগ করে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। বিষয়টি তখন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের নজরে আনা হলেও তাঁরা গুরুত্ব দেননি। এরপর খালেদা জিয়ার ৫ ফেব্রুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েও ইসলামী ঐক্যজোটের কোনো নেতা যাননি।
এরপর ২০ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯-দলীয় জোটের নির্বাচনোত্তর প্রথম সমাবেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে আসতে নিষেধ করা হয়। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ কারণে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ওই সমাবেশে যায়নি। তবে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা মুজিবুর রহমান পেশওয়ারি সমাবেশে গেলেও বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি তাঁর উপস্থিতির কথাও মাইকে বলা হয়নি। কিন্তু জোটের বাকি শরিক দলগুলোর নেতারা বক্তৃতা করেছেন। এতে খেলাফত মজলিসের নেতারা ক্ষুব্ধ হন।


জমিয়তের নেতারা জানান, তাঁদের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস অনেক দিন ধরে কারাগারে আছেন। তাঁকে মুক্ত করার জন্য জোটের প্রধান শরিক বিএনপির কাছ থেকে কোনো আইনি সহায়তা মেলেনি। এ জন্য জমিয়তের মধ্যেও ক্ষোভ আছে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের দাবি, বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তাঁরা হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার এবং সরকারি সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারিতে আছেন। কোনো কোনো দলকে জোট থেকে বের করে আনতে সরকারি মহল থেকে তৎপরতাও আছে।

এ অবস্থায় বিএনপির এড়িয়ে চলার মনোভাব তাঁদের হতাশ করেছে। কেউ কেউ বিকল্প চিন্তা করছেন। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়েছে।
জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বিএনপির সঙ্গে ইসলামপন্থী শরিক দলগুলোর মানসিক দূরত্ব সৃষ্টির কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জোটে থাকা ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিএনপির সম্পর্কে মোহমুক্তি ঘটতে যাচ্ছে।


দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা জানান, সম্পর্কের এ টানাপোড়েন জোটের ভাঙনের পর্যায়ে যাবে কি না, তা নির্ভর করছে বিএনপির ওপর। নিজেরা জোট থেকে বেরিয়ে গেলে তাঁদের সরকারের ‘দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে। তাঁরা এই অপবাদ নিতে চান না।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, শরিকদের ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ আগেও ছিল। কিন্তু এখন তা প্রকট হয়েছে।

এ অবস্থায় জোটের চেয়ে দলীয় কার্যক্রমে তাঁরা বেশি উৎসাহী বলে তিনি জানান।
জোটের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনের পর থেকে জোটে জামায়াতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ তৎপর রয়েছে। এ অংশ মনে করে, দেড়-দুই বছর ধরে জামায়াত রাজপথে যে সহিংস আন্দোলন করেছে, তাতে দলটি সম্পর্কে দেশ-বিদেশে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এ কারণে দলটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে বিএনপি। এ কারণে জামায়াতও বিএনপির ওপর অসন্তুষ্ট।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.