আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমলা কাহিনী

স্যার, আপনি তো দেখছি সাংঘাতিক ওস্তাদ মানুষ!

মন্ত্রী সাহেব ইদ্রিস আলীর কথায় ভীষণ খুশি। তার চেহারায় খুশিতে গদ গদ ভাবটা ফুটে ওঠে। তিনি আরও কিছু তেলমারা শব্দ শুনতে চাচ্ছেন। তিনি বুঝে গেছেন, ইদ্রিস আলী তেল মারতে ওস্তাদ। তার মতো লোক মন্ত্রণালয়ে দরকার আছে।

কাজের ফাঁকে একটু করে তেল মারবে। আর তাতে কর্মস্পৃহা বহুগুণ বেড়ে যাবে। তেল যেমন ইঞ্জিন সচল রাখে, মানুষও তেমনি প্রশংসা শুনলে তরতাজা হয়ে ওঠে।

মন্ত্রী সাহেব ইদ্রিস আলীকে কিছু বলবেন বলে ঠিক করছিলেন। তার আগেই ইদ্রিস আলী জানতে চাইলেন, স্যার, আমার কথাটা শুনে আপনি একেবারে চুপ হয়ে গেলেন? আমি কথাটা কি খারাপ বলেছি স্যার?

না না।

খারাপ কেন হবে? আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনি এত চমৎকার করে বললেন!

স্যার, আপনি এত অল্প সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একেবারে কাছের মানুষ হয়ে যাবেন তা আমি ভাবতেও পারিনি। মন্ত্রণালয়ের কতগুলো প্রজেক্টের কাজ একসঙ্গে অনুমোদনও করিয়ে আনলেন। এটা স্যার সবার পক্ষে সম্ভব না। এটাই আপনার বিশেষত্ব।

আরে! এ তো কেবল শুরু! দেখেন না আরও কী করি!

স্যার তা আপনাকে বলতে হবে না। আপনি যে কর্মপাগল মানুষ তা আমরা আগেই টের পেয়েছি।

তাই নাকি! খুব ভালো কথা। তা আর কী কী টের পেয়েছেন? আপনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। আপনার মেধা ও মনন দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে স্যার।

আর যখন যা লাগবে, আমাকে বলবেন স্যার। আমি সব ব্যবস্থা করব।

ধন্যবাদ। খুব খুশি হলাম।

ওয়েলকাম স্যার।

আমি এখন যাই স্যার?

না না; বসেন। আপনি আমার সঙ্গে খাবেন। প্রতিদিনই আমার সঙ্গে দুপুরের খাবার খাবেন। বাসা থেকে আমার নানা আইটেমের খাবার আসে। রান্না ভালো।

খেয়ে মজা পাবেন।

স্যার, আপনি এত ভালো!

ভালোর দেখছেন কি? আপনি শুধু আমার সঙ্গে থাকেন। কাজেকর্মে হেল্প করেন। দেখবেন, আপনার ভাগ্যটাও খুলে যাবে।

জি স্যার।

আপনি আমাদের গার্ডিয়ান স্যার। আপনি ছাড়া কে দেখে রাখবে স্যার। আপনিই তো দেখে রাখবেন।

হ্যাঁ। সেটা যেন মনে থাকে।

মনে থাকবে না মানে! অবশ্যই থাকবে স্যার। আপনি যে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন; এতেই আমি ধন্য স্যার। আমার জীবন ধন্য!

ইদ্রিস সাহেব, পারিবারিক বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানা হলো না। আপনার কয় ছেলেমেয়ে?

দুই ছেলে স্যার।

ওরা কোথায় আছে, কি করছে?

স্যার, বড় ছেলেটাকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে পাঠিয়েছি।

আর ছোটটা একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুুলে পড়ে।

তাই নাকি!

জি স্যার।

আপনার তো তাহলে অনেক টাকা খরচ হয়! তাই না?

জি স্যার। মাসে দুই লাখ টাকার মতো।

বলেন কী! এত টাকা! তার মানে আয় রোজগার তো তাহলে ভালোই করছেন!

স্যার, আপনার দোয়া স্যার।

আরে! এখনো তো দোয়া করতে পারলাম না! তার আগেই তো মাশাল্লাহ আপনি বেশ আছেন! দোয়া এবং দাওয়া পেলে না জানি কী করেন!

ইদ্রিস সাহেব হাসলেন। হাসতে হাসতে বললেন, স্যার যে কী বলেন!

দেখেন, নাক ডুবিয়ে খাবেন না যেন! তাহলে কিন্তু অকালেই মারা পড়ে যাবেন!

স্যার, আপনার মতো বটবৃক্ষ যার মাথার ওপর, তার কোনো চিন্তা আছে! আমি স্যার বিন্দুমাত্র চিন্তা করি না।

বোঝেন না কেন! সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, বুঝলেন! পচা শামুকে যেন পা না কাটে!

জি স্যার। আমার খেয়াল আছে।

আর শোনেন, প্রজেক্টগুলোর খবর কি?

সব ঠিক আছে স্যার। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। নতুন প্রজেক্ট শুরু হলেই সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

চলেন, খেতে খেতে কথা বলি!

জি স্যার।

মন্ত্রী সাহেবের পেছনে পেছনে হাঁটছেন আর হাত কচলাচ্ছেন ইদ্রিস আলী।

মন্ত্রী সাহেব খাওয়ার টেবিলে বসে নানা আইটেম দেখিয়ে বললেন, দেখলেন তো ইদ্রিস আলী! কত পদের খাবার? বাজারের বাছা কই, আইড়, পাবদা আর গলদা চিংড়ি। সঙ্গে আছে ছোট মাছের চচ্চরি, গরুর মাংস ভুনা আর ঘন ডাল। পেট ভরে খান। আর মন দিয়ে কাজ করেন। আমি ভাই গিভ এন্ড টেকে বিশ্বাসী।

দিয়ে থুয়ে খাই। বুঝতে পারছেন! জানেনই তো! এখনকার যুগে নির্বাচন মানেই ১০ কোটি টাকা খরচ। পার্টি ফান্ডে পাঁচ আর ভোটারসহ অন্যদের পেছনে পাঁচ কোটি খরচ। এ ছাড়া কেউ নির্বাচনে জিতে আসতে পারবে না। সম্ভবই না!

বলেন কী স্যার!

হুম, সত্যি বলছি।

আপনাদের মতো রাজনীতিবিদদেরও যদি এত টাকা খরচ হয় তাহলে অন্যদের কী অবস্থা!

সে কী আর বলতে হবে! হিউজ! ১৫/২০ কোটি টাকাও খরচ হয়। এই টাকা তুলতে হবে না!

ওসব নিয়ে ভাববেন না তো স্যার! দশগুণ তুলে দেব।

এই! আস্তে আস্তে! দেয়ালেরও কান আছে! কেউ শুনে ফেলবে।

ইদ্রিস আলী এবার ফিস ফিস করে বলেন, এবার যাই স্যার। বেশি সময় আপনার সঙ্গে থাকলে মানুষ সন্দেহ করবে।

বলবে, ইদ্রিস আলীর সঙ্গে মন্ত্রীর এত কিসের সম্পর্ক!

দূর! রাখেন তো ওসব মানুষের কথা! পাছে লোকে কিছু বলে। নিন্দুকেরা পেছনেই বলবে। ও আপনি কোনোদিন বন্ধ করতে পারবেন না।

তা ঠিক স্যার। তারপরও সাবধানে থাকা ভালো।

আপনিই তো বলেন, খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে!

ঠিক আছে যান। সব কিছু বিবেচনা করে কাজ করেন।

ইদ্রিস আলী খাওয়ার টেবিল থেকেই বিদায় নিল। নিজের রুমে গিয়ে ইদ্রিস আলী কফির অর্ডার দেন। তার পিওন টেবিলে কফি দেওয়া মাত্রই খুব আয়েশ করে চুমুক দেন তিনি।

মনে হচ্ছে রাজ্যের প্রশান্তি পেলেন তিনি। মনে মনে ভাবেন, আমার কাজ হয়ে গেছে। স্যার পটে গেছেন। এখন শুধু টাকার খেলা চলবে। দুই হাতে টাকা আর টাকা।

স্যারের টেন আর ফাইভ পার্সেন্ট আমার। বাকিরা ফক্কা! হা হা হা!

ইদ্রিস আলীর হাসির রেশ কাটতে না কাটতেই তার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন সচিব সাহেব। টিপ্পনি কেটে বললেন, এখন আর আমাকে দরকার নেই, তাই না? মন্ত্রী পেয়ে গেছেন। আর আমাকে কী দরকার!

ইদ্রিস সাহেবের গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। তিনি চেয়ার থেকে উঠে ছুটে গেলেন তার কাছে।

তারপর বললেন, স্যার! স্যার আমার ওপর কেন শুধু শুধু রাগ করছেন? স্যার, আমি যদি ভুলভ্রান্তি করে থাকি তাহলে ক্ষমা করেন। ভবিষ্যতে আর করব না। কিন্তু আমি আপনার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না স্যার!

সচিব সাহেব হাসলেন। কিছু বললেন না। ইদ্রিস সাহেব থর থর করে কাঁপছেন।

তিনি ভয়ে রীতিমতো কাতর। সচিব সাহেব ইদ্রিস সাহেবের রোগটা ভালো করেই ধরেছেন। তিনি অল্প প্রাণের মানুষ। চুরি-চামারি যারা করে তাদের হার্ড হয়তো দুর্বল থাকে। ইদ্রিস সাহেবের অনিয়ম-দুর্নীতি অন্যায় অপকর্ম সম্পর্কে সচিব সাহেব জানেন।

তাই তাকে তিনি ভীষণ ভয় করেন। সব সময় সমীহ করে চলেন। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর তার সাহস কিছুটা বেড়েছে। সেটা টের পেয়েই সচিব সাহেব তাকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন। তা না হলে ইদ্রিস সাহেব সচিব সাহেবেরও ক্ষতি করতে পারেন।

সচিব সাহেব ইদ্রিস সাহেবের কাঁধে হাত রেখে বললেন, কী ব্যাপার, আপনার চেহারা এমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল কেন? কোনো সমস্যা?

না স্যার। কোনো সমস্যা নেই। স্যার, কফি খাবেন, কফি!

না।

অন্য কিছু খাবেন? রসমালাই?

না না। আমি কিছু খাব না।

আপনি এত অস্থির হবেন না। আর এসব করে আমাকে ভজানোর চেষ্টা করবেন না।

স্যার, কী যে বলেন!

ঠিক আছে। ঠিকঠাক মতো কাজ করেন। আর আপনি না বললেন, আমার বাসায় লোক যাবে।

কই, কোনো লোক তো যায়নি।

বলেন কী স্যার! যায়নি? যাবে স্যার, আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো একটা ঝামেলায় পড়েছিল। তাই যেতে পারেনি।

ওকে।

দেখি কাল আবার কোন ঝামেলার কথা বলেন!

না স্যার। কাল না গেলে আমি যাব। যে করেই হোক, আমি সব ব্যবস্থা পাকা করেই আপনার বাসায় যাব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন স্যার।

সচিব সাহেব আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন।

ইদ্রিস সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। আর মনে মনে বলেন, লোকটা বড়ই খতান্নাক লোক। নিজেকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। ব্রিফকেস পায়নি। তাই হালকা হুমকি দিয়ে গেল।

মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এটা তার পছন্দ হচ্ছে না। পছন্দ হবেই বা কেন? আগে একনায়কের মতো মন্ত্রণালয় চালিয়েছে। সবাইকে দাবড়ে বেরিয়েছে। সেটা তো আর সম্ভব হবে না।

তাই তার এত ঈর্ষা! আমার নামও ইদ্রিস আলী। কাকে কিভাবে ঘায়েল করতে হয় তা আমি খুব ভালো জানি।

ইদ্রিস সাহেব বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তার রুমে ঢুকলেন কয়েকজন কন্ট্রাক্টর। তারা কয়েকটি প্রজেক্টের কাজের সঙ্গে জড়িত।

তাদের একজনের হাতে একটি কালো ব্রিফকেস। তিনি এক ফাঁকে ইদ্রিস সাহেবের টেবিলের পাশে ব্রিফকেসটি রেখে বললেন, স্যার এটা মিনিস্টার সাহেবের।

ইদ্রিস সাহেব হাসি হাসি মুখ করে বললেন, ও তাই! খুব ভালো হলো। আমি আজই সন্ধ্যায় তার বাসায় যাব। সচিব সাহেবও তো কেমন কেমন যেন করছেন! তার ব্যাপারটাও ভাবেন।

তিনি আজকাল সোজা কথাও বাঁকা করে বলেন।

লোকটা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, স্যার, এটা তো তার করার কথা না। তার পার্সেন্টেজ তিনি কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিয়েছেন।

তাহলে এমনভাবে টিপ্পনি কাটার মানে কি?

হয়তো আপনার সঙ্গে একটু দুষ্টুমি করেছে। তার বিষয় নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।

তিনি আমাদের লাইনের লোক।

তাহলে ওনার ব্যাপারটা আপনাদের ওপর থাকল। আমি ওনাকে নিয়ে ভাবব না। আমার দায়িত্ব মন্ত্রীকে ম্যানেজ করার। ওকে?

জি স্যার।

যান, এবার বাড়ি যান। কফি খাবেন নাকি?

আরেকজন লোক বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল, না স্যার। আজ না। আরেকদিন।

তাহলে খোদা হাফেজ।

আমারও বের হতে হবে।

কন্ট্রাক্টররা বিদায় হওয়ার পর ইদ্রিস সাহেবও বাসার উদ্দেশে রওনা হলেন। তিনি প্রজেক্টের পাজেরো গাড়িতে চড়েন। সচিবের গাড়ির চেয়ে তার গাড়ি অনেক বেশি দামি। সচিব চড়েন টয়োটা করোলা।

সম্ভবত এ কারণেই সচিব তাকে খুব বেশি ঈর্ষা করেন। ইদ্রিস সাহেব গাড়িতে বসতে বসতে এরকম ভাবনাই ভাবলেন। তারপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রজেক্ট থেকে তাকেও একটা ব্র্যান্ড নিউ পাজেরো দিতে হবে। তাহলে আর কোনো দিন টিপ্পনি কাটবে না। আমার সঙ্গেও কোনো রকম শত্রুতা করবে না।

হাজার হলেও সচিব। ইচ্ছা করলেই ক্ষতি করে দিতে পারে।

গাড়ি বাসার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এমন সময় ইদ্রিস সাহেবের হাঁক। গাড়ি ঘোরাও! মন্ত্রীর বাসায় যাব।

ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে মিন্টো রোডের দিকে রওনা হলো। তারপর বলল, স্যার, আমাদের মন্ত্রীর বাসায় যাবেন?

ইদ্রিস সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন, আর কোথায় যাব?

জি স্যার।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ড্রাইভার গাড়িটি মন্ত্রীর বাসার সামনে নিয়ে রাখল। ইদ্রিস সাহেব ব্রিফকেস নিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন। মন্ত্রীর এপিএস কামরান ইদ্রিস সাহেবকে নিয়ে মন্ত্রীর কাছে চলে যায়।

যেতে যেতে বলে, স্যার, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছেন।

আমি জানি।

জি স্যার। স্যারের বাইরে একটা প্রোগ্রাম আছে। প্লিজ স্যার, আপনি বেশি সময় নেবেন না।

তাহলে প্রোগ্রামে যেতে দেরি হয়ে যাবে।

আমার সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। দেরি হলে প্রোগ্রাম বাতিল করেন। বুঝতে পারছেন?

কিন্তু স্যার বলেছেন, উনি প্রোগ্রামে যাবেন।

তাহলে যাবেন!

জি স্যার।

এরমধ্যেই মন্ত্রীর রুমে গিয়ে উপস্থিত হলেন ইদ্রিস সাহেব। তাকে দেখেই মন্ত্রী সাহেব বললেন, ইদ্রিস সাহেব, আসেন আসেন! এপিএসকে লক্ষ্য করে বললেন, কামরান, আমার খুব কাছের মানুষ। ভালো করে নাশতা দিতে বলো।

জি স্যার।

কামরান নাশতা আনতে গেল।

ইদ্রিস সাহেব ব্রিফকেসটা মন্ত্রীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, স্যার, এটা রাখুন।

মন্ত্রী ব্রিফকেসটা হাতে নিয়ে বললেন, আরে আরে! কী দরকার ছিল!

ইদ্রিস সাহেব বললেন, দরকার আছে স্যার। রেখে দেন। স্যার, এসব বিষয়ে এপিএস যেন কিছু না জানে। এরা মানুষ ভালো না।

যে পাতে খায় সে পাতে হাগে।

ঠিক বলেছেন। আমার আরেকজন কেবিনেট কলিগকে তার এপিএস যেভাবে ফাঁসিয়েছে! এরপর আবার এপিএস! না না! ওই ভুল আমি করব না।

স্যার, আমার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। আমি আপনার ফাইন্যান্সিয়াল দিকটা দেখব।

ঠিক আছে; তাই হবে।

আমি তাহলে যাই স্যার? আপনার আবার প্রোগ্রাম আছে।

নাশতা করবেন না?

আজ থাক।

ওকে তাহলে খোদা হাফেজ।

ইদ্রিস সাহেব মন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলেন।

গাড়িতে বসে ফোনে কাকে যেন আরেকটি নতুন পাজেরো কেনার নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন, রাতেই যেন গাড়ি কেনা হয়। খুব সকালে তিনি সচিব সাহেবের বাসায় যাবেন।

পর দিন সকালে ইদ্রিস সাহেব সচিব সাহেবের বাসায় গাড়ি নিয়ে হাজির। সাতসকালে ইদ্রিস সাহেবকে দেখে অবাক সচিব সাহেব।

তিনি বিস্ময়ের সুরেই বললেন, কি ব্যাপার ইদ্রিস সাহেব! এই সাতসকালে!

স্যার, ডিস্টার্ব করলাম স্যার! এই গাড়িটা কেমন?

নতুন গাড়ি! চমৎকার! কার জন্য?

আপনার জন্য স্যার।

আমার জন্য!

জি স্যার। আপনার জন্য। ইটস এ গিফট!

বলেন কী! এত বড় গিফট পাওয়ার যোগ্য আমি!

কী যে বলেন স্যার! আরও বড় কিছু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

সচিব সাহেব হাসলেন।

তারপর বললেন, ধন্যবাদ।

আমি যাই স্যার। অফিসে যাব।

ওকে আমিও আসছি।

গাড়ি দেখে সচিব সাহেবের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

ইদ্রিস সাহেব তার দিকে একবার তাকালেন। তারপর গাড়িতে উঠলেন। অফিসে যেতে যেতে ভাবেন, মন্ত্রী-সচিব দুজনই এখন আমার কব্জায়। আর আমাকে ঠেকায় কে!

ইদ্রিস সাহেব মন্ত্রী-সচিবের সহযোগিতায় নিজের বিত্তবৈভব যেমন বাড়িয়েছেন, তেমনি পদপজিশনও বাগিয়েছেন। কিন্তু তার অন্যায়, অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির জন্য কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি।

এতটুকু অাঁচড়ও লাগেনি। চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সচিবের চেয়ারে বসে কেবল তৃপ্তির ঠেকুর তোলেন। আর মনে মনে বলেন, আমার চেয়ে আর সুখী মানুষ পৃথিবীতে আর কে আছে!

হঠাৎ সচিবের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ইদ্রিস সাহেব থতমত খেয়ে বললেন, কে কে!

সচিব সাহেবের পিএস মামুন রুমে ঢুকে বলে, স্যার, দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

বললেন, জরুরি কথা আছে।

বিস্ময়ের সঙ্গে ইদ্রিস সাহেব বললেন, দুদক থেকে!

জি স্যার।

বলো কী!

ইদ্রিস সাহেব ভীষণ অস্বস্তিবোধ করছিলেন। তিনি কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। মাঘ মাসের শীতের সকালেও তিনি গরম অনুভব করলেন।

তার কপালে ঘাম জমতে শুরু করল। তিনি শুধু মনে মনে বললেন, হায় খোদা! আমার সারা জীবনের অর্জন কি এক নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে যাবে!

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.