স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল জামাত নেতাদের যুদ্ধপরাধের বিচার তথা ফাসি হতে রক্ষার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন কিন্তু প্রশ্ন হল বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ । একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন কোন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা কতটুকু আন্তর্জাতিক রীতিনীতিতে যুক্তিযুক্ত বা শোভনীয় ?
শুধু এটুকু নয়, তুরস্কের একটি বেসরকারী প্রতিনিধিদলও ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে সফর করেছে যুদ্ধপরাধীদের বিচার ট্রাইবুন্যাল পর্যবেক্ষন ও এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত গ্রহন করার লক্ষ্যে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল সেই প্রতিনিধী দলটিও বাংলাদেশে সরকারের কোন অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি । সরকারের পক্ষ থেকে তুরস্কের রাস্ট্রদুতকে ডেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে যে ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা না ঘটে আর বন্ধুপ্রতীম দেশহিসাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন নীতিতে তুরস্ক যেন হস্তক্ষেপ না করে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন নীতিতে হস্তক্ষেপ করে তুরস্কের লাভটা কি বা কেন তুরস্ক বাংলাদেশের মত স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীন নীতিতে হস্তক্ষেপ করতেছে তা ভাল করে জানা দরকার।
এটা সর্বজনবিদীত যে আধুনিক তুরস্ক হল পশ্চিমাদের মিত্র। আজকের তুরস্কের ক্ষমাতসীন ইসলামিক দল জাস্টিস অ্যন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি নিজেদের ইসলামিক দাবী করলেও তারা নিজ দেশে কতটুকু ইসলাম কায়েম কেরেছেন সেটা জানা যাবে একটা উদাহরন দিয়েই । তুরস্কের বর্তমান ইসলামী সরকারের নেত্রীত্বাধীন হলেও তুরস্কে এখন পর্যন্ত হিজাব রাস্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ !!!
তুরস্কে ন্যাটোর অন্যতম সদস্য আর সারা বিশ্বে ন্যাটোর ভূমিকা কারো অজানা থাকা নয়। এই ন্যাটোই লিবিয়াতে হামলা করে লিবিয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে আর এখন তুরস্ক সিরিয়ায় পালন করতেছে পশ্চিমাদের মোসাহেবের ভূমিকায় । সিরিয়া হল আরব রাস্ট্রগুলির মধ্যে একটি অগ্রগামী দেশে ।
সেখানে সরকার বিরোধী আন্দোলনকেই সুযোগ হিসাবে গ্রহন করছে তুরস্ক। সরকার বিরোধী আন্দোলন রাতারাতি পরিণত হয় স্বশস্ত্র বিদ্রোহে। তুরস্ক আফগানিস্থান ও মুসলিম বিশ্ব থেকে তালেবান, আল কায়েদা, ওহাবী, সালাফি সন্ত্রাসীর বিমানে করে নিয়ে এসে নিজ ভূ-খন্ডে প্রশিক্ষন দিয়ে পাঠাচ্ছে সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতন ঘটাতে। এরফলে সিরিয়া জড়িয়ে পড়েছে গ্রহযুদ্ধে আর সিরিয়া এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
তুরস্কের সঙ্গে আছে পশ্চিমা বিশ্ব, সৌদি ও শেখ আমীর শাসিত আরব রাস্ট্রগুলি যাদের পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মত কোন মেরুদন্ডই নেই আর এইসব প্রত্যেকটি দেশে আছে যুক্তরাস্ট্রের সেনাঘাটি।
আসলে তুরুস্ক বর্তমানে চাচ্ছে পশ্চিমাদের ছত্রছায়ায় থেকে মুসলিম বিশ্বে র্যডিক্যালদের সহায়তা করে মুসলিম বিশ্বের নেতা হতে !
গত শতকে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা ঘটিয়েছিল তুরস্ক। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্ক প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছিল—এখন পর্যন্ত যার বিচার হয়নি।
আর্মেনীয় গণহত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যার অনেক মিল। পাকিস্তানিরা যেমন স্বীকার করে না, তেমনি তুরস্কও স্বীকার করে না। আজও আর্মেনীয়রা লড়ছে সেসময় যে গণহত্যা হয়েছিল তার স্বীকৃতি পেতে।
আর্মেনীয় গণহত্যা শুরু হয়েছিল প্রায় ২৫০ জন বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকে কেন্দ্র করে। এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তখনকার অটোমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাত পাশা।
যে তুরস্ক বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর নিপীড়নমুলক দেশের তালিকায় আছে, যে তুরস্ক ১৯৯৯ সালে তাদের দেশের কুর্দি বিদ্রোহী নেতা আব্দল্লাহ ওকলানকে ফাসি দিয়েছে বাদ বাকি বিশ্বের অনুরোধ সত্তেও, কুর্দী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তুরস্কের যে অবস্থান সে কথা খেয়াল আছে কি ? মাঝে মাঝে তো বিমান হামলা করে অগণিত নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করে তুরস্ক। যে তুরুস্কের সীমান্তে প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম স্থাপন করতেছে ন্যাটো কি জন্য ? তার প্রতিবেশীদের আক্রমন করার জন্য নাকি আত্মরক্ষার জন্য ? একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ কি করে অন্যদেশের সৈন্য ও অস্ত্রকে নিজ ভূমিতে জায়গা করে দেয় প্রতিরক্ষার জন্য ? এর কোন উত্তর আছে কি ? সেই তুরস্ক কিভাবে বাংলাদেশের মত স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে ?
শুধু বাংলাদেশ নয় এই তুর্কির এক মন্ত্রী ইরাকের স্বার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইরাকের কুর্দিস্থান সফর করেছিল আর এর ফলে পরবতীর্তে ইরাক সরকার তুর্কি মন্ত্রীর বিমানবহরকে নিজ ভূমিতে ল্যান্ড করতে দেয়নি ।
তুরস্ক ইসরায়েলকে স্বাগত জানাইছে ন্যাটোতে অংশীদারী হওয়ার জন্য ।
এটা তো মা্ত্র এই কয়েকদিন আগের খবর !!! অথচ সেই ইসরায়েলই তার নাগরিকদের ২০১০ সালে হায়েনারমত গুলি করে হত্যা করেছে !!
গাজায় ইসরায়েলে নির্বিচারে গণহত্যা চালালো । তুরস্কের কি ভূমিকা ছিল ? সাহস ছিল গাজাবাসীর জন্য একটা বুলেট পাঠাতে ? আর সিরিয়ায় তো দেধারছে পাঠাচ্ছে অস্ত্র !!!
বলবেন, তুরস্কের মাথা অত গরম নয় !! তা তো ঠিকই..তাহলে ইরানের মাথা গরম ? কারন ইরান হামাসকে ফজর ৫ ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে সহযোগীতা করে ইসরায়েলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে যার ফলে যুদ্ধবিরতি ত্বরান্বিত হয়েছে ।
ফ্লোটিলায় যে তুর্কি নাগরিকদের ইসরায়েল হত্যা করল এর বিনিমেয়ে তুরুস্ক কি করতে পেরেছে ? লোক দেখানো ইসরায়েলের রাস্ট্রদুতকে তেল আবিবে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কি করতে পেরেছে ? তুরস্কের সামনে সেসময় দুইটা পথ খোলা ছিল যা ঐ ধরনের ঘটনায় যেকোন আত্মসম্মানবোধ রাস্ট্রই করত। এক. ইসরায়েলেল বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষনা করা . দুই, ইসরায়েলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা । আর আমার কাছে দুই নম্বরটাই বেটার হত।
কিন্তু তুরস্ক তা করেছে কি ? কারন তার তো মেরুদন্ড নেই করবে কিভাবে ?
কথা এখানেই শেষ নয় । তুরস্কের খায়েশ জেগেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য ফিরে পেতে। তুরস্কের পররাস্ট্রমন্ত্রী দাভতোগলু একাধিকবার বলেছেনও সে কথা । বলেছেন তুরস্ক নিজেকে ওসমানীয় সাম্রজ্যের উত্তরাধিকারী মনে করে। কথাটা বলেছিলেন তিনি মালয়শিয়া সফরে।
প্রতিবেশী দেশগুলি হবে তার অনুগত রাস্ট্র আর বাদ বাকী মুসলিম রাস্ট্রগুলি হবে তার সেবাদাস ! আর সেটা তুরস্ক করবে পশ্চিমাদের তোষন করেই । এতে মুসলিম বিশ্বের কি লাভ ?
আসলে বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব হয়েছে দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে আছে তুরস্ক ও সৌদির নেতৃত্বাধীন যুক্তরাস্ট্র ও ইসরায়েলের সেবাদাস মুসলিম বিশ্ব আর অন্যদিকে হল নিপীড়িত মুসলিম বিশ্ব যারা পক্ষে আছে সবসময় ন্যায়বিচার, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।