প্রায় দুই বছর আগে চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু শিল্পের সুযোগ-সুবিধা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
পাশাপাশি এফডিসির উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে সরকার কর্তৃক অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পার হলেও এখনো এ উন্নয়ন আলোর মুখ দেখেনি। যদিও ইতোমধ্যে কিছু যন্ত্রপাতি এসেছে কিন্তু তা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বা আধুনিক এফডিসি গড়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকায়ন এবং শিল্পী সংকট তো রয়েই গেছে। এ প্রসঙ্গে নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হলেও একমাত্র প্রেক্ষাগৃহের করমুক্তি ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা এখনো পাওয়া যায়নি। এটি দুঃখজনক। এ ছাড়া এফডিসির উন্নয়নে ২০১১ সালে সরকার প্রদত্ত প্রায় ৬০ কোটি টাকা শুধু টেন্ডার আহ্বান ও বাতিলের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথম কিস্তিতে ক্যামেরা ক্রয়ের ৯ কোটি টাকা টেন্ডার জটিলতায় ফেরত গেছে। শুনেছি শীঘ্রই ক্যামেরাসহ নানা যন্ত্রপাতি আসছে এবং কিছু জিনিস ইতোমধ্যে এসে পেঁৗছেছে। তবে এভাবে ধীরগতিতে এ প্রকল্পের কাজ চললে নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবেন নির্মাতারা। এফডিসি বা চলচ্চিত্র শিল্পের কোনো উন্নয়নই হবে না। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, শিল্পের কোনো সুযোগ-সুবিধা চলচ্চিত্রকাররা এ পর্যন্ত পাননি। শুধু প্রেক্ষাগৃহের ট্যাঙ্ মওকুফ করা হয়েছে। শিল্প সুবিধার পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যাংক ঋণসহ এই শিল্পের উন্নয়নে পূর্ণ শিল্প সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত। কিন্তু এ বিলম্ব চলচ্চিত্রকাররা মেনে নেবেন না। অন্যদিকে এফডিসির উন্নয়নে প্রাপ্ত সরকারি অর্থ অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে টেন্ডার আহ্বান, বাতিল ও সরকারের কাছে টাকা ফেরত যাওয়া এবং যন্ত্রপাতি কেনার নামে এফডিসির এমডির ঘন ঘন বিদেশ সফরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান বলেন, চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা শুধু প্রেক্ষাগৃহের ট্যাঙ্ মওকুফের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অথচ শিল্পের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন হলে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যাংক ঋণ পাওয়া যেত। এতে উৎপাদন বাড়ত। ফলে চলচ্চিত্র শিল্পী এবং এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা উপকৃত হতেন। চলচ্চিত্রের সোনালি দিন ফিরে আসত। আসলে চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিলেও এর সুযোগ-সুবিধা এখনো আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমরা শুধু বিশ্বাস নিয়েই নিঃশ্বাস ফেলছি। চলচ্চিত্র নির্মাণ-সংক্রান্ত যে কোনো কাজের জন্য এখনো আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। এতে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নির্মাতাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র শিল্প টিকে থাকতে পারে না। এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে ২০১১ সালে একনেকের বৈঠকে ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে এখনো ডিজিটাল হয়নি এফডিসি। অর্থ বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী তিন অর্থবছরে তিন কিস্তিতে এ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসাবে প্রথম কিস্তি অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরের টাকা পাওয়া যায় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রথম কিস্তির অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুটি ক্যামেরা কেনার জন্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি টাকা। কিন্তু টেন্ডার ড্রপকারী প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্রে ক্যামেরা ও ডেলসোমিটার মেশিন সম্পর্কে অসামঞ্জস্য তথ্য থাকায় এফডিসি কর্তৃপক্ষ এ দুটি বিষয়ের টেন্ডার বাতিল করে এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, টেন্ডার ড্রপের পরে ক্যামেরা ও ডেলসোমিটার মেশিনের অর্থ বাদ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি চেক নেওয়া হয়। এ টাকার মধ্যে কালার এনালাইজার মেশিন, প্রিন্টিং মেশিন, মাইক্রোবাস এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বাকি ৪৭ লাখ টাকা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১২-১৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই অর্থ দিয়ে দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কালার গ্রেড সুট মেশিন, একটি ডিজিটাল এডিটিং মেশিন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তাও যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি। এ বিষয়ে এফডিসির প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে ডাবিং, প্রিন্টিং মেশিন, লাইট, কালার অ্যানালাইজারের যন্ত্রাংশ এসে পেঁৗছেছে। ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে যন্ত্রাংশগুলো আমদানি করেছে আরটিআই নামক একটি প্রতিষ্ঠান। অল্প সময়ের মধ্যে আসছে ডিজিটাল এডিটিং মেশিন, তিনটি ক্যামেরা ও সেন্টার স্টোর সিস্টেম। এতে ব্যয় হচ্ছে ১১ কোটি টাকা। প্রকল্প কর্মকর্তা আরও জানান, আগে ফেরত যাওয়া অর্থ আবার মন্ত্রণালয় থেকে ফান্ড রিলিজ করানো হয়েছে। এদিকে চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, মাত্র ৫৯ কোটি টাকা দিয়ে এফডিসিকে ডিজিটালাইজড করা মোটেও সম্ভব নয়। কারণ নব্বই দশকের শেষ ভাগে যখন এই প্রকল্প পরিকল্পনাটি সরকারের কাছে পেশ করা হয় তখন ডিজিটাল করার কথা এতে উল্লেখ ছিল না। একনেক সেভাবেই অর্থ বরাদ্দ দেয়। এখন যা হবে তা হচ্ছে ডিজিটালের নামে জোড়াতালি দিয়ে একটি হ-য-ব-র-ল ব্যবস্থা তৈরি করা। কারণ এ প্রকল্পে ডিজিটাল ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ পোস্ট প্রোডাকশনের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, এফডিসিকে যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা যায় সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন করে মোট অর্থের অতিরিক্ত ১৭ পার্সেন্ট টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে এবং আধুনিকায়নের সময়সীমা ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এদিকে চলচ্চিত্রকাররা সরকারের কাছে শীঘ্রই শিল্প সুবিধা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তাদের কথায় এই সুবিধা না পেলে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।