আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলবোর্ড সমাচার**

বিলবোর্ড খুঁজতে খুঁজতে বাসায় এলো কুদ্দুস। পছন্দের বিলবোর্ডের নিচে সিটি করপোরেশনের ময়লার কন্টেইনার। পচা-গলা ভাত তরকারির ওপরে রোমান্টিকতা চলে না। নাক চাপা দিয়ে প্রোপোজ হয় না। সামনে এগোতেই বড় একটা বিলবোর্ড। সবই ঠিক আছে, কিন্তু নিচে কমপক্ষে পঞ্চাশ-একশো 'দাবাং'-এর পোস্টার। দেখা যাবে যাকে প্রোপোজ করার সে এসে দাবাং-এর পোস্টার দেখছে মনোযোগ দিয়ে। বাই দ্য ওয়ে, দাবাং ভালো হইছে। বিনোদন সার্ভিস দেওয়ার লোক যোগ হলো। কুদ্দুসের দুই ফ্রেন্ড। তারাও বিলবোর্ড দিয়ে প্রোপোজ করে আজ সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। সে তাই প্রতিদিন বিকালে অফিসের পর বিলবোর্ড খুঁজতে বের হয়। কিছু কমন বিলবোর্ড আছে। তারা বিলবোর্ড ভাড়া দেয়। 'আমার অনেক কাশি, তোমায় ভালোবাসি' টাইপ বিলবোর্ড। বার্থ ডে উইশ, বিয়ের প্রোপোজাল, বিয়ের ইনভাইটেশন, এমন কি ব্রেক আপের জন্যও বিলবোর্ড ভাড়া হয়। পরশু এমন একটা বিলবোর্ডে কুদ্দুস লেখা দেখেছে, 'সরি মফিজ। তোমার প্রেমের ভাঙতি নাই। সাইডে চাপো।' একটা সময় ছিল, বাপ-মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেত। কয়েক কেজি মিষ্টিই যথেষ্ট ছিল। চিঠি প্রজন্ম এলো। নীল খামে চিঠি। এসএমএস, স্কাইপ ইনবঙ্ প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এলো স্পোর্টস কার, ডিএসএলআর প্রজন্ম। এখন বিলবোর্ড প্রজন্ম। যুগ খুবই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। বিলবোর্ড দিয়ে প্রোপোজ না করা এখন মান ইজ্জতের ব্যাপার।

: হ্যালো কুলসুম?

: হু।

: ইয়ে... আজ তোমাকে মালিবাগ রেলগেটের বিলবোর্ড দেখতে বলছিলাম...

: হু।

: সারা দিনে দশ বার বলছ...

: দেখছ?

: হ্যা।

: কেমন লাগল?

: আমি সাবান দিয়ে কি করবো কুদ্দুস? তাও আবার বল সাবান?!

বুক ধড়াশ করে ওঠে কুদ্দুসের। বাঁশ খেয়েছে সে। বিলবোর্ডটা সন্ধ্যায় গিয়ে কেন চেক করে আসলো না, সে তার জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলো। বলল, আশে পাশের বিলবোর্ডগুলো চেক করেছো?

: হু।

: সুন্দরী মডেল বাথটাবে হাসি মুখে গোসল করছে। আরেকটায় চানাচুর খেয়ে খুশি প্রজন্মের ছবি।

: ওহ, কিছু বলবে না?

: আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো একটা বিলবোর্ডে বলার।

: ইন্টারেস্টিং!

একটা বিলবোর্ডের জন্য কুদ্দুসের জীবন প্রায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আইডিয়া খুব খারাপ জিনিস। ভাইরাসের মত। একবার মাথায় ঢুকলে আর বেরোয় না। কোন কালে বিলবোর্ড দিয়ে কেউ প্রোপোজ করলো, আর তা চলে গেলো নিউরনের শেকড়ে শেকড়ে। জিনিসটা খুবই কিউট ছিলো। কিন্তু এখন কেমন যেন তেতো লাগে। যাই হোক, পরশু বিলবোর্ডটা নিজে চেক করে তারপর ফোন দেবে কুদ্দুস। এভাবে জীবন নষ্ট হতে পারে না তার।

: হ্যালো, কুলসুম...

: বলো

আজও বিলবোর্ড...

: আজ অন্য রোড দিয়ে এসেছি। ঐ রোডে জ্যাম ছিলো

: শিট...

: বিলবোর্ড বাদ দেও। তোমাকে একটা কথা বলা হয় নাই। মজনুকে চেনো না? ও গতকাল আমাকে প্রোপোজ করছে।

: প্রোপোজ? বিলবোর্ড কোথায় পেলো?

: বিলবোর্ড না। গুলশান দুই এর চক্করের বড় টিভিতে ও প্রোপোজ করছে। হাউ রোমান্টিক...।

ঢাকা শহরে বেশী বড় বড় টিভি নেই। গুলশানে... ফার্মগেটে.... আর মনে করতে পারে না কুদ্দুস। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুদ্দুস। কুলসুম হাতছাড়া হয়েছে তার জন্য না। গুলশানের বড় টিভির ভাড়া কত হবে তা ভেবে। জীবন এত কষ্টের কেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.