ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ আট সাংবাদিক নেতাকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রুল থেকে অব্যাহতি পেয়েছে দৈনিক সমকাল ও নয়া দিগন্ত। গতকাল বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অভিযোগের নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন। এদিকে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আজ রায় দেবেন হাইকোর্ট।
ডিআরইউর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য সাংবাদিকরা হলেন ঢাকাস্থ বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এম জসিম ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কাজী মোবারক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এম সুজাউল ইসলাম। এর মধ্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একই ব্যক্তি। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে সাংবাদিকদের সততা নিয়ে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের অসত্য বক্তব্যের প্রতিবাদ ও প্রকাশকে কেন্দ্র করে দৈনিক সমকাল সম্পাদক, প্রকাশক, নয়া দিগন্ত সম্পাদক, প্রকাশক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি, সম্পাদক, ঢাকার বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, সম্পাদকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সাংবাদিক সমিতির নেতাদের তলবও করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাত সাংবাদিক নেতা হাইকোর্টে হাজির হন। এদের মধ্যে বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে চিকিৎসকের সনদ দাখিল করা হয়। সাংবাদিকদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ড. শাহদীন মালিক। নয়া দিগন্তের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম।
হাইকোর্টে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের হট্টগোল : আদালত অবমাননার মামলায় হাইকোর্টে হাজিরা দিতে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে এজলাসে আইনজীবীদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। অ্যানেঙ্ ভবনের ২০ নম্বর বিচারকক্ষে গতকাল এ ঘটনার সময় হট্টগোলে বিচার কার্যক্রম কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। সাংবাদিকদের পক্ষে অভিযোগ করা হয়, কিছু আইনজীবী মামলায় হাজিরা ও দায়িত্ব পালনে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে অহেতুক বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে গালাগাল-ধাক্কাধাক্কি ও হেনস্তা করেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরুর সময় আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিচারকক্ষে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি শুরু হয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তারা সাংবাদিকদের বিচারকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ জানালে আইনজীবীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। আইনজীবীরা বিচারকক্ষের ভেতরেই সাংবাদিকদের গালাগাল ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতারা উসকানিমূলক আচরণ থেকে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বেঞ্চের বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদ এজলাস ত্যাগ করেন। সোয়া ১১টা পর্যন্ত বিচারকক্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলে। পরে নেতাদের হস্তক্ষেপে সাংবাদিকরা বিচারকক্ষের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালে সেখানেও আইনজীবীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। হট্টগোলের জের ধরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শুনানি বন্ধ ছিল। সাংবাদিক নেতারা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে বেলা ১২টার দিকে আদালতের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে সাংবাদিকদের সততা নিয়ে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও প্রকাশকে কেন্দ্র করে দৈনিক সমকাল ও নয়া দিগন্তের সম্পাদক ও প্রকাশক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকাস্থ বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে গতকাল আট সাংবাদিককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
প্রথম আলোর বিষয়ে আজ রায় : দৈনিক প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আজ রায় দেবেন হাইকোর্ট। চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন। উচ্চ আদালত থেকে হওয়া জামিন আদেশ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি 'এক মিনিটে একটি আগাম জামিন কীভাবে' ও ১ মার্চ 'ছয় থেকে আট সপ্তাহের স্বাধীনতা' শিরোনামে মিজানুর রহমান খানের দুটি নিবন্ধ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। ২ মার্চ ওই দুটি নিবন্ধ নজরে আনা হলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে আরেকটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারির পাশাপাশি মিজানুর রহমান খানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।