মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর চারদিন পেরিয়ে গেলেও এর কোনো হদিস পায়নি অনুসন্ধানকারী দল। প্রিয়জনের অপেক্ষায় থাকা আপনজনেরও কান্না থামছে না। তবে এত দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ার পর বিমানটির কোনো খোঁজ না মিললেও আরোহীদের স্বজনরা আশা ছাড়তে নারাজ। এদিকে গতকাল মালয়েশিয়ান বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সর্বশেষ সামরিক রাডারে ধরা পড়েছে, বিমানটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে চলে গেছে। তার পরেও বিমানের আরোহীদের স্বজনদের আশা স্বজনরা ফিরে আসবে।
এদিকে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে চাউর হয় দুই ব্যক্তি ভুয়া পাসপোর্টে বিমানে উঠেছেন। ধারণা শুরু হয় জঙ্গি সম্পৃক্ততার। সেই দুজনের একজনের পরিচয় উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি একজন ইরানি যুবক। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা নেই।
অপরজনের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পুলিশপ্রধান ইন্সপেক্টর জেনারেল খালিদ আবু বকর বলেন, ১৯ বছর বয়সী ইরানি তরুণের কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, জার্মানিতে বসবাসকারী ইরানি যুবকটির মায়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। ওই মা তার ছেলের জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছার আশায় ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, ওই তরুণ বেইজিং হয়ে জার্মানি ভ্রমণ করত।
সেখানে সে আশ্রয় প্রার্থীর আশা করছিল বলে পুলিশ জানায়। এদিকে ফের গতকাল দাবি ওঠে নিখোঁজ বিমানটির হদিস পাওয়া গেছে দেশটির পূর্ব উপকূলে মালাক্কা প্রণালিতে। যদিও সরকারিভাবে এ দাবির ঘোষণা দেয়নি মালয়েশিয়া প্রশাসন। দেশটির বিমান বাহিনীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়, কাটা ভারু এলাকা থেকে মালাক্কা প্রণালির দিকে ঘুরে গিয়েছিল বিমানের মুখ। সেই সময় বিমানটির উচ্চতাও কমিয়ে ফেলা হয় বলে ধারণা।
বিমানটির অবস্থান শনাক্তকরণের লক্ষ্যে এখন উদ্ধার অভিযান মূলত মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূল ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল দেশটির সরকার বিমানটি খুঁজতে আরও বড় এলাকাজুড়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। বিমানটির খোঁজ পেতে কমপক্ষে ৪০টি জাহাজ ও ৩৪টি বিমান এবং কয়েকটি দেশের অনুসন্ধানকারী দল অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন। গতকাল থেকে অবশ্য চীনের ১০টি স্যাটেলাইট বিমানটি খোঁজার কাজ শুরু করেছে। সোমবার শোকাহত মানুষ রাজধানী কুয়ালালামপুরে জড়ো হয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের সঙ্গরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করেছেন।
বেইজিং ও কুয়ালালামপুরে বিমানটির আরোহীদের আত্দীয়স্বজন বিমানটির ভাগ্যে কী ঘটেছে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমানটি শনিবার সকালের দিকে ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে আচমকা রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর থেকে এটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ বিমানযাত্রীদের ফোন বাজছে! ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের পরিবারের সদস্যরা ফোন করেছেন স্বজনদের। অন্তত ১৯ জন দাবি করেছেন, তাদের মোবাইল ফোনে রিং হয়েছে।
কিন্তু কেউ ফোন তোলেননি।
এদিকে হারিয়ে যাওয়া বিমানের যাত্রীদের মোবাইল ফোনে রিং বাজছে- স্বজনদের এমন দাবির পর চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিখোঁজ যাত্রীদের একজন স্বজনকে টেলিভিশন স্টুডিওতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নিখোঁজ যাত্রীর নম্বরে ফোন করলে নম্বর সংযুক্ত হয় এবং রিং বেজে ওঠে। তবে কেউ ফোন ধরেননি। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই দৃশ্য লাইভ সম্প্রচার করেছে।
বিয়ান লিয়াঙগুই নামের এক তরুণী বলেন, ১০ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি তার ভাইকে মোবাইলে ফোন করার চেষ্টা করেন। ফোনটি সংযুক্ত হয় এবং টানা রিং বেজে যায়। দুপুর ২টায় আবার ফোন করেন এবং ফোনটি বাজতে শোনেন।
বিয়ান বলেন, ফোনে যেহেতু রিং হচ্ছে তাহলে পুলিশ নিশ্চয়ই গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের মাধ্যমে মোবাইল ফোনটির অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে। তিনি নম্বরটি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স এবং চীনের পুলিশকে দিয়েছেন।
নিখোঁজ বিমানের উদ্ধারকাজে অংশ নিল চীন
মালয়েশিয়ান বিমানের খোঁজ পেতে চীন ১০টি স্যাটেলাইট মোতায়েন করেছে। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার চার দিনের মাথায় বেইজিং এ উদ্যোগ নিল। গতকাল দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে এ কথা জানানো হয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিন জ্যাং মালয়েশিয়াকে এ ব্যাপারে আগ্রহের কথা আগেই জানিয়েছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ বিমানটি উদ্ধারে ৯টি দেশের উদ্ধারকারী দল অংশ নিয়েছে, যারা মালাক্কা প্রণালি থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছে।
চীনের পত্রিকার খবরের বরাত দিয়ে পিটিআই জানায়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চীনের স্যাটেলাইটগুলো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, যোগাযোগ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়ক বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করবে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে তৎপরতা আরও জোরদার করতে মালয়েশিয়ার প্রতি আহবান জানিয়েছে চীন। এএফপি, বিবিসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।