পুঁজিবাদী শাসন কাঠামোর সুফল বলি আর কুফল বলি না কেন এর মুল লক্ষ্য হল, অর্থ উপার্জন এবং বাণিজ্যকরন । এই উদ্দেশ্য চরিথার্থ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপই সে গ্রহন করবে তা যতই দৃষ্টিকটু বা সমাজের জন্য ক্ষতিকারক হোক না কেন । সাধ্যের সবটুকু সে প্রয়োগ করবে মুলত তার চাওয়া পাওয়া কে অর্জন করার জন্য । “প্রচারেই প্রসার” – এই মূলমন্ত্র কে পুঁজিবাদী শ্রেণী বেশ ভালভাবেই আয়ত্ত করতে পেরেছে । তাই প্রচারের নিমত্তে গণমাধ্যমের সাথে গড়ে উঠেছে তাদের গভীর মিতালী ।
আর গণমাধ্যমও সেই সুযোগ গ্রহন করেছে আনন্দ চিত্তে । কিন্তু এই মিথোজিবিতার দরুন সমাজের তথা দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন কত টুকু হচ্ছে তা বিবেচনার দাবি রাখে ।
সম্প্রতি বোন মারো ট্রান্সপ্লান্ট প্রযুক্তি বাংলাদেশে এসেছে । এর গুরুত্ব উপলব্ধি করার মত হয়ত গণমাধ্যম দেশে আছে কিনা সন্দেহ । যদি থাকত তাহলে পাটের জিনোম আবিস্কার এর মত এটি সব পত্রিকার হেডলাইন হত ।
ধন্যবাদ মাননিয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে । তিনি নিজে সংবাদ সম্মেলন না করলে এটা বোধহয় কাজি জাফরের সংবাদ সম্মেলনের মত পিছনের পাতায় ছবি সর্বস্ব খবর হয়ে থাকত । এখন দেখার বিষয় মিডিয়া এই অস্থি প্রতিস্থাপন প্রযুক্তিকে কিভাবে হাইলাইট করে । কতটি প্রতিবেদন করে । সমস্যা হল ডাক্তার –সাংবাদিক হল সাপে নেউলে সম্পর্ক ।
এখন দেখার বিষয় সাংবাদিক সমাজ ডাক্তার দের সাথে সংশ্লিষ্ট এটার ভিতর দেশপ্রেমের কিছু খুজে পায় কিনা । দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর কাছে এই চিকিৎসা প্রযুক্তিরসুযোগ আর সম্ভাবনার কথা কতটুকু পৌছাতে পারে।
সংশয় নিয়ে বললাম । তার অবশ্য কারন আছে । প্রফেসর এম এ ফয়েয একবার আমাদের ক্লাস এ দুঃখ করে বলেছিলেন , ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা কিংবা সাপে কাটা রোগীর বিশ্বমানের চিকিৎসার পথিকৃৎ হল বাংলাদেশ ।
আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষাকারী এই চিকিৎসা আবিস্কার বিষয়ক খবর মিডিয়াতে আসে না । একটা সেমিনার এর ছবি ও তার ক্যাপশন , আর এক কলাম নিউজ দিয়েই পত্রিকাগুলো দায়সারা ভাবে তাদের দায়িত্ববোধ পালন করেছে । আর ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম তো আরেক কাঠি সরেশ । সেমিনারে অতিথি হিসাবে আগত রাজনৈতিক নেতার বিরোধি দলের বিরুদ্ধে দেয়া বক্তব্যের অংশ বিশেষ দেখিয়েই সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরার চেস্টা করে ।
স্যার আরেকদিন দুঃখ করে বলেছিলেন , মুসা ইব্রাহিম রা হিমালয়ের উপরে উঠে দেশের কি উপকার হল জানি না , তবে আমার গবেষণায় হাজার লোক বেঁচে উঠবে এই সান্তনাটুকু তো আমার থাকল ।
তবে প্রত্যেকেই তাদের কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন চাই । হয়ত মিডিয়া এর মাঝে দেশের কোন কল্যাণ খুজে পায়নি তাই এর প্রচার হয় নি ।
ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ র একটা কথা আছে , যে দেশে গুনের কদর নেই, সে দেশে গুনি জন্মাতে পারে না । আসলেই তাই । তাই দেশ সেরা মেধাবীরা যায় দেশের বাইরে ।
ইউরোপ আর আমেরিকাতে এই দেশের মাটি , হাউয়া আর পানিতে বেড়ে উঠা বঙ্গ সন্তানেরা সাফল্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখছে । আর আমরা এতটাই নির্বোধ যে , তাদের নিয়ে শুধু গর্ব করার মধ্যেই আত্মতৃপ্তি খুজি কিন্তু তাদের কে প্রাপ্য সম্মান আর কাজ করার সুযোগ দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি না ।
আজ চিন্তা করে দেখুন ত , সর্ব শেষ কবে একটা ভাল খবর শুনেছেন । সিলেটের ড্রোন নির্মান নিয়েও পানি কম ঘোলা হয়নি । একটা ভাল প্রচেষ্টাকে কিভাবে গনমাধ্যম তার মায়াবি জালের ফাদে ফেলে নস্ট করে দেয় তার প্রকৃত উদাহারন হল এই ড্রোন নির্মানের ঘটনা ।
মিডিয়া যদি প্রথম থেকেই এটাকে ড্রোন হিসাবে ঘোষণা না দিয়ে বলত, ড্রোন নির্মানের প্রথম প্রচেষ্টার প্রথম ধাপ তাহলে এটা নিয়ে এত বিতর্ক হত না ।
মুলত আমাদের গণমাধ্যম গুল সমেবেত পতাকা , সমেবেত সঙ্গীত , লাল সবুজ পোশাক আর রম্নার বটমুলে আচার সর্বস্ব দেশপ্রেম খুজে ফিরে । কিন্তু এই আচার সর্বস্ব আর সংখ্যাতাত্ত্বিক বিষয়গুলোর মাঝে দেশের কি উপকার আছে তা এই গণমাধ্যম আজও আমাকে বুঝাতে পারে নি । হইত বুঝতে পারি নি । আমারি অক্ষমতা ।
ফ্যাশন হাউজ আর মোবাইল কোম্পানির এই কর্পোরেট দেশ প্রেম কি পারবে সত্যিকার ভাবে আমার দেশের নাম বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠা করতে? আমেরিকা , ভারত , চীন , সিঙ্গাপুর ,কিংবা মালেয়েশিয়ার মত শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে ?
আপনার উত্তর যদি হয় , কেন পারবে না ? কারন আমাদের আছে মানবপতাকার অতীত রেকর্ড , সমাবেত জাতীয় সঙ্গীত এর ভবিষ্যৎ রেকর্ড , বিরোধী দল হীন সংসদ , সবচেয়ে লম্বা আলপনা আকার রেকর্ড আর ক্রিকেট খেলা নিয়ে কাইন্দা ভাসানো আবেগ ........................
তাহলে কিছু বলার নেই ............কারন অই যে অ্যালেকজান্ডার বলেছিল “ সেলূকাস , বিচিত্র এই দেশ। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।