আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারও হুমকিতে পোশাক খাত

আবারও হুমকির মুখে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। জিএসপি সুবিধা (পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) প্রত্যাহার হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে যোগ হয়েছে নতুন সমস্যা। বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শন নিয়ে এখন মালিকরা শঙ্কিত। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র অভিযোগ, পরিদর্শনের নামে দুই জোটের কর্মকর্তারা সংস্কারের সময় না দিয়েই তাদের কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এদিকে দেশের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মনে করলেও তারা কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি ঘোষণার পর এখনও অনেক কারখানায় তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অ্যাকর্ডের বন্ধ করে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কারখানায় অগ্রিম বেতন না দিয়েই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অগ্রিম বেতনের দাবি ও কাজ হারিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ইতোমধ্যে জমতে শুরু করছে ক্ষোভ।

জিএসপি পুনর্বহালের সংশয় : প্রতিবেশি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের পর এখন ভারতও পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে জিএসসি সুবিধা পেতে যাচ্ছে এ কারণে দেশের পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জিএসপি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। আমেরিকান ফেডারেল অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এফএলসিআইও) বাংলাদেশের জিএসপি বাতিলের জন্য ২০১২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতরে (ইউএসটিআর) রিট পিটিশন দাখিল করে। আর এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর এবং ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। এ সুবিধা ফিরে পেতে কারখানা মালিক ও সংশ্লিষ্টদের নতুন ১৬টি শর্ত দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর থেকে। আগামী মে মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে দেশের জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রানা প্লাজায় ধসসহ নানাবিধ কারণে জিএসপি স্থগিত করা হয়। এদিকে সম্প্র্রতি সাংবাদিকদের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মোজেনা জানান, ট্রেড ইউনিয়নসহ আরও কিছু শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের জিএসপি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি। মার্চের মধ্যে যদি শিল্প মালিকরা এ শর্ত পূরণ করেন তবে জিএসপি অব্যাহত থাকবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি জানান, জিএসপি ফিরে পেতে ১৬ শর্তের মধ্যে বাকি আছে গার্মেন্ট খাতে ডেটা ও পরিদর্শক নিয়োগ। আর তা চলতি মাসে করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জুনের মধ্যে জিএসপি ফিরে পাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

কর্মপরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট ইইউ : বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় অগ্রগতি হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। ঢাকায় ইইউর প্রতিনিধি দলের প্রধান উইলিয়াম হানা ৯ মার্চ সিরডাপ মিলনায়তনে নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, শ্রম নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। কেন আমরা সন্তুষ্ট হব? তবে গত বছর রানা প্লাজা ধসের পর এ খাতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, আরও অনেক কিছু করতে হবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দুজন সদস্য এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা আসছেন। তারাও পোশাক খাতে অগ্রগতির বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তখন প্রথম প্রশ্নই আসবে রানা প্লাজায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না বিষয়টি তার কাছে স্পষ্ট নয়। কারখানা ভবন পরিদর্শন, শ্রম আইন সংস্কার ও শ্রমিকদের নূ্যনতম বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পরিবর্তন হচ্ছে, তবে ধীরে ধীরে।'

বিজিএমইএর অভিযোগ : বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনকারীদের নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে কারখানা মালিকদের। বিজিএমইএ নেতাদের অভিযোগ, পরিদর্শনের নামে অনেক পুরনো কারখানাকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বন্ধ করে দিচ্ছেন তারা এবং এ জন্য তারা কোনো সময় দিচ্ছেন না। পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ উন্নতির নামে একটি গোষ্ঠী এ শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। বিজিএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট সহিদুল্লাহ আজিম বলেন, জোটের পরিদর্শন শেষে সংস্কারের পরিকল্পনা দেওয়ার কথা, এরপর সময় দিয়ে সেগুলোর উন্নতি করতে হবে। এ জন্য তহবিল দেওয়ার কথা। কিন্তু এগুলো না করেই অ্যাকর্ড তড়িঘড়ি কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে।

শ্রমিক বিক্ষোভ : এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর বন্ধ করে দেওয়া গার্মেন্টগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। শনিবার মিরপুর ১২ নম্বরের সফট ট্যাঙ্ কারখানা অ্যাকর্ড কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর কর্তৃপক্ষ অগ্রিম বেতন পরিশোধ না করলে তারা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া যেসব কারখানায় এখন শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়িত হয়নি তারাও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.