সকাল ৯ টা
রেজা সাহেবের মুড বরাবরের মত ভালো। রাহেলা বেগম কে ডেকে এক কাপ চা দিতে বললেন তিনি। উপর থেকে ধুপধাপ আওয়াজ আসছে, শুনে ভুরু খানিকটা কুঞ্চিত হলো তার। উপরের তালা টা তার ছেলে শুভ্র কে ছেরে দেয়া। ছেলেটা পড়াশুনা ছারা আর কিছুই বুঝে না, বাবার পায়ের শব্দ ও তার মনোযোগ নষ্ট করে দেয়।
বাবা শূভ্র, গম্ভীর গলায় ডাকলেন ছেলে কে রেজা সাহেব।
বাধ্য ছেলের মত সামনে এসে দারালো তার গর্ব শূভ্র। তার কথার একচুল এদিক ওদিক করে না। যদিও গতবার বিগ্রে গিয়েছিলো হয়তো কোন বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে, বাবাকে বলার সাহস পায়নি, বড্ড ভয় পায় ছেলেটা বাবাকে। গর্বে খানিক টা ফুলে উঠলো রেজা সাহেবের বুক।
এই না হলে ছেলে, বাবা মার প্রতি ভয় তো এক ধরনের শ্রদ্ধা।
রাহেলা অর্থাৎ রেজা সাহেবের স্ত্রী যখন জানালেন তাকে তিনি শুভ্র কে ডেকে ঠান্ডা গলায় জিগেস করলেন "তুমি নাকি গিটার কিনে চেয়েছো ?"
জবাবে কিছু না বলে সবসময়ের মতই মাথা নিচু করে ছিলো শূভ্র। সেই শেষ, আর কোনদিন কোন অকুম্মে আবদার দেখা যায়নি শূভ্রের মধ্যে।
বাস্তবে ফিরে আসলেন রেজা সাহেব। উপরের শব্দ টা থেমে গেছে।
শুভ্র সামনে মাথা নিচু করে দারিয়ে।
- কিছু বলবে শূভ্র ?
-বাবা আমি ভার্সিটি যাবো।
- ও আচ্ছা, গাড়ি নিয়ে যাও, আর শুনো, বাইরের কোন খাবার খাবে না।
- জী আচ্ছা।
....................................
সকাল ১১.৩০।
রেজা সাহেবের মন আজ বেশ ভালো। তিনি একজন সুখি মানুষ। জীবনের দাড়প্রান্তে এসে উপলব্ধি করেছেন তার অপুর্নতা বলে কিছু নেই। রেজা সাহেবের আজ মন ভালো। মন ভালো থাকলে রেজা সাহেব বাজার করতে বেরোন।
আজো ব্যাতিক্রম হলো না। গাড়ি করে যাবা হবে না, তা তার গর্বের ছেলেকে নিয়ে গেছে, হেটেই বের হলেন বাসা থেকে।
রিক্সাওয়ালা গুলো মহা বজ্জাত, এদের দরকারের সময় খুজে পাওয়া যায় না। পেলেও আচরনে ধরে চাবকাতে ইচ্ছে হয়।
..............................
সকাল ১১.৪৮।
একটা মিছিল আসছে , এদের কি খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই? কোথায় কে কবে কি করেছে , তা নিয়ে মাতামাতি, ফাসি চাই ফাসি চাই। আরে দেশ কি মগের মুল্লুক নাকি। চাইলেই হয়ে গেলো। রেজা সাহেব যথেস্টই বিরক্ত এখন। অনেক টা বাধ্য হয়েই চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলেন তিনি।
ভাবলেন সে সময়ের কথা। কতকিছু নাকি হয়ে গেছে। রেজা সাহেবের বাবা বুদ্ধিমান লোক ছিলেন, পাসপোর্ট আগেই করানো ছিলো। ছেলে সহ পাড়ি জমালেন দুরদেশ, মা আগেই মারা গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে আসলেন অনেক পরে।
এসেই ব্যাবসা খুলে বসলেন রেজা সাহেবের বাবা। উন্নতি করতে লাগলেন দ্রুত। আজ সে ব্যাবসা ফুলে ফেপে উঠেছে যোগ্য ছেলের হাতে। রেজা সাহেব দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যাক্তিত্ত এখন। শুভ্র তার যোগ্য ছেলে ।
মিছিল টা সামনে এসে যাওয়ায় মনোযোগ বিগ্নিত হলো রেজা সাহেবের। ফাসি ফাসি ফাসি চাই বলে তাকে পার করে চলে গেলো মিছিল টা।
...........................
সকাল ১২.০৩।
রেজা সাহেব চায়ের দোকানে বসে আছেন। তার নিজেকে খুব হালকা লাগছে।
মনে হচ্ছে পায়ের নিচে মাটি নেই। তার সমস্ত বিশ্বাস আজ গুরোগুরো হয়ে গেছে।
মিছিলের সবার সামনে অগ্নিকন্ঠে স্লোগান দেয়া ছেলেটা তার। আর শূভ্র.....................
[ শাহরিয়ার শিমুল] ১৪/৩/২০১৪ রাত ১১.০৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।