আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুধুই আগুনে পোড়া মানুষের আর্তনাদ

'ভাই আমারে একটু সরাইয়া দেন, আমারে সোজা কইরা দেন, ডাক্তাররে ডাকেন। আমার শরীর ঠাণ্ডা কইরা দিতে কও। অ ভাই... ভাইরে... আমি সিদ্ধ অইয়া যাইতাছি। আমার দম আটকাইয়া যাইতাছে। আমি আর বাঁচুম না। ভাই আমারে মাফ কইরা দিস ভাই।' গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের বিছানায় শুয়ে এভাবেই যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন লেগুনাচালক মোজাম্মেল (১৯)। তার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছেন তার ফুফু আরজুদা বেগম। মোজাম্মেলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও। শৈশবে বাবা মারা গেছেন। অন্ধ মা আর বড় ভাই সোহেলের সঙ্গে নন্দীপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দুই ভাইয়ে খ্যাপ করে বনশ্রী থেকে নন্দীপাড়া লেগুনা চালিয়ে সংসার চালান। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ট্রিপ যাত্রী নিয়ে নন্দীপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। বনশ্রী মসজিদ মার্কেটের সামনে যাত্রী নামাতে গাড়ি দাঁড়ালেই অবরোধ সমর্থকরা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই পুড়ে যায় গাড়ি আর ঝলসে যায় তার দুই হাত, আর বুকসহ শরীরের অনেকাংশ।

মোজাম্মেলের পাশের সিটে শুয়ে আছেন হরতালের আগুনে পোড়া আবদুর রহিম। ১২ নভেম্বর রায়েরবাগে গাড়িতে আগুন দিলে ঝলসে যায় তার শরীর। যন্ত্রণায় তিনিও কাতরাচ্ছেন। এ প্রতিবেদককে দেখে আর্তনাদ করে বলেন, 'এ দেশের রাজনীতি আমাদের জন্য অভিশাপ বয়ে এনেছে। আমার সংসার থেমে গেছে। কয়দিন পর হয়তো আমার জীবনও থেমে যেতে পারে। আমি আর পারছি না।' পাশের আরেক ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সিএনজি অটোরিকাশাচালক সাবেদ আলী। তার দিকে মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে শিশু আরিফ। ছোট্ট ওই শিশুটি জানে না আসলে তার বাবার কী হয়েছে। পরশু বাবা তাকে আদর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারপর আরিফ যখন বাবাকে দেখেছে, তখন বাবার শরীর সাদা ব্যান্ডেজে মোড়া। পুড়ে মুখের কিছু অংশ হয়ে কালো হয়ে গেছে সাবেদ আলীর। পাশে বসা স্ত্রী আলেয়া খাতুন অসহায় দৃষ্টিতে কাঁদছেন। বিরোধী দলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার (আজ আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে) অবরোধে পিকেটারদের আগুনে পুড়েছেন আরও চারজন। যারা দিন এনে দিন খায়। যাদের সংসার চলে অটোরিকশা বা লেগুনা চালিয়ে। ১৮-দলীয় জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে শুরু হয়েছে এর আগে তিন দফা হরতালের মতো একই ধরনের সহিংসতা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের আর্তনাদ-চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতার আগুন, পেট্রলবোমা এবং ককটেল বা বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আটজন। আরও চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক। শুধু এরা নন, হরতাল-অবরোধে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে চোখে গুরুতর জখম নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন পুলিশ সদস্য দুলু মিয়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.