আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদিন গভীর রাতে

একদিন গভীর রাতে

সে হাটছে শুন্যে। অপূর্ব একজন স্বর্গীয় মানুষের হাত ধরে। স্বর্গীয় মানুষটি জিজ্ঞাসা করছে

কোথায় ব্যাথা তোমার?

সে তলপেটে হাত দিয়ে দেখাল। মানুষটি তার হাত রাখল যন্ত্রনার জায়গায়। আহ কি শীতল হাত শীতল অনুভূতি।

আর কোন ব্যাথা নেই। এই অবস্থায় সে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল। পরপর কয়েকদিন হল সে এক আজানা মানুষকে স্বপ্নে দেখছে। মিরাকলের মত ই স্বপ্নের আগন্তক তার ব্যাথায় স্থানে স্পর্শ দিয়ে যায় এর পরের দিন আর তার কোন ব্যাথা বোধ হয়না।

সে এখন শুয়ে আছে হসপিটালের বেডে অনেকটা অচেতনের মত।

পেইনকিলার ও স্লিপিং পিলের বদৌলতে। সিভিয়ার আলসারের ব্যাথায় অসহ্য হয়ে আগের সপ্তাহে এই হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। হসপিটাল ডাক্তার এদের রকম সকম দেখে সে ভীষন নার্ভাস হয়ে পড়েছে। প্রথমে মনে করেছিল যেটাকে হালকা আলসারের পেইন ডাক্তারদের হাজার রকমের টেষ্টে সে ভীষন ঘাবড়ে গিয়েছে। অবশ্য তার কলিগ এর কাছে শুনেছে হসপিটালে ভর্তি হলে প্রাইমারী সব ব্লাড টেষ্ট তারা করে নেয়।

এতে নাকি নার্ভাস হওয়ার কিছু ই নাই। সে আছে এখন টরন্টো ইষ্ট জেনারেল হসপিটালে।

পরেরদিন তাকে দেখতে আসল গ্যাষ্ট্রোলজি ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বড় ডক্টর জেন প্রেসলী।
কথায় কথায় যা জানল তার কোলন ক্যানসার। তার আয়ু বেধে দেওয়া হয়েছে আর মাত্র একবছর।



সারা পৃথিবী বিস্বাদ হয়ে গেল তার মুহূর্তে। অতি ভয় মৃত্যূ কে মৃত্যূ যন্ত্রনা। তাকে বলা হল এই বছরখানিক এই হসপিটালের নিয়মানুযায়ী চলতে পারে বা দেশে ও ফিরে যেতে পারে। তবে এখানে থাকলে ভাল হবে।

মাঝে মাঝে আপনার অনেক পেইন হবে ইনফেকশনের স্থানে ।

সারভাইবের জন্য এই হসপিটালে থাকলে আপনার জন্য ভাল বললেন সমবেদনার স্বরে ডাক্তারটি।

ব্যাথার কথা শুনে ভয়ে সে কেদে ফেলল। মানসিক দৈহিক ভাবে সে অতি নরম মনের এক মেয়ে। সে যেমন অন্যের সামান্য কষ্ট ও দেখতে পারেনা তেমনি নিজের সামান্য দুঃখ কষ্টে অতি কাতর হয়ে পড়ে। সামান্য মাথা ব্যাথা হলে অস্থির হয়ে পড়ে।

ক্যান্সার এর ক্ষত ব্যাথা কেমন হবে কে জানে ভয়ে তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল অঝোর ধারায়।

ডাক্তার তার পাশে বসে পড়ল।

মিস শান্ত হোন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। অনেক সময় এই ধরনের পেশেন্ট অনেক দিন বেচে ও যায়।

সায়েন্স চিকিৎসা বিজ্ঞান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। খুব শীঘ্রই হয়তবা এমন রেমেডী আসবে আমাদের হাতের কাছে ক্যান্সার কিউর করে ফেলা যাবে সেকেন্ডে।

কোন কথায় তার মনে শান্তনা আসছেনা। সে আকূল হয়ে কেঁদে চলেছে। তার ছোট মেয়েটির কি হবে?কে তাকে দেখবে?তার মা বাবা ভাই বোন একে একে সবার কথা মনে পড়তে লাগল।



মেয়েকে রেখে এসেছে গত কয়েকদিন হল পাশের এক ভাবীর বাসায়। একে একে সবাইকে ফোন করে খবর নিল। কাওকে তার বর্তমান দুঃসংবাদ টি জানাল না। সে মানুষকে খারাপ খবর কখন ও জানাতে পারেনা। তার দূঃখ কষ্ট যন্ত্রনা শেয়ারের একমাত্র সাথী তার মহাপ্রভূ আল্লাহ।

সে আল্লাহ কি সবসময় তার পৃথিবীতে অবস্থান করছে?নাহলে এই বয়সে তার কেন এত বড় রোগ?

হে প্রভূ আমার অবর্তমানে আমার মেয়েকে দেখে রাখ। ঢুকরে উঠে কাঁদতে থাকে সে। অসহায়ের মত প্রার্থনায় সমর্পন করে নিজেকে মহাপ্রভূর কাছে। আর তার কিই বা করার আছে?

বেশ কয়েকদিন পরে মেয়েকে দেখল। পাশের ভাবী নিয়ে এসেছে।

মেয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে

ইউ নো লাভ মি। হোয়ার ইউ হ্যাড বিন?

হসপিটাল থেকে তাকে সূট ধরনের কেবিন দেওয়া হল তাতে বাচ্চার বেড দেওয়া হল। আপাতত বাচ্চা তার সাথে থাকবে কিছু দিন। মাকে পাশে পেয়ে সে বেশ উৎফুল্ল। খুশী হয়ে ছোটাছুটি করছে ।

বিভিন্ন প্রশ্নে মাকে মাতিয়ে রাখছে।

আহ এত সুন্দর জীবন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবে সে। এই জীবন ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হবে তার।

এর পরের মাস টা কাটল অনেক যন্ত্রনায়।

যন্ত্রনায় যখন সে চোখে মুখে অন্ধকার দেখে তখন তাকে দেওয়া হয় চেতনানাশক ইনজেকশন এবং হাইডোজের পেইনকিলার। একইসঙ্গে চলছে কেমোথেরাপী।

এই যন্ত্রনার মধ্যে একরাতে দেখল অদ্ভুত স্বপ্ন। অদ্ভুত মনোরম এক প্লেস তাতে সাদা পোশাকের একজন মানুষের সাথে হাটছে হাটছে। ঘুম ভাঙ্গার পর বেশ প্রশান্তি অনুভব হয় শরীরে মনে।

যেন কোন যন্ত্রনা অসুস্থতা কিছু ই নেই শরীরে মনে।

মাঝরাতে ডিউটি ডক্টর তাকে দেখতে এসে বিস্ময় বোধ করল। সে উঠে বসে পাশের কম্পিউটারে কাজ করছে।

হাই তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে গেট ফীল করছ?হাউ আর ইউ নাউ?

আই অ্যাম কমপ্লিট লী ওকে। মেয়েকে এনে দিল তার কাছে পাশের রুম থেকে।



বেশ অনেকদিন পরে সে নরমাল সব খাওয়ার খেল তৃপ্তি করে। খেয়ে বিশাল এক মগ কফি ও খেয়ে ফেলল। গত একমাস কোন হট ড্রিংকস মুখে দিতে পারেনি। খাওয়া শেষ করে আগেরমত স্বাভাবিকভাবে মেয়ে সহ তৃপ্তির ঘুমে তলিয়ে পড়ল কোন ধরনের সিডেটিভ ছাড়া ব্যাথানাশক ওষধ ছাড়া।

আধোঘুমে আধো জাগরনে দেখল তার বিছানা থেকে এক বিশাল ব্রিজ ঝুলে আছে।

ব্রিজের শেষ মাথায় দাড়িয়ে আছে আলোক শিখার মত অপরুপ একজন মানুষ। হাত ইশারায় তাকে ডাকছে। সে আস্তে আস্তে জানালার উপরে উঠে বসল। আস্তে আস্তে ব্রিজ দিয়ে হেটে চলতে লাগল সে। শেষ মাথায় যাওয়ার পর লোকটি তার হাত ধরে টেনে ব্রিজ থেকে উপরে তুলে বলল খুব মায়াবী স্বরে

এই যে তোমার ঘরে পৌছে গেছ।

যাও ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

পরের দিন সকাল নার্স আসল যথারীতি তার কেমোর জন্য।

নো নার্স আই ফীল কমপ্লিটলী ওকে। নো পেইন নো হেডেক।

পুনরায় তাকে ল্যাবে নেওয়া হল সব ডায়গনষ্টিক টেষ্টের জন্য।

রিপোর্ট শেষে সবার চোখে মুখে বিষ্ময়।

মিস ইউ আর কমপ্লিটলী কিউরড। ইটস আনবিলিভেয়বল। উই চেকড এভরিথিংস। নো সিকনেস নো উনড।

হোপফুলী ইউ উইল ডিসচার্জ টুমরো আফটার এ ফাইনাল চেক।

ডক্টর নার্স সবাই একে একে জড়িয়ে ধরে অনেকে গিফট পর্যন্ত দিয়ে গেল। ফাইনালী হেড অব গ্যাষ্ট্রোলজি এসে সরি বলল ভূল ডায়াগনোসিস হয়ে গিয়েছিল। দেখছি তোমার কোন ডিসিস ছিলনা।

হসপিটাল থেকে ডিসচার্জের পর আজ প্রায় তিনবছর হতে চলল।

আজ সে অনেক সুখী । মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে মনে পড়ে যায় সেই অদ্ভুত রাতটির কথা। খুব বেশী গবেষনায় ও সে যেতে চায়না। সে বেঁচে আছে সুখী একজন পরিতৃপ্ত মানুষের মত। বড় অবদান মনে করে এবং এই বিশেষ রাত টি অলৌকিক রাতের মত ডায়রীর পাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছে দিনতারিখ সহ হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা সহ।



সমাপ্ত। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.