রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার গত দুই যুগ ধরে গুমরে কেঁদে মরছে স্যাঁতসেঁতে জীর্ণ এক ভবনের দেওয়ালে। স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৮৯ সালের পর আর কোনো নির্বাচন না হওয়ায় ২৪ বছর ধরে অচল রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু)। অথচ রাজনৈতিক অঙ্গনে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাকসু নির্বাচন ও পরিচালনা অপরিহার্য। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের দাবিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর গণআন্দোলন এবং সবশেষে তাদের ওপর রাজনৈতিক হামলার ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে রাকসুর। আবারও দাবি উঠেছে রাকসু নির্বাচনের। তবে বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও ছাত্র সংগঠনগুলোর কোন্দলের কারণে এখনো পর্যন্ত রাকসু নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে রাকসুর অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়নও নেই। অথচ, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার শিক্ষার্থীকে রাকসু বাবদ চাঁদা দিতে হচ্ছে। এর আগে রাকসু বাবদ শিক্ষার্থীদের বছরে ১৫ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হলেও নতুন করে চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে একলাফে ৫০ টাকা করা হয়েছে। নিয়মিত চাঁদা আদায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে রাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। রাকসু দফতর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠালাভের পর ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত ছাত্রসংসদের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। দাবি জোরালো হয়ে উঠলে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরী ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন যারা প্রণয়ন করেন ছাত্রসংসদের গঠনতন্ত্র। পরে ১৯৫৭ সালের প্রথম দিকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাঝখানে অবশ্য ১৯৭০-৭২ পর্যন্ত রাকসুর কোনো নির্বাচন ছিল না। পরে ১৯৭৫-৮৮ পর্যন্ত সামরিক শাসনের কারণে রাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদকালে। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে ছাত্রদল থেকে রাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এবং জিএস নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস বাবু। ওই নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত রাকসুর আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রায় ২৭ হাজার ছাত্রছাত্রীর নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা রাকসু এবং হল সংসদগুলোর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বর্তমানে রাকুসর কোনো কার্যক্রম না থাকায় রাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে এবং কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়ার সামনে অবস্থিত ওই রাকসু ভবন এখন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন দখলে নিয়ে আছে। তারা রাকুস ভবনকে ব্যবহার করছে নিজেদের চর্চাকেন্দ্র হিসেবে। রাকসুর কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল লতিফ জানান, বর্তমান রাকসুর ফান্ডে দেড় কোটির বেশি টাকা জমা হয়ে আছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর নতুন বর্ষে ভর্তির সময় রাকসু বাবদ বর্তমানে ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে যা এর আগে ছিল ১৫ টাকা। এ হিসেবে প্রতি বছর রাকসু তহবিলে জমা হচ্ছে কমপক্ষে ১৩ লাখ টাকা এবং ২৪ বছর ধরে নির্বাচন না থাকলেও রাকসু বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদায় করেছে কয়েক কোটি টাকা।
তবে অভিযোগ রয়েছে, এ টাকার অধিকাংশই বর্তমান নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে। রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়তুল্লাহ খোমিনি রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও তাদের ওপর হামলার ঘটনায় যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা নাও ঘটতে পারত। ছাত্রদের যোগ্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য নেতৃত্বের বিকাশে অবিলম্বে রাকসু নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন অপরিহার্য। ইতোমধ্যে তারা এ দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে রাবির উপ-উপাচার্য চৌধুরি সারোয়ার জাহান সজল বলেন, রাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সব সময়ই সদিচ্ছা আছে। তবে এ জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনগুলোর সহযোগিতা দরকার। আর রাজনৈতিক পরিবেশ ছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেই কেবল এটি সম্ভব।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।