আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৬ কোটি মানুষের কী অপরাধ?

আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্য সারা দেশকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দৃশ্যত পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো তাদের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও সরতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে সর্বশেষ বিরোধী দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আমন্ত্রণ নিয়ে দুই নেত্রীর মধ্যে টেলিফোনে যে কথা কাটাকাটি হয়েছে তাকে অনেকে নিরর্থকভাবে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছেন। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে নেতৃত্বের অপারগতার কারণে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যেও হতাশা বেড়েছে। ঢাকায় কর্মরত বেশকিছু বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী দেশের রাষ্ট্রদূতদের কর্মচঞ্চলতা এখনো ফলপ্রসূ না হওয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নতুন করে তাগিদ দিয়েছেন। অচলাবস্থার মূল কারণ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধ। নির্বাচন বর্তমান সরকারের তত্ত্বাবধানে, নাকি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে- যে ব্যবস্থা ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে চালু ছিল। ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে তিনটি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। সব বিরোধী দল, এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ও কয়েকটি শরিক দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো এ দাবির পক্ষে সারা দেশে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলছে। আওয়ামী লীগ ও তার অন্ধ সমর্থক দলগুলো ক্ষমতাসীনদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। তারা শুধু বিরোধী দলের কিছু সংসদ সদস্যকে নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি আছেন। এর পক্ষে প্রধান যুক্তি- দুই বছরের সর্বশেষ কেয়ারটেকার সরকারের সময়কার দুরবস্থা, জরুরি অবস্থা এবং তার অধীনে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসা নিষ্পেষণ এবং মাইনাস টু ফর্মুলা ইত্যাদি। কিন্তু এখানে একটা জিনিস দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা না থাকার কারণেই অচলাবস্থার সূত্র ধরে জরুরি অবস্থা এসেছিল।

বর্তমান অবস্থা ঠিক ২০০৬ সালের মতো নয়। তখন বিরোধী দল বিচারপতি কে এম হাসানের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিল। তখনকার বিএনপি সরকার নির্ধারিত সময়ে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পদত্যাগ করে। পরদিন ২৮ অক্টোবর রাজপথের বর্বরতায় অর্ধডজন রাজনৈতিক কর্মী নিহত হওয়ার পর বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতার কথা জানিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ পরে নিজে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। কিছু দিন পর এই কেয়ারটেকার সরকারের চারজন উপদেষ্টা একসঙ্গে পদত্যাগ করলে নতুন চারজন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিরোধী দলের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। যদিও তদাবধি প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছিল। নির্বাচনের তারিখও নির্দিষ্ট ছিল। এমনকি ১১ জানুয়ারি ২০০৭ অবস্থা জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত। তার আগের দিন জাতীয় পার্টি প্রধান এইচ এম এরশাদের মনোনয়নপত্র বাতিলকে কেন্দ্র করে বিরোধী জোট নির্বাচন বয়কট ঘোষণা করে। জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ গ্রহণ করে। পরবর্তী দুই বছর এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই দেশ পরিচালনা করে এবং ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে অব্যাহতি নেয়।

এ যাত্রায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী হয়েছে। তার মধ্যেও একটা শুভ লক্ষণ যে, বিরোধী দল ও জোট সংবিধানের আওতার মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান চেয়েছে। তারা এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের দাবি থেকে সরে আসা এ প্রসঙ্গে খুবই তাৎপর্যবহ। সরকারি দল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের বিরোধী দলের মনোনীত প্রতিনিধি নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তার পক্ষে প্রধান যুক্তি সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। তাদের বক্তব্য, উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।

বিরোধী দল বলেছে, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুবার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছিল। যা বর্তমান সংসদে পাস করা পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রতিফলিত হয়নি। এখানে বিরোধী দলের একটা পয়েন্ট আছে। এটা শুধু এ কারণেই নয় যে, নির্বাহী বিভাগ বা আইন বিভাগের কোনো কাজ সংবিধানসম্মত কি না এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার থাকলেও বিচার বিভাগ নিজে আইন প্রণয়ন বা প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে না। বিচার বিভাগের রায়ের ভিত্তিতেই বিরোধী দলের দাবি জোরদার হয়। গণতন্ত্রের সাধারণ নিয়ম, নাগরিকদের স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার নীতি গ্রহণ করলে এক দিনের মধ্যেই সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধান পরিবর্তন করা সম্ভব। কারণ এ কথা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, সরকার প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, তথা অধিকাংশ জনগণ, এ মুহূর্তে সমর্থন করে বলে মনে হয় না।

তা ছাড়া বিরোধী দলের আরেকটা দাবিও উপেক্ষা করা যায় না। তারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন আওয়ামী লীগ তথা তার নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল না। এ রকম কোনো কর্মসূচি ২০০৮ সালের নির্বাচন মেনিফেস্টোতে বলা হয়নি। যারা পঞ্চদশ সংশোধনী প্রণয়ন ও পাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিভিন্ন সময়ের কথাবার্তা থেকেও এটা পরিষ্কার যে শুরুর দিকে কেউ এই মীমাংসিত বিষয়ে হস্তক্ষেপে করতে চাননি। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের তরফে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে দুটো শর্ত জুড়ে দেওয়া যেতে পারে- ১. নির্বাচনকালীন এই সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন সীমাবদ্ধ থাকবে এবং ২. এ সরকার বিদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি সই করতে পারবে না। সরকারি দলের এ মনোভাবের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংরক্ষণের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখে তাদের অবস্থান আরও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরেও পারস্পরিক আস্থাহীনতার যে বিরাট ফারাক পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে তা টেকসই গণতন্ত্রের স্বার্থে দূর করা দরকার। এই মূল ইস্যু বাদ দিয়ে মামুলি বিষয় ২৭-২৯ অক্টোবরের হরতাল বিরোধী দল প্রত্যাহার করেছে কিনা তা নিয়ে টানাটানি করলে ফলপ্রসূ কিছু হবে বলে মনে হয় না। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ভাষায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন করার পরিবেশ তৈরি করা এখন জরুরি কাজ। এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে, একটা নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের তত্ত্বাবধানে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন একটা মার্জিত পর্যায়ে এখনো আসেনি যে, ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিরা তাদের নির্ধারিত ক্ষমতা বা ম্যান্ডেটের বাইরে যাবেন না এতটুকু বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন বা বিরোধী দলের মধ্যে আস্থা এমন পর্যায়ে এসেছে যে তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিতের নিরপেক্ষতা ও সত্যনিষ্ঠার ব্যাপারে সন্দিহান নন। এখানে এ কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, আমেরিকার সংবিধানপ্রণেতারা মানুষের স্বভাবজাত পক্ষপাত বা লোভকে তাদের বিচার-বুদ্ধির কাছে ছেড়ে না দিয়ে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করেছিলেন। যার ফলে মাত্র ক'দিন আগেও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সরকারেরও কিছু কর্মকাণ্ড অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ তার প্রবর্তিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য চাহিদা মতো রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা কংগ্রেস তাকে দেয়নি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মোজেনাকেও তার দূতাবাস ও বাসস্থানের বাইরে ভ্রমণ এ কারণে অনেকটা সীমিত রাখতে হয়েছিল। এটা পরিষ্কার যে, আমাদের দেশে রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো অঙ্গ বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণে নেই যে মার্কিন কংগ্রেসের মতো নির্বাহী বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। আমাদের দেশের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় এ রকম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব, যদি না সংসদে কারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে বা দেশে কোয়ালিশন সরকার থাকে। এখানে শুধু উচ্চ আদালতের ক্ষমতা আছে নির্বাহী বা আইন বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করার। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে উচ্চ আদালত আগে থেকেই তার অবস্থান নিয়ে নিয়েছে। সংসদ সরকারি দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে আছে। বর্তমান রাজনৈতিক গিঁট খোলার জন্য তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের পর্যায়ে থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দর্শকদের বাহবা বা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এমন অনেক কথাই বলা যায় যেমন- দেরিতে হলেও এখন বিরোধী দল সরকারকে জানিয়ে দিতে পারে তারা কোন দিন কখন গণভবনে গিয়ে সংলাপ এবং নৈশভোজ করতে চায়। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে পূর্বাহ্নে বিরাজমান বিরাট আস্থার দূরত্ব গুছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বোঝাপড়া না হলে তার মূল্য খুব সামান্যই হতে পারে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকারের ছত্রছায়ায়ই আইন বিভাগ পরিচালিত হয়। আবার পার্লামেন্ট একটা সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করে, এমনকি বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস করারও ক্ষমতা রাখে। বর্তমান সংসদের ওপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কতটা শক্তিশালী তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না; কারণ সংসদের নয়-দশমাংশ সদস্য সরকারি দলের বা জোটের। এরূপ অবস্থায় ক্ষমতাসীনরা চাইলে এক দিনের মধ্যে একটা সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করে শাসনব্যবস্থা তথা সাংবিধানিক বিষয়ে ঐকমত্য ফিরিয়ে এনে শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এবং তা করলে তারা এদেশের গণতন্ত্রকামী ও শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে স্থায়ী শ্রদ্ধার আসন দখল করতে সক্ষম হবে।

ঐকমত্য সৃষ্টিতে সমর্থ না হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বর্তমান জটিলতা আরও প্রকট হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনী প্রচারণা সমান অধিকারভোগী প্রতিযোগীদের মধ্যে হবে না। হবে অসম প্রতিযোগিতার নির্বাচন। একদল প্রতিযোগী সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং মর্যাদা পাবে, অন্য দল সাধারণের কাতার থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মন্ত্রীরা সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ভোগ করবে। কারণ আইন প্রয়োগকারীরাসহ প্রশাসন প্রটোকল ও মর্যাদা রক্ষাসহ তাদের সন্তুষ্ট রাখার কাজে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হবে। রাশেদ খান মেননসহ সরকারি রাজনৈতিক জোটের প্রভাবশালী কিছু সদস্য ক'দিন আগেও এমপিদের সংসদ সদস্য পদে আসীন রেখে অসম নির্বাচনী প্রতিযোগিতার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। সরকারি মহল নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে এবং আসন্ন নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে এ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ এ ধরনের নির্বাচনের কোনো নজির এদেশে কখনো ছিল না। নির্বাচনী আচরণবিধি চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশন হিমশিম খাচ্ছে, কারণ এই বিধিতে নির্বাচনে সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বী ও এমপি-মন্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনকালীন সুযোগ ও মর্যাদা এক রকম হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সর্বশেষ বক্তব্য হলো- তারা রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অতি সম্প্রতি সংসদে সংশোধিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ওপর থেকে এ বিষয়ে চাপ কিছুটা কমবে। কিন্তু এদেশের মানুষ একই নির্বাচনে মর্যাদার পার্থক্য নিয়ে প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে অভ্যস্ত নয়।

যদিও প্রবাদে আছে- একটা জনগোষ্ঠী যে ধরনের সরকারের জন্য উপযোগী সে ধরনের সরকারই পায়, তবুও বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ সম্ভবত বর্তমান অবস্থায় নিপতিত হওয়ার মতো কোনো অপরাধ করেনি। শত বিপত্তি অতিক্রম করে এদেশের মানুষ এখনো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার সামর্থ্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে। বিদেশের মাটিতে গরিব মানুষের শরীরের ঘামের বিনিময়ে প্রতিটি ডলার উপার্জনের সুবাদেই তিন দশক ধরে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক লেনদেনে একটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পেরেছে।

বাংলাদেশের চাষিরা শুধু চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদনই বাড়ায়নি, কৃষি বহুমুখী করে তারা সবজি এবং ফলের সরবরাহও বাড়িয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এখন এসব কৃষিপণ্যের সরবরাহ বাজারে প্রচুর থাকে। কোনো কোনো পণ্যের দাম আগের তুলনায় কমে গেছে। নিবেদিত গার্মেন্ট কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম এমনকি কখনো জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন বাড়িয়ে চলেছে। ক্রিকেটাররা দেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে। এখন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে মিনি পর্দায় পত্পত্ করে ওড়ে। এ সাফল্য তাদের। এখনকার যুবকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ায় এবং আকাশছোঁয়া উন্নতির স্বপ্ন দেখে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত তাদের নিরাশ না করে ক্ষমতায়নের পরিবেশ আরও সংহতের পথ সুগম করা।

লেখক : সম্পাদক, ডেইলি গ্রিনওয়াচ।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.