রাজধানীর গোপীবাগে চাঞ্চল্যকর ছয় খুনের ঘটনার তদন্তে অগ্রগতির ভালো কোনো খবর জানাতে পারেনি পুলিশ। এক মাস পেরিয়ে গেলেও রোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। যদিও গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে 'ধর্মীয় মতবিরোধের কারণে ধর্মবিদ্বেষী' হওয়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলা হলেও এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। 'ক্লুলেস' হত্যাকাণ্ডে খুনিদের গ্রেফতারে শুধু প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে গোয়েন্দারা। তাদের ভাষায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাই 'প্রফেশনাল' ও 'ট্রেইন্ড কিলার'। কারণ হিসেবে গোয়েন্দারা বলছে, হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে কোনো 'ক্লু' (আলামত) রেখে যায়নি। গত ২১ ডিসেম্বর আর কে মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় খুন হন লুৎফর রহমান ফারুক, তার ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, কথিত পীরের প্রধান খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, পীরের মুরিদ মো. শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকার। পীরের মুরিদ সেজে ৮-৯ জন যুবক পৃথক দুটি কক্ষে ৬ জনকে হাত-পা বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করে। ঘটনার পর নিহত লুৎফরের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত ভার পায় গোয়েন্দা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ডিবির পৃথক তিনটি দল হত্যার ক্লু উদঘাটনে কাজ করছে। তারা রাজধানীসহ এর আশপাশ এলাকায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর জানান, 'ক্লুলেস' সিঙ্ মার্ডারের ঘটনাটি গোয়েন্দা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। এ জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে লুৎফর রহমানের স্ত্রী, ছেলে ও নিকট আত্দীয়দের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পৃথকভাবে কথা বলা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল তারা লুৎফর রহমানের পূর্ব পরিচিত তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনার আগেও তারা ওই বাসায় এসেছিল বলে ঘটনার পারিপাশ্বর্িকতায় বোঝা যায়। ডিসি আরও জানান, হত্যাকারীরা হত্যার আগে ও পরে সব ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতি মাথায় রেখে হত্যার ঘটনা ঘটায়, শার্প প্ল্যানিং আর ক্লুলেস করতে হত্যাকারীরা পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থার বিভিন্ন বিষয়ও মাথায় রেখে কিলিং মিশনে অংশ নেয়। তিনি জানান, হত্যার আগে মোবাইল ফোনে লুৎফর রহমানের সঙ্গে হত্যাকারীরা কয়েকটি সিটিসেল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করে বাসায় আসে, যা ঘটনার পর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও ওইদিন ঘটনাস্থলের কয়েক মিটার এলাকায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল ফোনের নম্বর সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষজ্ঞ দল। যা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কাজ চলছে। জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, লুৎফর রহমান যেহেতু ভিন্ন ধর্মীয় মতাদর্শ অনুসরণ করত তাই তার সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মতবিরোধ ছিল। মতাদর্শের বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষ কোনো উগ্র-ধর্মীয় গ্রুপের ভাড়াটে প্রশিক্ষিত খুনিদের দিয়ে এ কাজ করাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।